চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা ময়লা ও ময়লা বহনকারী ভ্যান সড়কের উপর রাখা হয়েছে। আর্বজনার দুর্গন্ধের কারণে একজন পথচারী নাক মুখ ঢেকে হেটে যাচ্ছেন। গতকাল নয়াবাজার বিশ্বরোড থেকে তোলা। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা ময়লা রাখা হয় শহরের প্রধান সড়কের ওপর। এতে আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তখন পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। দুর্গন্ধের কারণে যানবাহনের যাত্রীদের নাক-মুখ চেপে ওই স্থান পার হতে দেখা যায়। চসিকের তথ্যমতে, নগর থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ টন ময়লা সংগ্রহ করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরের কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা সড়কের ষোলশহরসহ তিন থেকে চারটি স্থানে ময়লা রাখা হয়। অক্সিজেন মোড় সংলগ্ন হাটহাজারী সড়কের ওপর আবর্জনা রাখতে রাখতে ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে চকবাজারের কাতালগঞ্জে।
এদিকে, নিজের আইন নিজেই মেনে চলছে না চসিক। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, ময়লা-আবর্জনার ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও সংস্থাটি সেই আইন মানছে না। খোলা ট্রাকে করে আবর্জনা নিতে গিয়ে পথে পথে সেগুলো পড়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা রাখার কারণে পথচারীদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ময়লা বহনকারী ভ্যান ও গাড়ি ফুটপাতের পাশে সারি করে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের বাংলাবাজার ও বায়জিদের আরেফিন নগরের সিটি করপোরেশনের দুটি ময়লার ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগ্রহ করা ময়লা-আবর্জনা ওই দুটি ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হয়। কিন্তু এ দুটি স্টেশনে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট উঁচু আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মেডিকেল, শিল্প-কারখানা ও ই-বর্জ্যের মতো সংক্রামক এবং বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও চলছে সনাতন পদ্ধতিতে।
নগরের নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্র মজুমদারের মা আনিতা দাশ বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ষোলশহর পার হওয়ার সময় ময়লার দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। মাঝে মাঝে বমি চলে আসে।’
চকবাজার এলাকার পথচারী সাব্বির রহমান বলেন, ‘সড়ক পরিষ্কার রাখা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। অথচ তারাই সড়ক দখল করে ময়লার ডাম্পিং স্টেশন বানিয়ে রেখেছে। এ কারণে আমরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’ ষোলশহর এলাকায় বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে হেঁটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠাতে যাই। কিন্তু ময়লা রাখার স্থানটি পার হওয়ার সময় মনে হয় নরকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ স্থান দিয়ে যেতে ইচ্ছেই করে না। বাধ্য হয়ে পার হতে হয়।’
চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী অসীম দাস বলেন, ‘আমরা ভ্যানগাড়ি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করি। আমরা দূরের ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা রেখে আসতে পারি না। তাই আমরা কাছের সড়কের ওপর ময়লা রাখি।’
চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক ২ হাজার ৩০০ টন ময়লা-আবর্জনা জমা হয়। চসিক কর্মীরা রাত থেকে সেই ময়লা পরিষ্কার করেন। কিন্তু এরপরও কিছু কিছু ময়লা থেকে যায়। সড়কের ওপর থেকে ময়লার স্তূপ সরানোর জন্য চসিকের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর রাখতে হচ্ছে। তবে সকালের আগেই সড়ক থেকে ময়লা সরানোর জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও দিনে কেন সড়কে ময়লা থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে।’
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যান গাড়ি দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা ময়লা সড়কের ওপর রাখা হয়। মানুষের চলাচলের পথে ময়লার স্তূপ থাকা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমরা চেষ্টা করব যেন সড়কের ওপর থেকে অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনগুলো সরানো যায়। প্রতিদিন যে পরিমাণ ময়লা সংগ্রহ হয় তা ভোরে স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর জন্য চসিকের ডাম্পিং গাড়ি কাজ করছে।’