
বাজারে মাছের কমতি নেই। ছোট-বড় সব ধরনের মাছ বিক্রি হয়। তবে দাম বেশি রাখার কারণে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অনেকে বেশি মাছ কিনতে এসে কম কেনেন। তুলনামূলক কিছুটা কম দাম হওয়ায় পাঙাশ মাছ নিয়েই বাড়ি ফেরেন অনেকে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজারে এমন চিত্রই দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ছোট দেশি মাছের দাম আরও বেড়েছে। বর্তমানে দুই কেজি ওজনের রুই ও কাতল ২৫০ টাকা, দুই কেজি ওজনের সিলভার কার্প ১৮০ টাকা, বিভিন্ন আকারের মৃগেল ২১০-২৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৮০ টাকা, বাউশ ২৮০-৩০০ টাকা, টেংরা ৩০০-৪০০ টাকা, পাঙাশ ১৩০-১৪০ টাকা, শোল ৫০০-৫৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, টাকি ৩৫০-৪০০ টাকা, রাজপুঁটি ১৬০-১৭০ টাকা, দেশি পুঁটি ১৯০-২০০ টাকা, পাবদা ২০০-২৫০ টাকা ও মলা ৪০০-৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
তবে ক্রেতাদের স্বস্তি রয়েছে সবজির বাজারে। অপরিবর্তিত অবস্থায় গাজর ২০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, কাঁচকলা ২৫ টাকা, মুলা ১০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, শিম ১০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা, ফুলকপি ১০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ১০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, মটরশুঁটি ৫০ টাকা ও কচুর লতি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ডাঁটা ও লেবু ১০ টাকা হালি এবং লাউ ৪০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে হল্যান্ড বড় আলু ১৬ টাকা ও দেশি ছোট আলু ১৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
কেজিতে ১৫ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকায়। ২০ টাকা কমে সোনালি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়, ২০ টাকা কমে সাদা কক বিক্রি হয় ২৮০ টাকায়। তবে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে লাল কক মুরগির দাম। সেটি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়। লেয়ার ৩৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫ টাকা, হাঁসের ও দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে সব ধরনের চাল অপরিবর্তিত অবস্থায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ২৫ কেজির নাজির শাইল চালের বস্তা ১ হাজার ৮৫০ টাকা, বিআর পুরোনো ২৮ ও ২৯ জাতের চাল ১ হাজার ৬০০ টাকা, কাটারি ১ হাজার ৮৫০ টাকা, স্বর্ণা ১ হাজার ৩৫০ টাকা, চিনিগুঁড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা ও চিনিগুঁড়া পোলার চাল ৩ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা সামছুল আলম বলেন, ‘মাছের দাম বাড়িয়েছেন আড়তদাররা। আমরা তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনেছি। এরপর কিছুটা লাভ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি। দাম বাড়ানোর পেছনে আমাদের কারসাজি নেই।’
অন্যদিকে মাছের আড়তদার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ায় মাছের সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বেড়েছে। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন না।’
দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ আছে কি না, জানতে কথা হয় জেলা সদরের আলালপুরের মৎস্যচাষি জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। শীতের কারণে মাছ কম বড় হয়। তাই মোটামুটি বিক্রির উপযোগী মাছগুলোও বিক্রি করছি। অথচ সরবরাহ কম বলে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আড়তদাররা।’
মেছুয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল হেকিম বলেন, ‘বাজারে সবজির অভাব নেই। ফলে শীত শুরুর পর থেকেই সবজির দাম কমতে শুরু করে। এখন দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে ন্যায্য দামে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।’
ছামাদ মিয়া নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সবজির দামে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকলেও মাছের দামে আমরা হতাশ। বাজারে প্রচুর মাছ থাকলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।’ ইদ্রিস আলী নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘সিন্ডিকেট করা হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করা হবে। সিন্ডিকেট করে কোনো কিছুর দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’