
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলাবাসী মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। তাকে অফিসে গিয়েও পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমওর অনুমতি ছাড়া ক্যামেরার সামনে কথা বলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
২০১২ সালে ৫০ শয্যার ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপিত হয়। ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন ভবন পায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুরু থেকেই এখানে জনবল ও সরঞ্জামের সংকট রয়েছে। যে কারণে ভর্তি করা রোগীরাও ঠিকমতো সেবা পান না।
তবে খরচের খাতা পুরোদমে চালু রেখেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর। টাকার বিনিময়ে অস্থায়ীভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও অ্যাম্বুলেন্সচালকদের চুক্তি রয়েছে। হাসপাতালের সরকারি ওষুধ প্রায়ই উধাও হয়ে যায়। চিকিৎসকরা বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ লিখে দেন রোগীদের। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। কোম্পানি প্রতিনিধিদের টানাহেঁচড়ায় অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের স্বজনরা। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর ধনবাড়ী যোগদানের পর থেকে সাধারণ রোগীদের হয়রানি, কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, প্রশিক্ষণের ভাতার টাকা আত্মসাৎ ও আনুতোষিক ভাতা নয়ছয় করে আসছেন।
মাঠকর্মীদের সম্মানী ভাতা পর্যন্ত নিজের পকেটে পোরেন তিনি। যারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন, তাদের হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি কাউকে তোয়াক্কাও করেন না। তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ মানববন্ধনও করেছেন। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি।
মুসলেম নামে এক রোগী বলেন, ‘সেবা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। যে ডাক্তাররা সেবা দেবেন তাদেরই পাই না আমরা।’ কুলসুম বেগম নামে আরেকজন রোগী বলেন, ‘টিকিটের জন্য গিয়ে দেখি আয়া দিয়ে টিকিট কাটাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রতিবাদ করার পর তাকে সরিয়ে দিয়ে টিকিট দেওয়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘আমরা ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি। চার থেকে পাঁচ মাস চাকরি করার আগেই আমাদের বের করে দিয়েছে টিএসও।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসক রয়েছেন। তার মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে ও তিনজন পালা করে দায়িত্ব পালন করেন। চিকিৎসকসংকটে ভুগছে হাসপাতালটি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. এনামুল হক সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যামেরার সামনে কথা বলা যাবে না।’
ফাহমিদা লস্কর খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার নামে যত অভিযোগ আছে সব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি হাসপাতালের সব নিয়ম মেনে চলি বলেই এসব অভিযোগ।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।