ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পঞ্চগড়ে হাসপাতালে শূন্য পদে চিকিৎসকের দাবিতে অনশনে সেচ্ছাসেবীরা

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
পঞ্চগড়ে হাসপাতালে শূন্য পদে চিকিৎসকের দাবিতে অনশনে সেচ্ছাসেবীরা
বৈষম্য দূর করে শূন্য পদে চিকিৎসক পদায়ন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবীদের অনশন কর্মসূচি। ছবি: খবরের কাগজ

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকায় দূর্ভোগ ও বৈষম্যের অভিযোগ তুলে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে জেলার সেচ্ছাসেবীরা। 

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আয়োজনে এই অনশন শুরু করে তারা। তাদের দাবি, বৈষম্য দূর করে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক পদায়ন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নির্মাণ হয়ে পড়ে থাকা ২৫০ শয্যা ভবন চালুর দাবি তোলা হয়।

জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলা সদরসহ উপজেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ১৬৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ৪৫ জন চিকিৎসক থাকায় এবং চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগের শিকার হওয়ায় সংকট দূর করার ৯ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছে পঞ্চগড় জেলার তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা।

কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সমন্বয় আহসান হাবিব সরকার, ফোরামের উপসমন্বয়ক ওয়াশিম আকরাম, সদস্য মানিক খান প্রমূখ।

এসময় বক্তারা বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় এবং ভালো চিকিৎসা সেবা না থাকায় জরুরি রোগী নিয়ে গেলেই তাদের রেফার করা হয় রংপুর, দিনাজপুর কিংবা ঢাকায়। পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। তাই স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য দূর করতে ৯ দফা দাবি করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বৈষম্য দূর করে শুন্য পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান তারা। অন্যথায় কঠোর অনশন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কর্মসূচিতে।

ছবি: খবরের কাগজ

দাবিগুলো হলো- (১) পঞ্চগড় জেলার সকল সরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি হাসপাতালে ডাক্তারদের শুন্য পদসমূহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ ও ডাক্তার পদায়ন নিশ্চিত করা (২) পঞ্চগড় জেলা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহের স্থানীয় ডাক্তারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরে কর্মরত আছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। (৩) বিভাগীয় শহর, উন্নত জেলা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী সরকারি হাসপাতাল সমূহে যেখানে একটি পদের বিপরীতে একাধিক ডাক্তার আছে তাদের মধ্য থেকে বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২ জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৪) নির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংটি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করে দ্রুত চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৫) প্রত্যেক উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান ও জনবল নিয়োগ করে পরীক্ষাগারগুলো পুরোদমে চালু করা, যাতে ন্যূনতম রক্তপরীক্ষা, এক্স-রে ও যাবতীয় রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা যায় (৬) জেলার সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারগুলো চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে সিজারসহ ছোট ছোট অপারেশনগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হয় (৭) সরকারি হাসপাতাল সমূহের খাবারের মান উন্নত করা। (৮) হাসপাতালগুলোতে আউটডোর, ইনডোর, ওয়ার্ড এবং ক্যাবিনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৯) জেলার সকল বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে পরীক্ষাগারসহ ক্লিনিকগুলোতে দক্ষ জনবল আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স পুনর্মূল্যায়ন করা এবং লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এদিকে অনশন কর্মসূচির খবর পেয়ে দুপুর ১টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ও সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান অনশন কর্মসূচিতে গিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে অনশন কর্মসূচি পালন করা তরুণদের দুপুর দেড়টার সময় পানি পান করিয়ে অনশন কর্মসূচি ভাঙ্গান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী।

এসময় সাবেত আলী বলেন, সিভিল সার্জনের সঙ্গে মিলে আমি এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একটি করে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার জন্য অবগত করা হয়েছে। আশা করছি স্বাস্থ্য খাতের সকল সমস্য দ্রুত সমাধান হবে।

সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পঞ্চগড়ে চিকিৎসক সংকট নতুন না। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে আমি পঞ্চগড়ে আসার পর সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এই তরুণরা যে দাবি উপস্থাপন করে অনশনে বসেছে সেটা বাস্তব দাবি। অতি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি। 

মো: রনি মিয়াজী/মাহফুজ

 

বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:২৫ এএম
বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে
বায়েজিদ লিংক রোড়। খবরের কাগজ

পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড় পাঁচ দিন ধরে একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। উল্টো পথে গাড়ি চলায় দেখা দিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। তবে তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

সোমবার (২ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বায়েজিদ লিংক রোড়ে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির সামনে ফৌজদারহাটমুখী লেনে কয়েকটি সিমেন্টের বার দেওয়া হয়েছে। সেখান অংশ থেকে স্পেক্টা কনস্ট্রাকশনের একটি রিসোর্ট সংলগ্ন ইউটার্ন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে উভয় পাশের সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাসসহ সব ধরনের যানবাহন একই লেন অর্থাৎ বায়েজিদমুখী লেন দিয়ে চলাচল করছে। ফলে রাতের বেলায় এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা সেখানে পার্শ্ববর্তী ছিন্নমূল এলাকার শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টো পথে চলাচল করে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের অটোরিকশাগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিন্নমূলে চলাচল করে। আমরা এক নম্বর এলাকা দিয়ে ছিন্নমূলের ভেতরের সড়কে চলে যাই। একপাশ দিয়ে উভয় লেনের গাড়ি চলাচল করায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় রাতের বেলায় বড় গাড়ি বিকল হয়ে থাকে সড়কের ওপর। আবার অনেক বাইকার দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান এই রোডে। কিছু দিন পরপর এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম বলেন, ‘ছিন্নমূলের সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো উল্টো পথে আসে। তারা যে সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে, সেখানে কোনো ইউটার্ন রাখা হয়নি। এ জন্য তারা দূরের ইউটার্ন দিয়ে না এসে উল্টো পথে গাড়ি চালায়। যাত্রীরা বললেও শুনে না।’ এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চালকরা কথা বলতে রাজি হননি।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে সড়কটির একপাশ পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে খুলে দেওয়া হবে।’

ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:১৯ এএম
ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার দিন নগরীতে তৈরি হওয়া বর্জ্য ঈদের দিন বিকেল ৫টার মধ্যেই পরিষ্কার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। 

সোমবার (২ জুন) দুপুরে চসিক কার্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সঙ্গে প্রস্তুতি সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। 

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের টার্গেট, ঈদের দিন ৫টার মধ্যে পুরো নগরী পরিষ্কার করে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তর করা। আমরা ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে নগরী থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রায় ৪ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করবেন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩৬৯টি গাড়ি বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে। বর্জ্য অপসারণের জন্য ডাম্প ট্রাক, কম্পেক্টর, পে-লোডার কাজ করবে। রক্ত পরিষ্কার করার জন্য পানির ভাউজার থাকবে। কোনো কর্মী অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘কোরবানির চামড়া নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। নগরীর বাইরের চামড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নগরীতে ঢুকতে পারবে না।’ নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘পশু জবাইয়ের আগে পানি পান করানো, জবাইয়ের জায়গায় পরিষ্কার রাখা এবং রক্ত-পানি ড্রেনে পড়ে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

এ ছাড়া নগর ভবনের দামপাড়ায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খোলা থাকবে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে। দুটি হটলাইন নম্বর ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারবেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা প্রমুখ।

প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:০৬ এএম
প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে
খবরের কাগজ

প্লাস্টিক মানুষের জন্য দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার ( ২ জুন) ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। 

‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উদ্ভাবন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শিরোনামে সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্লাস্টিক মানবজীবনকে গ্রাস করে ফেলছে। মরণব্যাধি ক্যানসারসহ জটিল সব রোগ নিয়ে ধরা দেবে আমাদেরই ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক। তাই ছোট থেকে বড় সবাইকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে। বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আমরা এগুলো বর্জন করতে না পারলে সামনে অনিশ্চিত, অনিরাপদ এক ভবিষ্যৎ উঁকি দিচ্ছে।’ 

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) নুরুল্লাহ নূরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন।

মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়ায় ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। খবরের কাগজ

একসময় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়া ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর পালপাড়া ছিল মৃৎশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ঘরের কোণে কোণে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা, সবখানেই ছিল মাটির ছোঁয়া। আজ সেই শিল্পের আলো নিভু নিভু প্রায়। কিন্তু হার মানেননি কিছু সংগ্রামী শিল্পী। এখনো এই প্রাচীন ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিজমেহার গ্রামের মনি রানী পাল (৪৬) প্রায় তিন দশক ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই প্রাচীন পেশা। একই গ্রামের সুভাষ পাল (৬৬) ও কুমেশ্বর পাল (৬৮) অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। তারা শুধু কাজই করছেন না, এককভাবে বহন করছেন একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।

একই পাড়ার আরও ২০টি পরিবার, যাদের মধ্যে আছেন দুলাল পাল, নেপালী রানী পাল, মঞ্জু রানী পাল ও শেফালী পাল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। অথচ একসময় এই পাড়ার প্রায় ৩০০টি পরিবার মাটিরসামগ্রী তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।

মৃৎশিল্পী সুভাষ পাল বলেন, ‘জন্ম থেকেই যেন মাটির গন্ধ লেগে আছে শরীরে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থেকে কাজ শিখেছি, কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-বাটি নিয়ে বিক্রি করেছি ধান, চাল বা টাকার বিনিময়ে।’ তিনি জানান, বাঁশঝাড় থেকে সংগ্রহ করা হতো কাঁচামাল। কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। পরে রহিমানগর ও ঠাকুরবাজারে দোকান দেন। কিন্তু এখন আর মৃৎপণ্য তৈরি না করে কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাল এনে বিক্রি করছেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় পাল থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

আরেক মৃৎশিল্পী কুমেশ্বর পাল বলেন, ‘বরিশাল থেকে সামগ্রী এনে হাটে বিক্রি করি। হাটের দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হলেও, অন্য দিনগুলোতে দুই-চার শ টাকাও রোজগার হয় না।’

এদিকে মনি রানী পাল এখনো নিজের হাতে মাটির সামগ্রী বানান, আগুনে পোড়ান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু এঁটেল মাটির অভাব ও কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। অর্থাভাবে বাজারের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়েছে পড়েছে।

পালপাড়ার উচ্চশিক্ষিত যুবক গণেশ পাল বলেন, ‘একসময় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৫/২০টি পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে। তবে সব কিছু বাড়ায় তারা চাপে পড়েছেন। নতুন প্রজন্ম এ পেশার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

শাহরাস্তি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বাজারজাতকরণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আজ মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিলের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও জিজ্ঞাসা, এই শিল্প শুধু মাটি নয়, এই শিল্পে গাঁথা আছে বাংলার আত্মা, ইতিহাস, সংস্কৃতি। যত দিন এই পরিবারগুলো টিকে থাকবে, ততদিন শাহরাস্তির মাটিতে মৃৎশিল্পের আলো জ্বলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব কি কেবল ওদেরই?

চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তারের ১৮ ঘণ্টা পর আসামির মৃত্যু

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তারের ১৮ ঘণ্টা পর আসামির মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কুড়ালগাছি পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহিরুল ইসলাম (৪০)। মাদকের একটি মামলায় রবিবার (১ জুন) বেলা ১১টায় তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে দর্শনা থানা পুলিশ। 

এরপর তাকে আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রাত ২টার দিকে তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২টা ২৫ মিনিটে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, সম্ভবত তিনি ‘স্ট্রোক করে’ মারা যেতে পারেন। তবে মহিরুলের স্বজনদের দাবি, ‘পুলিশের নির্যাতনে তিনি মারা গেছেন।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলায় মহিরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গত রবিবার বেলা ১১টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশের সদস্যরা তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, রবিবার রাত ১টা ৫৫ মিনিটে মহিরুল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ২টা ২৫ মিনিটে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, মহিরুলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। নিহতের ভাই সুবার আলী খবরের কাগজের কাছে দাবি করেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় তার (মহিরুল) শরীরে কোনো আঘাত ছিল না। কিন্তু মৃত্যুর পর হাতে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশই মারধর করে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।’

মহিরুলের ভাতিজি কাজল রেখা বলেন, ‘সাদা পোশাকের দুই পুলিশ সদস্য হঠাৎ ঘরে ঢুকে মহিরুলকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়।’ ভাতিজা মো. গাফ্ফারের অভিযোগ, ‘গ্রেপ্তারের সময় আমি ওয়ারেন্ট দেখানোর অনুরোধ করেছিলাম। তখন আমাকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি হেনস্তা করা হয়।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, ‘কারাগার থেকে আনার সময় মহিরুল অচেতন ছিলেন। তার অবস্থা গুরুতর ছিল। সম্ভবত স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে।’ দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদ তিতুমীর বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর দ্রুত তাকে আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। প্রহারের কোনো সুযোগ ছিল না, এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।’

এদিকে সোমবার (২ জুন) দুপুর ১২টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল শেষে লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।