
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবকে একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি না করায় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে অবরুদ্ধ করেন ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারকে সভাপতি করার জন্য চাপ দেন। পাশাপাশি ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তারা টেবিল চাপড়াতে থাকেন। খবর পেয়ে বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গেলে তারা ঘটনা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
বরিশাল বোর্ড সূত্র জানায়, সম্প্রতি বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করার জন্য বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী রোকেয়া সালাম এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের নাম প্রস্তাব করা হয়।
সে অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার যাচাই-বাছাই শেষে ওই তালিকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। বিভাগীয় কমিশনারের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা বোর্ড একজনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে। সেই অনুযায়ী রোকেয়া সালামের নাম তালিকার ১ নম্বরে থাকায় কর্তৃপক্ষ সভাপতি হিসেবে রোকেয়া সালামকে মনোনীত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিয়াউদ্দিন সিকদার অনুসারী ১৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার তুষার ও আরেক ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস তালুকদারের নেতৃত্বে বিএনপির একদল নেতা-কর্মী সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীর কক্ষের সামনে জড়ো হন। এ সময়ে তারা সেখানে হট্টগোল করে বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢোকেন। তারা জিয়া উদ্দিন সিকদারকে এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় ১ নম্বরে রাখা হয়নি কেন, সেটা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান।
বোর্ডের সহকারী সচিব ও মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ওয়াহেদ বিদ্যালয়ে প্রস্তাবিত কমিটির ১ নম্বরে যার নাম রাখা হয়েছে তিনি ফ্যাসিস্টদের দোসর। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে ফ্যাসিস্ট কাউকে কমিটিতে রাখা যাবে না বলে জানান। এ সময়ে তারা জিয়া সিকদারকে কমিটিতে রাখতে বলেছেন। এতে বোর্ড চেয়ারম্যান অপারাগত প্রকাশ করায় ছাত্রদল নেতারা তার সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন।’
১৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার তুষার জানান, তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করা হয়েছে, হুমকি বা অশোভন আচরণ করা হয়েছে, এমনটা তিনি দেখেননি।
ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। এ সময়ে আমরা জিয়া ভাইকে স্কুলের কমিটিতে রাখার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে যাকে সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি ফ্যাসিস্ট। এতে দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের বিষয়টি জানতে গিয়েছিল বলে শুনেছি। তবে চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করছে কি না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই। সেখানে যারা গিয়েছিলেন তাদের আমি ঠিকমতো চিনি না।’
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কে আহ্বায়ক বা সভাপতি হবেন, তা বিভাগীয় কমিশনার নির্ধারণ করে তালিকা পাঠান। ওই তালিকায় ১ নম্বরে রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের স্ত্রীকে। এখানে আমাদের হাতে কিছুই নেই।’