মোহাম্মদ আলী মণ্ডল বাইতুন নূর জামে মসজিদে ইফতার করার জন্য সারি বেঁধে বসেছেন রোজাদাররা। ছবি: খবরের কাগজ
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী এলাকার মোহাম্মদ আলী মণ্ডল বাইতুন নূর জামে মসজিদ। প্রতিদিন ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী শত শত রোজাদার। আসে শিশুরাও। সবাই বসেন পাশাপাশি। সৃষ্টি হয় সম্প্রীতির এক পরিবেশ। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে খাওয়া শুরু করেন। তবে ইফতারে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি দেওয়া হয় না। এগুলোর পরিবর্তে দেওয়া হয় বিরিয়ানি। কোনোদিন গরুর, কোনোদিন খাসির ও কোনোদিন মুরগির বিরিয়ানি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে সালাদ। আর শুরুতে শরবত তো থাকেই।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতেই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। এলাকার লোকজন নিজ উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী মসজিদে টাকা দেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা ইফতার আয়োজনের জন্য টাকা পাঠান। সবার এমন সাহায্য-সহযোগিতায় ইফতারের সময়টুকু মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে।
আমতলী এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইফতারে সাধারণত ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু , বেগুনি, চপ ইত্যাদি দেওয়া হয়। তবে অনেকে এগুলো খেতে চান না। তাই ইফতারে এগুলোর পরিবর্তে রোজাদারদের বিনামূল্যে বিরিয়ানি দেওয়া হচ্ছে।’
জাহিদুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, ‘ইফতারের আগ মুহূর্তে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ মসজিদে আসেন। সবাই এক কাতারে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন। মসজিদে জায়গা না পেলে সামনের মাঠে বসে ইফতার করেন। অনেকে সঙ্গে শিশু নিয়ে আসেন।’
মসজিদে প্রতিদিন ইফতার করেন রিকশাচালক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে ঠিকমতো পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারি না। ইচ্ছে থাকলেও মাসে একবার বিরিয়ানি খাওয়া হয় না। এই মসজিদে বিনামূল্যে প্রতিদিন বিরিয়ানি দেওয়া হয়। তাই সারা দিন রোজা রেখে মসজিদে চলে আসি।’
মসজিদের ইমাম মুফতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে ইফতার করেন। এমন দৃশ্য দেখতেও ভালো লাগে। প্রতিবছর রমজানে এভাবেই ইফতার আয়োজন করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী মণ্ডল বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অপরিচিত বহু মানুষ মসজিদে ইফতার করতে বসেন। এ ছাড়া ইফতারের সময় হলে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজনকে ডেকে এনে খাওয়ানো হয়। কেউ কাউকে চেনেন না। অথচ পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন। সবার পরিচয় একটাই, তারা সবাই রোজাদার মুসল্লি। প্রতিবছর এরকম ইফতার আয়োজন করা হবে।’