
যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত কয়েক মাস ধরে জলাতঙ্কের টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির ‘পেন্টা’ টিকার (পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন) ক্ষেত্রেও। জেলা শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত উপজেলার মানুষ হাসপাতালটিতে এসে টিকা ছাড়াই ফিরে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া দামে টিকা কিনতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিকার জরুরি সরবরাহ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এ সংকট কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে জলাতঙ্কের (র্যাবিস) টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে কুকুর-বিড়ালের নখের আচড় কিংবা কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যের টিকা নিতে পারছেন না। সামর্থ্যবানরা ফার্মেসি থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে টিকাটি কিনছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালে প্রতি মাসে আড়াই হাজার রোগী জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসেন। এর বিপরীতে প্রতি মাসে ২৫০ ভায়াল টিকা সরবরাহ থাকে, যা দিয়ে এক হাজার রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব।
একইভাবে হাসপাতালটিতে নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য দেওয়া পেন্টা টিকারও সংকট হয়েছে। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে হাসপাতালটিতে এ টিকার সরবরাহ নেই। ফলে শীত মৌসুমের শুরুতে জন্ম নেওয়া নবজাতকরা এই টিকা নিতে পারছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে শিশু সন্তান নিয়ে আসা সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা শহরতলীর শেখহাটী এলাকার বাসিন্দা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার হাতে কুকুরের নখের আঁচড় লেগেছে। হাসপাতালে টিকা নিতে এসে জানতে পারি বিনামূল্যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে দোকান থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে।’
মণিরামপুর উপজেলা থেকে নবজাতক শিশুর টিকা নেতে আসা শামসুন্নাহার কলি বলেন, ‘বাচ্চার টিকা দিতে এসে শুনি টিকা নেই। উপজেলার সরকারি হাসপাতালেও টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। ৪২ দিন বয়সে যে টিকাটি দিতে হয় সেটা দিতে পারলাম না। এরপর বাচ্চার বয়স আড়াই মাস হলে একসঙ্গে দুই ডোজ দিতে হবে। ছোট বাচ্চাদের একসঙ্গে বেশি টিকা দিলে জ্বর আসে, কান্নাকাটি করে। বাচ্চার কষ্ট সহ্য করা যায় না।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহানাজ কানুন বলেন, কয়েক মাস ধরে আমাদের কাছে বাচ্চাদের পেন্টা টিকা নেই। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন পেন্টা টিকা না পেয়ে ফিরছে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জলাতঙ্কের টিকাও নেই। তবে কেউ টিকাটি বাইরে থেকে কিনে আনলে আমরা তার শরীরে পুশ করে দিচ্ছি।
টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ নূরুল হক বলেন, টিকার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, প্রতিষেধক দুটির জরুরি সরবরাহ পেতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই টিকা চলে আসবে। তখন সংকট কেটে যাবে।