
ফরিদপুরের আটরশি দরবার শরিফে চলছে এলাহি কাণ্ডকারখানা। এখানে একবারে দুই হাজার চুলায় চলছে পাঁচ লাখ মানুষের খাবার রান্না। যে কেউ এখানে এসে শুধু অবাকই হবেন না, বিষয়টি দেখে তারা তাজ্জব বনে যেতে পারেন।
আর এমন পরিস্থিতি দেখে দরবার শরিফে আসা আগত ভক্তরা বলছেন, আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এমন রান্নার ব্যবস্থা সারাদেশে আর কোথাও একটিও নেই। হুজুরের অশেষ মেহেরবানিতে হাজার হাজার মানুষ এখানে কাজ করছেন। কোথায় থেকে কে কিভাবে এসে কাজ করছেন কারও বলার উপায় নেই। যে যার মতন তার দায়িত্ব পালন করছেন খুব নিয়মের মধ্য দিয়ে।
জানা যায়, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী ওরস। দেশ-বিদেশের লাখো ভক্ত সমবেত হয়েছেন। দুই হাজার চুলায় ভক্তদের খাবারের জন্য ২৪ ঘণ্টা চলছে রান্না। রান্নার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। প্রতি ঘণ্টায় রান্না করা হচ্ছে ৫ লাখ মানুষের খাবার। এখানে সারি সারি সাজানো চুলা, চলছে রান্না। বিশাল রান্নার নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে দুই হাজার চুলা জ্বলছে একযোগে। স্বেচ্ছাসেবকরা কেউ ভাত, কেউ ডাল কেউবা মাংস রান্না করছেন।
গত শুক্রবার দুপুর থেকে রান্নার আয়োজন শুরু হয়েছে। একনাগাড়ে চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ আয়োজন। প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ লাখ নারী-পুরুষ ভক্তের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, আলু দিয়ে ডালের লাবড়া, গরু, খাসি, মুরগি ও দুম্বার মাংস। মুসলমান সম্প্রদায়ের ভক্তরা ছাড়াও হিন্দু ধর্মের মানুষের জন্য রয়েছে আলাদা রান্নার আয়োজন।
রান্নার পর সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে খাবার। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে ভক্তরা মাটির প্লেটে নিচ্ছেন তাদের খাবার। খাওয়া শেষে মাটির প্লেট ধুয়ে রাখছেন নির্দিষ্ট জায়গায়। এত ভক্তের সমাগম হলেও নেই কোনো বিশৃঙ্খলা।
ওরসে রান্নার কাজে নিয়োজিত নাছির বলেন, 'হুজুর আব্বা বেঁচে থাকতে এখানকার পাকশালায় ওরসের সময় রান্না করতেন আমার আব্বা। আব্বা মারা যাওয়ার পর আমি এই দায়িত্ব পালন করছি। দীর্ঘদিন ধরে ওরসের চার দিন রান্না করে থাকি। শুধু আমি নই, এখানে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন যারা রান্নার কাজে নিয়োজিত। দুই হাজার চুলায় রান্না করা হয়ে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ লাখ ভক্তের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ২৪ ঘণ্টাই এখানে রান্না করা হয়।'
নাজমুল হাসান নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, 'ওলি আল্লাহদের খেদমতে মনের ময়লা দূর হয়, নবির মহব্বত সৃষ্টি হয়। এই মহব্বত পাওয়ার জন্যই দরবার শরিফে হাজারো মানুষ খেদমত করে থাকি আমরা।'
ওরস উপলক্ষে কয়েক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে বিভিন্ন যানবাহনে চেপে আশেকান ও জাকেরানরা সমবেত হয়েছেন। ওরসে আসা সবার জন্য তবারকের পাশাপাশি রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। প্রতিদিন ফরজ আমলের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, জিকির-আজকার মোরাকাবা ওয়াজ নসিহত ও সুন্নত ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত চলছে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, গত শনিবার ফজর নামাজের পর ফাতেহা শরিফ পাঠ ও তরিকতের আমল পালনের মধ্য দিয়ে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ফরজ আমলের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, মোরাকাবা-মোশাহেদা, ওয়াজ নসিহত, ওয়াজ মাহফিল এবং সুন্নাত এবাদতের পাশাপাশি নফল এবাদত চলছে। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ওরসে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক ভক্ত-মুরিদান অংশ নিয়েছেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বৃহত্তর ফরিদপুরের কর্মীপ্রধান মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও লাখো আশেকান-জাকেরান, ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা বিশ্ব দরবার শরিফে উপস্থিত হয়েছেন। ওরসে আসা সবার জন্য তবারকের ব্যবস্থা, রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা ও বিভিন্ন যানবাহন পার্কিংয়ের জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।
এদিকে মঙ্গলবার ফজর নামাজের পর শাহসুফি ফরিদপুরী (কু ছে আ) রওজা জিয়ারত করা হবে। এর পর বিশ্ব শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে চার দিনের এই ওরস শরিফ।
সঞ্জিব দাস/জোবাইদা/