
লক্ষ্মীপুরে পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৫৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নেই।
এতে হাসপাতালগুলোতে সেবাসংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সদর হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জায়গাসংকট এবং চিকিৎসকসংকটের কারণে রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ আটকে আছে। শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি সংকটময়।
লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৮ লাখ মানুষের বাস। এখানে রয়েছে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি সদর হাসপাতাল। ১৭৪ শয্যা থেকে বর্তমানে ৩০০ শয্যায় বৃদ্ধি করা হলেও হাসপাতালে কোনো নতুন জনবল নিয়োগ হয়নি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ৩০০ শয্যার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও কর্মচারী কম থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমানে ১৩৬ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৯১ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ১৮৪ জন নার্সের বিপরীতে ১৩৬ জন নার্স, ১২১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টের বিপরীতে ৯৩ জন কর্মরত আছেন। তৃতীয় শ্রেণির ৫০৫ জনের বিপরীতে ৩৩৭ জন। চতুর্থ শ্রেণির ১১৩ জনের বিপরীতে ১৮ জন কর্মী আছেন। সিএইচপি পদে ১৭৬ জন কর্মী থাকা সত্ত্বেও চারজনের পদ শূন্য রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জেলার স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে, সার্জারি, ইএনটি, চক্ষু, গাইনি, চর্ম ও যৌন, রেডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, মেডিকেল কনসালটেন্ট, অ্যানেসথেসিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক পদগুলোতে লোকবল নেই। সদর হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন, রেডিওলজি ও চর্ম-যৌন রোগের চিকিৎসক পদই শূন্য। এতে অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালে জায়গাসংকটও। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ৩০০ শয্যা থাকার পরও দৈনিক ৩০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি নিতে হয়। এর ফলে অনেক রোগীকে হাসপাতালের বারান্দা, গলিপথ এমনকি টয়লেটেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে আয়া ও ক্লিনার-সংকটের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। রোগীদের সঠিকভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন উপজেলায় হাসপাতালগুলোতে সিজার অপারেশন, নরমাল ডেলিভারি ও অন্যান্য জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সদর হাসপাতালে বর্তমানে জেনারেল সার্জারি, নাক-কান-গলা, চক্ষু, গাইনি, চর্ম ও যৌন, ফরেনসিক মেডিসিন, রেডিওলজিসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক পদগুলো শূন্য রয়েছে।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তবে সাত বছর পরও হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এই ভবনটি হস্তান্তর করার কথা ছিল গত জুনে। কিন্তু তা হয়নি। ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা শামীম বর্তমানে পলাতক থাকায় ভবনটির নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে তা জানা যাচ্ছে না।
একদিকে নতুন ভবনটি চালু হলে অনেকটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে বর্তমানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত প্রভাব ফেলছে না।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, সেখানে ৯ জন চিকিৎসক থাকলেও মেডিসিন এবং সার্জারির কোনো চিকিৎসক কর্মরত নেই। এতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের সঠিক সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে সরকারিভাবে প্রীতি ও চতুর্থ শ্রেণির ১২৭ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এটি কিছুটা সংকট কাটাতে সহায়তা করবে। তবে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।