
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। ঢাকার খুব কাছের একটি উপজেলা। কিন্তু ঢাকার খুব কাছে হলেও এর যোগাযোগব্যবস্থা এখনো সেই মান্ধাতার আমলের মতোই। আধুনিক যুগে এসেও এই উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষের ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছে কোমলমতী শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। পারাপারের সময় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনারগাঁয়ের নোয়াগাঁও গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নদীর ওপর জনৈক আনোয়ার হোসেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মাণ করেছেন একটি বাঁশের সাঁকো। নোয়াগাঁও, গৌরীবরদী, বিষ্ণাদী, বানেশ্বরদী দলদী, পেকিরচরসহ প্রায় ২০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছেন এই সাঁকো দিয়ে। সাঁকো পারাপারের জন্য জনপ্রতি নেওয়া হয় ৫ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই এলাকা অবহেলিত। স্বাধীনতার পর থেকে এই এলাকার মানুষজন নৌকায় নদী পারাপার হতেন। নৌকা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় ২০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়েই মানুষ নদী পার হচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বরাবরের মতো সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
নদী পারাপার হতে আসা কুলসুম বেগম খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নদীর ওপর ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান জনপ্রতিনিধিরা, কিন্তু সরকারে এলে আর কোনো খবর থাকে না। এভাবেই চলছে।’
নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী এই সাঁকো দিয়ে দৈনিক নদী পার হয়। একটি ব্রিজের জন্য প্রশাসনকে তাগিদ দিলেও এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। ছাত্রছাত্রীরা এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
মাদ্রাসাছাত্র সাকিব হাসান খবরের কাগজকে বলে, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হওয়ার সময় একবার পড়ে গিয়ে অনেক ব্যথা পেয়েছি। যদি মাঝখানে পড়তাম তাহলে পানিতে ডুবে হয়তো মারাই যেতাম।’
স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। শুধু শুনেই যাচ্ছি ব্রিজ হবে। কবে হবে তা কেউ জানে না।’ শুধু আশ্বাস নয়, দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে নদীতে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
সোনারগাঁ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের জায়গাটি আমরা পরিদর্শন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে।’
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ উপজেলায় আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’