
৯ দিন ধরে তালাবদ্ধ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়। অফিসে ঢুকতে না পেরে রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় বসে চেয়ারম্যান দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। জন্মনিবন্ধন সনদসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে অনেকে ইউনিয়ন পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এত ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কয়েক শ নারী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙে চেয়ারম্যানকে নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ করে দেন। ঘটনাটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের। পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের কারণে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ৯ দিন আগে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দিয়েছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ৪ জানুয়ারি রাতে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এ সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পরে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন রাতেই ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা গিয়ে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন।
পরদিন দুপুরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পরিষদে যান। এ সময় তারা সেখানে থাকা সেবাপ্রত্যাশী, সচিব ও গ্রামপুলিশদের বের করে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরদিন দুপুরে কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ বিএনপি নেতাদের নিয়ে পরিষদ চত্বরে বৈঠক করেন। এরপর পরিষদের প্রধান ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়। তবে চেয়ারম্যানের কার্যালয়টি তালাবদ্ধ ছিল। সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় কয়েক শ নারী ওই তালা ভেঙে দেন।
তালা ভাঙায় অংশ নেওয়া এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিল। চেয়ারম্যান পথে-ঘাটে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এ জন্য হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙে দিয়েছি। চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে পরিষদে বসিয়েছি।’ পরিষদ চত্বরে থাকা আরও একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বললে তারাও এমন মন্তব্য করেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কেউ ছুটির দিন রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কেটেছিল। এ জন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শত শত নারী তালা ভেঙে আমাকে পরিষদে বসিয়েছেন।’
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, কেক কাটার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া আছে। তিনি সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান। কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
তালা ভাঙার খবর পরিষদ সচিবের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘পরিষদের ঘটনায় দুটি লিখিত অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।’