
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনীর ২৮ কিলোমিটারের অবৈধ লেভেল ক্রসিং দিয়ে অবাধে চলছে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ। এসব অনুমোদনহীন ও রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।
ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে শর্শদি ইউনিয়নের পোস্ট (পিলার) পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ৩৫টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ২৩টি বৈধ আর ১২টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং আছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে গত একবছরে প্রাণহানি হয়েছে ২২ জনের। এসব ঘটনার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আর অব্যবস্থাপনাকে দোষারোপ করছেন স্থানীয়রা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধে পদক্ষেপ নিলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের জন্য সেগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের গোড়ান কোয়ার্টার এলাকায় ট্রেন চলাচলের সময় দুই পাশে প্রতিবন্ধক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে উল্টোপথে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, পথচারি, প্রাইভেট কারসহ অন্য পরিবহন চলাচল করছে। আর এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে ও প্রাণহানি বাড়ছে।
এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল ফাজিলপুর মুহুরীগঞ্জে একটি ট্রাক রেললাইনে ওঠে গেলে ট্রেন ও ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ জন নিহত হন। এ ঘটনায় গেটম্যানকে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে গত বছরের ২৯ নভেম্বর ফেনী শহরের বারাহীপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল বাসেত নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগের তথ্যমতে, ২৩টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ৬৬ জন গেটম্যান প্রয়োজন হলেও রয়েছেন ৫৬ জন। অন্যদিকে ১২টি অবৈধ ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। আছে শুধু রেল কর্তৃপক্ষের একটি সতর্কীকরণ চিহ্ন। সাময়িক পিলার দিয়ে বন্ধ করা হলেও প্রভাবশালীরা সেগুলো সরিয়ে দিয়ে আবার চলাচল শুরু করে। এসব অরক্ষিত অবৈধ ক্রসিংয়ের কারণেই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সৌরভ নামে এক পথচারী জানান, ফেনীর রেলগেট এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক দেওয়ার পরও মানুষ অবাধে চলাফেরা করছে। এই লেভেল ক্রসিংয়ে একটি ওভারপাস বা আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
জুয়েল নামে অপর পথচারী জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে। অসাবধানতার কারণেই ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও রয়েছে।
শহরের গোডাউন কোয়ার্টার এলাকার গেটম্যান আবদুল মতিন বলেন, ‘ট্রেন আসার আগে ব্যারিকেড দিয়ে ব্লক দেওয়ার পরেও মানুষ অন্য পাশ দিয়ে পারাপার হয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষ ব্যারিকেড ডিঙিয়ে পারাপার হয়। আমরা বাধা দিলে তেড়ে আসেন। এ জন্য অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকি।’
অনুমোদনহীন এসব লেভেল ক্রসিং প্রসঙ্গে ফেনী রেল স্টেশনমাস্টার মো. হারুন বলেন, ‘রেলপথের পাশে বসতঘর থাকায় বিভিন্ন সময় অনুমোদনহীন ক্রসিং তৈরি করা হয়। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে ফেনীর সহকারী প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘অবৈধ লেভেল ক্রসিং খুঁটি দিয়ে বন্ধ করা হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতের অন্ধকারে সেগুলো তুলে নিয়ে আবার চালু করে। ফলে অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া রেলওয়ের জনবলসংকটও রয়েছে।’