হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাস। ছবি: খবরের কাগজ
দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক এসআই ও দুই কনস্টেবলকে ক্লোজড এবং ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টায় এই তথ্য জানিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বদরগঞ্জ থানায় সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় থানার এএসআই রবিউল আলম (এবি-৩৮১), কনস্টেবল আলামিন হোসেন (৯৯৪) ও মজিবুর রহমানকে (৬৩০) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দ্বায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে থানা ক্যাম্পাসে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যকার হট্রগোলের ছবি তুলতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধর করেন। পরে চ্যাংদোলা করে ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধর করে। ছিৎড়ে ফেলা হয় গায়ে থাকা শার্ট। এরপর তাকে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর অভিযুক্তদের সঙ্গে মিমাংসা করে দেওয়ার নাটক করেন ওসি। পরে সহকর্মীরা সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।
মারধরের শিকার সাংবাদিক এম এ সালাম জানান, থানার প্রধান ফটকের সামনে শহিদ মেনাজ সংঘ পাঠাগারে বসে আমি নিউজ লিখতেছিলাম। এসময় বাইরে শব্দ শুনি গন্ডগোলের। ক্লাব থেকে থেকে বের হয়ে দেখি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে ২ জন পুলিশ এবং বাইকে দুইজন পুলিশ নিজেদের মধ্যে উচ্চবাচ্চ এবং হট্রগলো করছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই আমি আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকি। এসময় মোটরসাইকেলে থাকা এএসআই রবিউল আমার মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ কেড়ে নেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে বাইকে থাকা দুইজনের সঙ্গে পিআপ ভ্যানে থাকা দুইজন নেমে আমাকে ব্যাপক মারধর করে। এসময় সেখানে বহু মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা চারজন মিলে আমাকে চ্যাংদোলা করে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে ওসির সামনে ফেলে দিয়ে লাথি মারে।
সালাম জানান, আমি রোজা থাকায় শরীর খুব দুর্বল ছিল। আমি পুলিশকে অনুরোধ করি আমার ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাকে তার রুমে নিয়ে যান এবং প্রায় ৪ ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখেন। আমার পরণের ছিন্নভিন্ন শার্ট আমাকে না নিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনে এনে আমাকে পড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমার কিছু সহকর্মী সেখানে আসলে ওসি সাহেব অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিয়ে মিমাংসার করে দেওয়ার কথা বলেন। এসময় আমি ওসি সাহেবকে বলি আমি আপনাকে একটা চড় মারি এবং পরে আপনার কাছে মাফ চাই তাহলেই কী সব হয়ে যাবে। এরপর সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার জানান, তার পায়ে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পায়ের জন্য একটা এক্সরে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
বদরগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। ‘
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান জানান, ‘এটি জঘন্যতম অপরাধ করেছে পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে হট্টগোলে জড়াবে। আর ছবি তুললে তাদের অসুবিধা হবে। এটা মেনে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। এ ব্যপারে তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে কখনই কোনো পুলিশ সদস্য এ ধরনের অপরাধে না জড়ান।
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল জানান, পুলিশ সাংবাদিক সালামকে পিটিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন এবং এটা খবুই এলার্মিং বিষয়। যা সাংবাদিক সমাজ কখনই কোনোভাবে বরদাশত করবে না। শুধু ক্লোজড করেই যদি পুলিশ মনে করেন ঘটনার সমাধান হয়েছে। সেটা বুমেড়াং হবে। আমরা দেখতে চাই এ ঘটনার যথাযথ আইনানুগ এ্যাকশন। তিনি জানান, পুরো ঘটনার সময় থানার ওসি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয দিয়েছেন। তার ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।
সেলিম সরকার/মাহফুজ