
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের এলাকাবাসী এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে সদর উপজেলার মধুপুর বাজার থেকে ইবি থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে একটি মিছিল বের করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে জড়ো হয়। এসময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীসহ আশপাশের ৫টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গাছের গুঁড়ি ফেলে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গেট এলাকায় সড়কের দুইপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন, পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
সড়ক অবরোধের ফলে যানজট। ছবি: খবরের কাগজ
জানা গেছে, সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি এ থানাটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু থানাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ এ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। তারা থানাটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অথবা এর কাছাকাছি কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়কের পাশে স্থানান্তরের দাবি জানান। সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এবিষয়ে কথা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মাত্র নারী শিক্ষার্থীই আছে ৪ হাজারের বেশি। মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১৪ হাজার। তাই এখানকার নিরাপত্তার জন্য থানাটি থাকা খুবই জরুরি। তাছাড়া এই এলাকার সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টিও এই থানার ওপর নির্ভর করে। তাই এটি যেখানে আছে সেখানেই রাখতে হবে। ঝাউদিয়াতে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সেখানে আরেকটি থানা হোক তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু ইবি থানাকে এখান থেকে অন্য কোথাও সরাতে দেওয়া হবে না।
ইবি থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ২৫ বছর ধরে এই এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে এ থানা। সেই সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক কাজ করে এ থানাটি। তবুও ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই থানাকে সরিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে দুর্গম ঝাউদিয়ায় নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। তাদের চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না। ইবি থানা ইবিতেই থাকবে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে এর চেয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আসলে এই থানার বিষয়ে আমাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে একটি চিঠি এসেছে। যেহেতু এই থানা নিয়ে দুইটি পক্ষ দুই এলাকায় নেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে, তাই আমরা একটি প্রতিবেদন আকারে প্রকৃত ঘটনা মন্ত্রনালয়কে জানাব। এর ভিত্তিতে সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তাবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই ইবি থানাকে ঝাউদিয়াতে নিয়ে উদ্ধোধন করার দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের উজানগ্রাম বাজার এলাকা অবরোধ করে রাখে ঝাউদিয়াসহ এর আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
মিলন উল্লাহ/মাহফুজ