
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনের শর্ত ভঙ্গ করে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদি নিয়মকানুন করে মাত্র ৩২ জন নিয়ে পরিচালনার বিরুদ্ধে রংপুরে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স, মিডিয়া ও সরকার অনুমোদিত অনলাইনে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের দাবির মুখে অবশেষে রংপুর প্রেস ক্লাবের কমিটি বিলুপ্ত করে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. ময়নুল হক।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধায় রংপুরে কর্মরত অন্তত দেড় শতাধিক গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও ক্লাবের বিদ্যমান সবকিছু সিজারলিস্ট তৈরি করে ক্লাব পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
এসময় রংপুর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিকের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর, রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, রংপুর অনলাইন রিপোর্টার্স ফোরাম, বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের নেতারা, সদস্য ছাড়াও রংপুরে কর্মরত দেড় শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রশাসক চিঠি দিয়ে রংপুরে বিদ্যমান সকল সাংবাদিক সংগঠন, স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকদেও দায়িতগ্রহন অনুষ্ঠান অবহিত করতে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানান।
দায়িত্বভার গ্রহণ করে এডিসি ময়নুল হক বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলো (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৯ উপধারা ২ মোতাবেক জারিকৃত আদেশ সংশোধনপূর্বক আমাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আমি পুলিশ এবং রংপুরের গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে বিকেলে প্রেস ক্লাবে আসি। একটি গেট বন্ধ পাই। অন্য গেট খোলা থাকায় সেটি দিয়ে প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করি। তিনি বলেন, এখন থেকে ১৯৬২ সলে সংস্থার আইন অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে আমি প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সকল দায়িত্ব পালন করবো। এছাড়াও গঠনতন্ত্র অনুসারে সদস্য হালনাগাদ,খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করবো। ক্লাবের ৬তলা ভবনসহ স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি কোন সদস্য ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাসহ দোকান ভাড়া বা দোকান উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে আগের উদ্যোগ যাছাই করা হবে। দেশের স্বনামধম্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্তের নিয়ম অনুযায়ী আয়-ব্যায়ের হিসাব অডিট করার বন্দোবস্ত করা হবে। আর্থিক অনিয়ম প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠাকালীন গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে সমাজসেবার অনুমোদন নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। সেই গঠনতন্ত্রের আলোকে রংপুরের যোগ্য ও আগ্রহী সাংবাদিকদেরকে সদস্য করে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রংপুরে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
রংপুর অনলাইন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএন নিউজের প্রতিনিধি শাহরিয়ার মিম জানান, এটি ঐতিহাসিক উাদ্যোগ। রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য প্রেস ক্লাবের সরকার জায়গা দিলেও তারা নানা কালা নিয়মকানুন করে গণমাধ্যমকর্মীদের বঞ্ছিত করেছে। অনলাইনের সাংবাদিকরা প্রেস ক্লাবে আবেদন করারই সুযোগ রাখা হয়নি। এটি বৈষম্যের বড় উদাহরণ। অনলাইনের সাংবাদিকদেরও সদস্য অন্তর্ভূক্তি করতে হবে।
বাংলাদেশ ফটো সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দৈনিক পরিবেশের ফটো সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন বলেন, ফটো সাংবাদিকতা সর্বজনবিদিত। কিন্তু রংপুর প্রেস ক্লাবে ফটো সাংবাদিকরা সদস্য হিসেবে আবেদনই করতে পারতো না। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। আমরা চেয়েছি সমাজসেবার মাধ্যমে এর প্রতিকার পেতে। এখন আমরা চাই, প্রতিষ্ঠাকালীন গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ফটো সাংবাদিকদের সদস্য অন্তুর্ভূক্তির সুযোগ দিতে।
টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে সাবেক সহ-সভাপতি ও চ্যানেল ২৪ এর ভিডিও সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন ডেমি জানান, আমরা ভিডিও সাংবাদিকরা রংপুর প্রেস ক্লাবে সদস্য হিসেবে আবেদনই করতে পারতাম না। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর কোন দেশে এধরণের কোন নিয়ম না থাকলেও এই ক্লাবে সেটি ছিল। আমরা এই বৈষম্যেও অবসান চাই। ভিডিও সাংবাদিকদের প্রেস ক্লাবে আবেদনের সুযোগ করে দিতে হবে।
রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শরিফা বেগম শিউলী বলেন, রংপুরে প্রায় দুই’শ সাংবাদিক কর্মরত। কিন্ত প্রেসক্লাবে সদস্য মাত্র ৩২ জন। এটা কেন হয়েছে। সেটা ভাবার জন্য প্রমাণ লাগে না। সরকার জমি দিয়েছে সব সাংবাদিকদের।
সেলিম সরকার/এমএ/