
ভারতসহ কয়েকটি দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রোগটির বিস্তার ঠেকাতে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশনে সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই যাত্রীরা এই বন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা দুই দেশে আসা-যাওয়া করছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা না পেলেও তারা মৌখিকভাবে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছে।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন গেটে দুজন যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। অফিসের ভেতরে কর্মকর্তারা বসে আসেন। ওই গেট দিয়ে ভারত থেকে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তাদেরকে কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আসতে হচ্ছে না।
বন্দর পার্শ্ববর্তী স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, তারা এ ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবার অনেক সচেতন নাগরিক বলছেন, এই ভাইরাস যেহেতু ভারতে শনাক্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বসানো দরকার।
ভারতে যাওয়ার জন্য বন্দরটিতে অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আকরাম হোসেন। এইচএমপিভি সম্পর্কে তিনি মোটামুটি জানেন। করোনার মতো এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে মুশকিল হবে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের উচিত সতর্কতার সঙ্গে যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।’
একই উপজেলার আরেক বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ। তিনিও ভারতে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এইচএমপিভি সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষই জানেন না দাবি করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে থেকে সচেতন থাকলে সমস্যা হবে না।’
কথা হয় স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমানের সঙ্গে। ভাইরাসটির নাম কখনো শোনেননি জানিয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নাম শুনেছিলাম। করোনার সময়তো এই বন্দর বন্ধ ছিল। যদি নতুন করে কোনো ভাইরাস আসে, তাহলে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন হলে বন্দরের ভেতরে কিংবা বাইরে পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি রাখতে হবে।’
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এইচএমপিভি নিয়ে সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে পরীক্ষা ছাড়াই পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। তবে আমরা মৌখিকভাবে সবাইকে সচেতন করছি। নির্দেশনা এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটানের যাত্রীরা আসা-যাওয়া করেন। গত মাসে তিন শতাধিক যাত্রী পারাপার হয়েছেন। তবে চলতি মাসে যাত্রীর পরিমাণ কম। তারপরও যারা পারাপার হচ্ছেন তাদেরকে আমরা মৌখিকভাবে সচেতন করছি, পরামর্শ দিচ্ছি। সবাইকে নিয়মিত মাস্ক পরার পাশাপাশি হাত ভালোভাবে পরিস্কার করতে বলা হচ্ছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাঠানো হয়নি। নির্দেশনা পেলে স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্যই সেভাবে কাজ করবে।’ হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগীর শরীরে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসে কেউ যদি আক্রান্ত হন, তাহলে সাধারণত জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়। নাক বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে কিছু ব্যথা অনুভব হয়। এটি অন্য জ্বরের মতো। তবে, শিশু, বয়স্ক এবং যেসব ব্যক্তি ক্যানসারসহ দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।’