
২০২৪ সালের ৬ মার্চ। বাগেরহাট কালেক্টরেট ভবনের ব্লক-১ ও ব্লক-২ (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিভাগের নির্ধারিত রেট অনুযায়ী দুটি ভবনের সর্বনিম্ন মূল্য ধরা হয় ৩৭ লাখ ৩ হাজার ২৯৩ টাকা।
বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার ১৫০ জন ঠিকাদার শিডিউল কেনেন। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১০ ঠিকাদার নিলামে অংশগ্রহণ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, বাকি ১৪০ জনকে দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। অনেকে চাইলেও শিডিউল কিনতে পারেননি। যারা কিনেছিলেন, তাদের কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, আবার কাউকে কেনা দামের (এক হাজার) দ্বিগুণ টাকা দিয়ে শিডিউলের কপি নিয়ে নেওয়া হয়।
বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি শেখ পরিবারের আস্থাভাজন সরদার নাসির উদ্দিন ও তার লোকজন এটা করেছেন বলে অভিযোগ অন্য ঠিকাদারদের। তারা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনের প্রতিষ্ঠান এসকে ট্রেডার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৩৮ লাখ টাকায় দেওয়া এই ভবন অন্তত ১ কোটি টাকায় বিক্রি করা যেত।
জানা গেছে, কয়েক দফায় বিভিন্ন অফিশিয়াল প্রক্রিয়া শেষে গেল বছরের ১৯ নভেম্বর এসকে ট্রেডার্সের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এসকে ট্রেডার্সের পক্ষে লিটু হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী এই ভবন ভাঙতে শুরু করেন। তার দাবি তিনি এসকে ট্রেডার্সের কাছ থেকে বৈধভাবে ভবনটি কিনে নিয়েছেন। তবে কত টাকায় তিনি কিনেছেন তা বলতে রাজি হননি।
শিডিউল কেনার পরও ভয়ভীতির কারণে জমা দিতে না পারা ঠিকাদার শওকত আলী বলেন, ‘আমিসহ অনেকেই শিডিউল কিনেছিলাম। কিন্তু বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি শেখ পরিবারের আস্থাভাজন সরদার নাসির উদ্দিন ও তার সহযোগী যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির পলি আমাকে দরপত্র জমা দিতে দেননি। আগ্রহী সব ঠিকাদার যদি এই নিলামে অংশগ্রহণ করতেন, তাহলে ভবন দুটি অন্তত ১ কোটি টাকায় বিক্রি হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনার এক ঠিকাদার বলেন, ‘বাগেরহাট জেলা যুবলীগের একজন নেতা আমাকে ফোন করে দরপত্র জমা দিতে নিষেধ করেন। বলেন কাজটা খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন পাবেন।’
নাম প্রকাশ করতে চান না বাগেরহাটের এমন আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘গণপূর্ত বিভাগে যখন শিডিউল কিনতে গিয়েছিলাম তখন যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির পলি ও তার লোকজন আমাকে কিনতে নিষেধ করেন। এ ছাড়া দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের এক নারী কর্মকর্তাকে আমার কাছে শিডিউল বিক্রি করতে নিষেধ করেন। অনেক বাগবিতণ্ডা ও বিভিন্ন জায়গায় ফোন করার পরে আমি শিডিউল কিনতে পারি। তবে পরে বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন ও হুমায়ুন কবির পলির হুমকির কারণে দরপত্র জমা দিতে পারিনি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বাগেরহাটের সম্পাদক এসকে হাসিব বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে বাগেরহাটে টেন্ডার সিন্ডিকেট ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। নির্দিষ্ট মানুষদের পছন্দের লোকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট করা থেকে শুরু করে, প্রকৃত ঠিকাদারদের হুমকি-ধমকি এমনকি মারধরও করা হতো।’
তিনি বলেন, ‘কালেক্টরেট ভবনের নিলামে অংশগ্রহণের জন্য ১৫০ জন ঠিকাদার শিডিউল কিনেছিলেন। কিন্তু জমা দিয়েছেন মাত্র ১০ জন। এ থেকেই বোঝা যায় এখানে কত বড় দুর্নীতি হয়েছে। এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
গণপূর্ত বিভাগ বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শাহ আলম ফারুক চৌধুরী বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গণপূর্ত বিভাগের রেট শিডিউল থেকে বেশি দামে ভবন দুটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। পুনরায় নিলাম দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।’