
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় একটি চক্র ফাঁদে ফেলে মোছা. ফরিদা পারভীন নামে এক বিধবার সরকারি চাকরিজীবী মেয়েকে জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া চক্রটি পরিবারকে ছাড়াই ওই মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপরও বিধবা ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা চক্রটির রোষানল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
এ রকম পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে চক্রের হাতে জিম্মি মেয়েকে ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বিধবা ফরিদা পারভীন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারে অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি চক্রটির কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভুক্তভোগী ফরিদা পারভীন পাকুন্দিয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা পারভীন জানান, তার স্বামী মৃত মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চাকুরি করতেন। তাদের দুই সন্তানের দুইজনই মেয়ে। বড় মেয়ের নাম মাহিয়া আক্তার রোকাইয়া (৩০) ও ছোট মেয়ের নাম মারিয়া আক্তার সুরাইয়া (২৮)। দুই মেয়েই পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল তার পরিবারটি।
অন্যদিকে ঘাগড়া গ্রামেরই ইকবাল ভূঞার স্ত্রী আকলিমা খাতুন শুভা (৩৬) একই অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করেন। ফরিদা পারভীনের অভিযোগ, একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে আকলিমা খাতুন শুভা তার এবং তার দুই মেয়ের সঙ্গে নানা কৌশলে সখ্য গড়ে তুলে। এই সুযোগে ফরিদা পারভীনের বড় মেয়ে মাহিয়া আক্তার রোকাইয়ার কাছ থেকে কিস্তি চালানোর শর্তে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা নেয়। এছাড়া ছোট মেয়ে মারিয়া আক্তার সুরাইয়ার কাছ থেকে চাকরিতে পদোন্নতির কথা বলে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
এসব টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে আকলিমা খাতুন শুভার সঙ্গে ফরিদা পারভীনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এ রকম পরিস্থিতিতে আকলিমা খাতুন শুভা ফাঁদে ফেলে ফরিদা পারভীনের ছোট মেয়ে মারিয়া আক্তার সুরাইয়াকে আকলিমা খাতুন শুভার জিম্মায় নিয়ে যায়। জিম্মায় নিয়ে মা ও বোন কাউকেই না জানিয়ে সুরাইয়াকে বিয়েও দিয়ে দেন শুভা।
এসব বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় অফিসে ফরিদা পারভীন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১ জানুয়ারি পাকুন্দিয়া পরিবার পরিকল্পনা অফিসে বিভাগীয় তদন্ত আসে। তদন্তের দিন ফরিদা পারভীন সাক্ষীসহ হাজির হলে তাদের ওপর শুভার নেতৃত্বাধীন চক্রটি হামলা চালায়। তাতেও থেমে না থেকে চক্রটি কৌশলে গত ৬ জানুয়ারি রাতে ফরিদা পারভীনের বাড়ির রান্না করা খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়। এই খাবার খেয়ে ফরিদা পারভীন, তার বড় মেয়ে মাহিয়া আক্তার রোকাইয়া, নাতি মেহেম্মদ ও জাহানারা ওরফে টুনী নামে এক আত্মীয়সহ চারজন অজ্ঞান হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফরিদা পারভীনের বাড়ির গেটের তালা ভেঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি অনেক জিনিসপত্র নিয়ে যায় চক্রটি। ছোট মেয়ের জিম্মিদশা এবং নিজের অসহায় পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ফরিদা পারভীন।
তিনি বলেন, আমার সহায়-সম্পত্তির ওপর চক্রটির নজর পড়েছে। তারা যেকোনো উপায়ে আমার এবং আমার পরিবারের সর্বনাশ করতে চায়। আমি আমার মেয়েটাকে আমার কাছে ফেরৎ চাই এবং মেয়েদের নিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই।
তাসলিমা আক্তার মিতু/মাহফুজ