
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে দিনের বেলায় রোগী ও তার স্বজনরা দালাল চক্রের হাত থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু রাতে আগের মতোই দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে রোগী ও তার স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মেডিকেলের স্টাফ পরিচয়ে দালালরা রোগীর স্বজনদের স্বল্প মূল্যের ওষুধের দোকানের পরিবর্তে অন্য দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগী বা তার স্বজনদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচারে রোগী বহন করা বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের ইসিজি মেশিন থাকলেও বাইরে থেকে আসা দালাল চক্র রোগীদের বেসরকারিভাবে ইসিজি করাতে এক প্রকার বাধ্য করছেন। যেখানে হাসপাতালে সরকারিভাবে ইসিজি করা মাত্র ৮০ টাকা লাগে, দালালের ফাঁদে পড়ে তাদের ৩০০ টাকা দিয়ে ইসিজি করাতে হচ্ছে।
গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের ফুলপুকুরিয়া থেকে আসা হাসিনুর রহমান বলেন, ‘স্ট্রোক করায় আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আসামাত্রই ট্রলিওয়ালারা আমাকে বেসরকারিভাবে ইসিজি করাতে বলেন। সরকারিভাবে করাতে চাইলে তারা বলেন, খুব দ্রুত করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে ইসিজি করালাম। অথচ হাসপাতালে সরকারিভাবে ইসিজি করলে মাত্র ৮০ টাকা লাগে। আবার রোগী বহন করা ট্রলিওয়ালাকে ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।’
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর ঈদুলপুর থেকে আসা নয়ন মিয়া বলেন, ‘ট্রলিবহনকারী লিটন নামের লোকটি আমার রোগী আনা বাবদ ২০০ টাকা চেয়েছে। ১৫০ টাকা দিয়েছি, তারপরও নিতে চান না। অনেক অনুরোধ করে তাকে মানালাম।’ লালমনিরহাট হাতীবান্ধার ভেলাগড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কদমা থেকে ঠোঁট ফাটা নিয়ে এসেছিলেন আকাশ। আকাশের ভাই লিখন বলেন, ‘দালাল চক্রের পাল্লায় পড়ে ৫০০ টাকার ওষুধ ২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে নিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পেরে আর ওই লোকের কাছ থেকে ওষুধ নেইনি।’
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী রংপুর জেলা কমান্ড্যান্ট রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ ও আনসার সদস্যরা সমন্বয় করেন। অনেক দোকান ছিল, নতুন পরিচালক আসার পরে এগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। আনসারের পাশাপাশি বাইরে নিরাপত্তার জন্য অন্য বাহিনীকেও কাজে লাগানো প্রয়োজন।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে আনসার সদস্য অনেক কম। সদস্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন আনসার সদস্য এলে এই দালাল চক্রের উৎপাত কমানো সম্ভব হবে।’