
গোপালগঞ্জ বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার সভা চলাকালীন সদস্যদের ওপর হামলা ও গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে শ্যামল মন্ডল (৪৯) নামের ওই সংস্থার কোষাধ্যক্ষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রথমে গোপালগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টায় গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থায় (ডগলাস) এঘটনা ঘটে।
আগুনে ঝলসে যাওয়া শ্যামল মন্ডল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা করপাড়া ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া গ্রামের নকুল বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ঢাকা কৈননিয়া নামের একটি সংস্থায় চাকরি করেন। গোপালগঞ্জের খ্রিষ্টানদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার কার্যকরী কমিটির কোষাধ্যক্ষ তিনি।
বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার (ডগলাস প্রকল্প) নির্বাহী পরিচাক শলোমন অপূর্ব বাড়ৈ বলেন, গোপালগঞ্জের বেদগ্রামে বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার সামনে ও ভিতরে জায়গা দখল করার জন্য দীর্ঘদিন পায়তারা করছে এন্ড্রু বিশ্বাস। আজ শনিবার ছিল কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত সভা। এন্ড্রু সংস্থার বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করে আসছে।
এন্ড্রু বিশ্বাস আজ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সভা শুরু হওয়ার কিছু সময় পর এন্ড্রু বিশ্বাস সভা বানচাল করার জন্য ৪০-৫০ লোকজন নিয়ে সভা কক্ষে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে উপস্থিত সদস্যদের বেধড়ক মারপিট করে। আতঙ্কে সদস্যরা দৌড়ে বের হয়। এসময় সংস্থার ট্রেজারার শ্যামল মন্ডলকে কক্ষে আটকে প্রথমে মারপিট ও পরে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে গুরতর অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। সংস্থার সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথম গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করে।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্য বলেন, আমি খুলনার ট্রাবোনাকাল গ্রেস এজি চার্জের পুরহিতের দায়িত্ব পালন করছি। গত বৃহস্পতিবার এন্ড্রু বিশ্বাস তার ভাগনে মজুমদার ও আকাশ মজুমদার খুলনায় গিয়ে আমাকে আজকের সভায় উপস্থিত না হওয়ার জন্য হুমকি দেয় এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। আমি গোপালগঞ্জের আসলে আমাকে দেখে নেবে বলেও হুমকি দিয়ে আসে। তার উদ্দেশ্য গোপালগঞ্জে বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার জায়গা দখল করে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আজ এন্ড্রু বিশ্বাসের নেতৃত্ব প্রভাস বাড়ৈ, দীলিপ বাড়ৈ, আইজ্যাক বাড়ৈ, জুয়েল বাড়ৈ, মিকাইল বাড়ৈ, লিটন বল্বব, সুকলাল মাজুমদারসহ ৪০-৫০ লোক নিয়ে এ হামলা করে।
এ বিষয়ে এন্ড্রু বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে জায়গা দখলের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তার বড় ভাই হিসেবে একটা থাপ্পড় মেরেছি। তবে আজ আমার কোনো লোক হামলা করেনি। কারা তাদের ওপর হামলা করেছে বা পুড়িয়েছে তা আমার জানা নেই।’
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. আব্দুলাহ রাজিব বলেন, আজ দুপুরে শ্যামল মন্ডল নামের এক অগ্নিদগ্ধ রোগীকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। তার বুক, পেট, দুই হাতের সব জায়গায় পুড়ে গেছে। রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করছিল, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি দিয়েছি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলে, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বেদগ্রাম বিশ্ব মুক্তবানী সংস্থার সভা চলাকালীন হামলা ও একজনকে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে। সেখানে ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। এবিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাদল সাহা/মাহফুজ