
ছোট থেকেই স্বপ্ন পড়াশোনা করে ডাক্তার হবেন, এলাকার গরিব মানুষের সেবা করবেন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন অধরা হতে চলেছে।
বাবা ভ্যান চালিয়ে আর মা সেলাই মেশিনের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালান। বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ও মায়ের সামান্য গয়না বন্ধক রেখে আরিফার মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ের খরচ চালানো হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাদের মেয়ে আরিফা আক্তার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ সাফল্যে বাবা-মাসহ পরিবারের সবার মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। তবে চিন্তার ভাঁজ দরিদ্র বাবা-মায়ের কপালে। মেয়েকে আদৌ মেডিকেলে কলেজে ভর্তি করতে পারবেন কি না, জানা নেই তাদের।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দরিদ্র ভ্যানচালক শেখ আসাদুজ্জামান ও গৃহিণী হামিমা আক্তারের বড় মেয়ে আরিফা আক্তার। ২০২২ সালে বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পাওয়ার পর বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ভর্তি হন আরিফা। পরে ২০২৪ সালে এইচএসসিতে ‘এ’ প্লাস (গোল্ডেন) পেয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।
এ বিষয়ে আরিফা বলেন, ‘২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া পর্যন্ত আমার সব খরচ বহন করতে মা-বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে। দুই লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে তাদের। আমি কষ্ট করে একটা ভালো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু মেডিকেলে পড়ার মতো সামর্থ্য নেই।’
বাবা শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার মেয়ে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই। কী দিয়ে মেয়েকে পড়াব?’
আরিফার মা হামিমা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর আয় ও নিজে সেলাই মেশিনের কাজ করে অনেক সময় না খেয়ে থাকলেও কখনো তার পড়ালেখা বন্ধ করিনি। আরিফা ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এখন ভর্তির চান্স পেয়েছে। কিন্তু খুশির মাঝেও ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত। ভর্তির টাকা জোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবান ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’