রাজশাহীতে অন্যের স্ত্রীর ঘরে সোহেল রানা নামে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) রাত্রীযাপনের খবর পেয়ে লাঠিপেটা করেছেন স্থানীয় লোকজন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর মতিহার থানাধীন সাতবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গভীর রাতে ওই এএসআইকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়েছে।
অন্যের স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া এএসআই সোহেল রানা রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) চন্দ্রিমা থানায় কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে নগরের সাতবাড়িয়া মহল্লার এক নারীর ঘরে পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে লাঠিপেটা করা হয়। মারধর করা হয় ওই নারীকেও। এসময় ওই এএসআই বলেন, তিনি কালেমা পড়ে বিয়ে করেছেন। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয়রা ওই নারী এবং এএসআইকে নানা জেরা করছে। জেরার ফাঁকে ফাঁকে লাঠি দিয়ে পেটানোও হচ্ছে। ওই নারীকে এ সময় বলতে শোনা যায়, ‘প্রচুর মেরেছে, প্রচুর।’ আর এএসআই সোহেল রানা বলেন, ‘আমি কালেমা পড়ে বিয়ে করেছি।’
জেরার মুখে তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান আছে। এই নারীকে তিনি ‘কালেমা পড়ে’ বিয়ে করেছেন। তবে ঘরে উপস্থিত ওই নারীর স্বামী বলতে থাকেন, স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদই হয়নি। এসময় ওই নারী বলেন, স্বামীকে তিনি মুখে মুখে তালাক দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই সোহেল রানা। ফলে মঙ্গলবার রাতে তাকে ওই নারীর ঘরে পেয়ে আটকে রেখে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার আগে কয়েকজন লাঠি দিয়ে তাকে পেটায়। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, এএসআই সোহেল রানা মঙ্গলবার রাতে ডিউটি থাকায় একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার দায়িত্ব পালন করতে মতিহার থানা এলাকায় গিয়েছিলেন। তারপর রাত ১টার দিকে তিনি মতিহার থানা পুলিশের হাতে আটক হন বলে জানতে পেরেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।
পরে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই নারীর স্বামী মাদক কারবারি। তার বাড়ি নগরের ডাসমারী মধ্যপাড়ায়। তিনি মাদক মামলায় বছর দেড়েক জেলে ছিলেন। এই সময়ে ওই নারী বাবার বাড়ি চলে যান। স্বামী জামিনে বের হলেও তিনি তার বাড়ি আসছিলেন না। তবে ওই নারীর সঙ্গে এএসআইয়ের বিয়ে কিংবা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চালানোর বিষয়ে ওসি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাস্থল মতিহার থানা এলাকায় হওয়ায় ওই এএসআইকে সংশ্লিষ্ট থানা হেফাজতেই রাখা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই এএসআই ও নারীর ভাষ্য অনুযায়ী এএসআই সোহেল রানা তাকে (নারীকে) তিনটি অটোরিকশা কিনে দেয়। সোহেল মাঝে মাঝে ওই নারীর কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নিতে যেতেন। মঙ্গলবার রাতেও নাকি তিনি ভাড়ার টাকা আনতেই গিয়েছিলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের তদন্ত কাজ চলছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের তথ্য কিংবা কেউ অভিযোগ করেনি। আমাদের ডিপার্টমেন্টাল যে আইন-কানুন রয়েছে সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনায়েত করিম/মাহফুজ