
সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উদ্বোধন করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এক ভিডিও বার্তায় তিনি হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় সিলেট সদর উপজেলার নাজিরের গাঁওয়ের বাদাঘাট রোড এলাকায় নির্মিত এ হাসপাতালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মোরশিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীসহ অনেকেই।
ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে তারা একটি ভাড়া ভবনে কিডনি রোগীদের ৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। পাশাপাশি অন্য রোগীদেরও স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। এই ১৫০ শয্যার হাসপাতাল বিশেষ করে ভূমিকা রাখবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায়। এই হাসপাতাল গড়ার পেছনে যারা সংযুক্ত আছেন সবাই আমার পরিচিত। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ব্যস্ততার কারণে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ভবিষ্যতে আসার চেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, কিডনি ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে সিলেটের মানুষের মধ্যে সর্বজন সমাদৃত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজের উপেক্ষিত মানুষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সবার জন্য চিকিৎসাসেবার অঙ্গীকার নিয়ে সাশ্রয়ী ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি আশা করি এসকল প্রস্তুতি সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে। দেশ-বিদেশের নামকরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হৃদয়বান মানুষের আর্থিক অনুদানে ও ব্র্যাক ব্যাংকের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই হাসপাতালটি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হবে।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুনুর রশীদ, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি চেয়ারপার্সন মেহেরিয়ার এম হাসান।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মোরশিদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৭৬ হাজার প্রতিষ্ঠান আছে যাদের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তার ভিতরে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনও আছে। এই ৭৬ হাজার প্রতিষ্ঠানে কত রকমের অব্যবস্থাপনা আছে আপনারা শুধু কল্পনা করতে পারবেন এবং এদেরকে সুব্যবস্থাপনায় আনা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালটি যেভাবে সকলের আন্তরিকতায় তৈরি হয়েছে সেটা একটি মডেল হতে পারে। একরম একটা হাসপাতালকে সফল জায়গায় আনা অবশ্যই বিরল কাহিনী। আমি চাইব এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করে আমার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যেন এমন মডেল নিয়ে এগোতে পারে। আমার মন্ত্রণালয় থেকে এই হাসপাতালের জন্য সার্বিক সহযোগিতা সবসময় থাকবে।
এই আনুষ্ঠানিকতা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেট এর প্রেসিডেন্ট ডা. জিয়া উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বীর প্রতীক সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে নৃশংস হত্যার শিকার সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন স্বনামধন্য চিকিৎসক শহিদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদের ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কিডনি বিশেষজ্ঞ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তাদের একজন। ঢাকার ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ হসপিটাল-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আন্তর্জাতিক মানের স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালটি স্থাপনের লক্ষ্যে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা ১২০ শতক ভূমি বিনামূল্যে এবং বিনাশর্তে দান করেছেন।
শাকিলা ববি/মাহফুজ