
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকায় দূর্ভোগ ও বৈষম্যের অভিযোগ তুলে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে জেলার সেচ্ছাসেবীরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আয়োজনে এই অনশন শুরু করে তারা। তাদের দাবি, বৈষম্য দূর করে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক পদায়ন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নির্মাণ হয়ে পড়ে থাকা ২৫০ শয্যা ভবন চালুর দাবি তোলা হয়।
জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলা সদরসহ উপজেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ১৬৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ৪৫ জন চিকিৎসক থাকায় এবং চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগের শিকার হওয়ায় সংকট দূর করার ৯ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছে পঞ্চগড় জেলার তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সমন্বয় আহসান হাবিব সরকার, ফোরামের উপসমন্বয়ক ওয়াশিম আকরাম, সদস্য মানিক খান প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় এবং ভালো চিকিৎসা সেবা না থাকায় জরুরি রোগী নিয়ে গেলেই তাদের রেফার করা হয় রংপুর, দিনাজপুর কিংবা ঢাকায়। পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। তাই স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য দূর করতে ৯ দফা দাবি করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বৈষম্য দূর করে শুন্য পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান তারা। অন্যথায় কঠোর অনশন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কর্মসূচিতে।
ছবি: খবরের কাগজ
দাবিগুলো হলো- (১) পঞ্চগড় জেলার সকল সরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি হাসপাতালে ডাক্তারদের শুন্য পদসমূহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ ও ডাক্তার পদায়ন নিশ্চিত করা (২) পঞ্চগড় জেলা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহের স্থানীয় ডাক্তারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরে কর্মরত আছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। (৩) বিভাগীয় শহর, উন্নত জেলা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী সরকারি হাসপাতাল সমূহে যেখানে একটি পদের বিপরীতে একাধিক ডাক্তার আছে তাদের মধ্য থেকে বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২ জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৪) নির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংটি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করে দ্রুত চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৫) প্রত্যেক উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান ও জনবল নিয়োগ করে পরীক্ষাগারগুলো পুরোদমে চালু করা, যাতে ন্যূনতম রক্তপরীক্ষা, এক্স-রে ও যাবতীয় রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা যায় (৬) জেলার সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারগুলো চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে সিজারসহ ছোট ছোট অপারেশনগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হয় (৭) সরকারি হাসপাতাল সমূহের খাবারের মান উন্নত করা। (৮) হাসপাতালগুলোতে আউটডোর, ইনডোর, ওয়ার্ড এবং ক্যাবিনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৯) জেলার সকল বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে পরীক্ষাগারসহ ক্লিনিকগুলোতে দক্ষ জনবল আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স পুনর্মূল্যায়ন করা এবং লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এদিকে অনশন কর্মসূচির খবর পেয়ে দুপুর ১টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ও সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান অনশন কর্মসূচিতে গিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে অনশন কর্মসূচি পালন করা তরুণদের দুপুর দেড়টার সময় পানি পান করিয়ে অনশন কর্মসূচি ভাঙ্গান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী।
এসময় সাবেত আলী বলেন, সিভিল সার্জনের সঙ্গে মিলে আমি এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একটি করে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার জন্য অবগত করা হয়েছে। আশা করছি স্বাস্থ্য খাতের সকল সমস্য দ্রুত সমাধান হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পঞ্চগড়ে চিকিৎসক সংকট নতুন না। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে আমি পঞ্চগড়ে আসার পর সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এই তরুণরা যে দাবি উপস্থাপন করে অনশনে বসেছে সেটা বাস্তব দাবি। অতি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি।
মো: রনি মিয়াজী/মাহফুজ