
নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রয়োজনীয় পানির জন্য আর অন্যের বাড়িতে ধরনা দিতে হবে না সুমিয়া (৪৫), হাসিবুন (৪৭) আর আজিয়া বেগমকে (৫২)।
গোসলের জন্য দূরে যেতে হবে না ওই এলাকার পুরুষদেরও। পবিত্র শবেবরাত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবং ওই এলাকার মৃত্য ব্যক্তিদের ইসালে সওয়াবের নিয়তে ‘ভালোবাসার টিউবওয়েল’ স্থাপন করে দিয়েছে ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পরোপকারই হলো সেরা উপহার- এই বিশ্বাসে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এভাবেই ফুল উপহার দেওয়া-নেওয়ার চিরাচরিত ধারণাকে পাল্টে দিয়ে যেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন, সেখানে টিউবওয়েল স্থাপন করে সংগঠনটি উদযাপন করেছে এক ব্যতিক্রমী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গত শুক্রবার শহরের গোলাহাট এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন শেষে গতকাল শনিবার সকালে উপকারভোগীদের আনন্দঘন উপস্থিতিতেই উন্মুক্ত করা হয় ওই ভালোবাসার টিউবওয়েল।
বিধবা আজিয়া বেগম বলেন, ‘রাতে পানির প্রয়োজন হলে মাঝে মাঝে অনেক সমস্যায় পড়তাম। রাতে অন্যের বাড়িতেও যেতে পারতাম না। বাড়ির সামনে এখন টিউবওয়েল স্থাপন করায় আর কোনো সমস্যা হবে না। যারা এই পবিত্র কাজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাদের খুব ভালো রাখুন।’
সুমিয়া, নাজমুনসহ অন্য উপকারভোগীরা বলেন, ‘গোসলের জন্য মানুষের বাড়ি থেকে পানি আনতে হতো। অনেক সময় ওই বাড়ির লোকজন টিউবওয়েলে থাকায় সময়মতো পানিও পাইতাম না। এভাবে চলছিল কয়েক পরিবারের কষ্টের দিন। কিন্তু আর মানুষের বাসায় পানির জন্য যেতে হবে না। এখন বাড়ির সামনেই টিউবওয়েল থেকে যখন খুশি পানি পাচ্ছি। যতদিন পানি ব্যবহার করব, ততদিন যারা লাগিয়ে দিয়েছে তাদের জন্য দোয়া করে যাব।’ ওই এলাকার আজহার, আইনুলসহ অন্যরা বলেন, এখন এখানেই গোসল করতে পারব আর দূরে যেতে হবে না, আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের উপদেষ্টা নওশাদ আনসারী বলেন, ‘আসলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ প্রকৃত অর্থে কাদের জন্য হওয়া উচিত সেটা বোঝানোর জন্যই যেখানে বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন, সেখানে টিউবওয়েল স্থাপন করেছি আমরা। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারে টিউবওয়েল ছিল না। তা ছাড়া পানির ব্যবস্থা করা অতি সওয়াবের কাজ। এই এলাকার সব মরহুম-মরহুমার ইসালে সওয়াবের নিয়তেই আমরা এই টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি।’
সংগঠনের নওশাদ আনসারী, সামিউল, জীবন, সাজু, রাজাসহ অন্যরা বলেন, “আমরা প্রতিবছর ভালোবাসা দিবসে গরিব, অসহায়সহ অন্যের উপকারে আসে এমন কর্মসূচি করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় এই এলাকায় টিউবওয়েলের প্রয়োজন ছিল বলে আমরা স্থাপন করে দিয়েছি।
আর্তমানবতার সেবায় ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ এরূপ সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
এ সময় সংগঠনের আয়ান, রাব্বি, সামির, শাহজাদা, ফারুক, সোহাগ, শাহবাজ, ইয়াসিনসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।