
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। জনবল সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবল নেই। তীব্র সংকটের মাঝে প্রতিদিন এই হাসপাতালে প্রায় ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সীমিত শয্যার কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে ৬৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৪১ জন কর্মরত রয়েছেন, বাকি ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১৩টি, মিডওয়াইফ পদে ৬টি, স্টাফ নার্স পদে ২টি এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্ট পদে একটিসহ হাসপাতালে মোট ৭৭টি শূন্যপদ রয়েছে। শূন্যপদ পূরণের পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পদে ২৬৮টি পদের চাহিদা জানানো হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পূরণ করা হয়েছে ১৯১টি পদ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম আছে। অর্গানোগ্রাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চাহিদা তুলনায় যে জনবল থাকার কথা, তা ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেই। এই হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার মানুষ আউটডোর থেকে সেবা নিয়ে থাকেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ জেলা। ঝিনাইদহ জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। সদর উপজেলা ছাড়া হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, কালীগঞ্জসহ পাঁচটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল। এ কারণে রোগীরা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবল চাহিদার তুলনায় সংকট থাকায় সদর হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালটির আট তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন চালু হলেও জটিলতা যেন কাটছেই না। নতুন ভবনের দুটি লিফট মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। নতুন ভবনের দেয়ালে লাগানো টাইলস উঠে গেছে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় নতুন ভবনের অবকাঠামো, পানির ট্যাপ, বেসিন, কমোড ও আসবাবপত্র অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে গেছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও হাসপাতালটিতে নিয়মিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। এত রোগীর চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। গত ডিসেম্বর মাসে সদর হাসপাতাল থেকে আউটডোরে ৪৪ হাজার ৫৬৯ জন স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী, শিশু, সিজারিয়ান ও প্রসূতি, ডায়রিয়া এবং সার্জারি রোগী রয়েছেন।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর স্বজন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া গ্রামের রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আউটডোরে রোগীর চাপ অনেক বেশি। রোগী বেশি হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা চাইলেও সময় নিয়ে রোগী দেখতে পারেন না। এ ছাড়া চিকিৎসকরা যে ওষুধ লেখেন, তার সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায় না।’
সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে আসা রোগী মালতি রানী অভিযোগ করেন, ভর্তি হয়েও শয্যা পাওয়া যায় না। রোগী অনেক, যে কারণে হাসপাতালের মেঝেতে কাঁথা, পাটি বিছিয়ে থাকতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া থেকে আসা ঝন্টু মিয়া জানান, হাসপাতালে খাবারের মান আগের তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। কিন্তু টয়লেট ও বাথরুমগুলোর পরিবেশ আগের মতোই নোংরা।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নিয়ে ২৫০ শয্যা হাসপাতালটিকে সেবামুখী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোগীদের খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য বর্ধন, ওষুধ কেনা ও বিতরণে যেসব অনিয়ম ছিল না দূর করে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসক-নার্স ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যেই ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি রোগীদের কাছে সেবাবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা।’