
সিলেটের চা বাগানের নারী শ্রমিকদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে করনীয় নিয়ে সভা করেছে এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (একডো)। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ নির্ভানা ইন হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় চা বাগান মালিক পক্ষ, চা শ্রমিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফামের অর্থায়নে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় চা শ্রমিকরা নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। বিশেষ করে নারী চা শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সমস্যাগুলোর মধ্যে চা বাগানে স্যানিটেশন সুবিধা না থাকা, বাচ্চা রাখার জন্য ডে কেয়ার সেন্টার না থাকা, গর্ভকালীন ছুটি কম পাওয়া, স্বল্প ও বকেয়া মজুরির সমস্যা নিয়ে বিস্তর বর্ণনা দেন চা শ্রমিকরা।
হিলুয়াছড়া চা বাগানের সর্দার রাধামনি বলেন, ‘আমার অধীনে চা বাগানে পাতা তুলে প্রায় ২০০ নারী। তাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী তারা অনেক সময় নির্ধারিত পাতা তুলতে পারেন না। নির্ধারিত পাতা না তুললে বাবুরা হাজিরা নেয় না। এরকম হরহামেশাই হয়। বাগানের সেকশনে কোনো ল্যাট্রিন নেই। তাই প্রস্রাব করার সুবিধা পর্যন্ত নেই আমাদের।’
আলোচনায় অংশ নেওয়া নারী চা শ্রমিকরা। ছবি: খবরের কাগজ
চা শ্রমিকদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে সভায় উপস্থিত চা বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষও। লাক্কাতুরা চা বাগানের অ্যাসিসেন্ট ম্যানেজার নূর মোহাম্মাদ ফারুকি সিয়াম বলেন, চা শ্রমিকদের নানা সমস্যা আছে আমরা জানি। আমরা চেষ্টা করি তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার। কিন্তু নানা কারণে সব সমস্যা সমাধান করা যায় না। ৫ আগস্টের পর থেকে চা বাগানগুলো লোকসানে আছে। পাতা বিক্রি করতে পারছি না। যা বিক্রি হচ্ছে সেটাও খুব নগণ্য দামে। ব্যাংক থেকে লোন দিচ্ছে না। আমরা সব্বোচ্চ চেষ্টা করছি চা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার। আশা করি মাস দুয়েকের মধ্যে বেতনের সমস্যা আর থাকবে না।
মালিনীছড়া চা বাগানের অ্যাসিসেন্ট ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চা শ্রমিকদের সমস্যাগুলো শুধু আমাদের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন এনজিও আছে তাদেরকেও কাজ করতে হবে। চা শ্রমিকদের সমস্যাগুলো নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছাতে মিডিয়া, এনজিওসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে।
একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, লাক্কাতুরা চা বাগানের অ্যাসিসেন্ট ম্যানেজার নূর মোহাম্মাদ ফারুকি সিয়াম, মালিনীছড়া চা বাগানের অ্যাসিসেন্ট ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. জায়েদা শারমিন।
শাকিলা ববি/মাহফুজ