ঢাকা ৬ বৈশাখ ১৪৩২, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
English

সোনারগাঁয়ে শিশু ধর্ষণ ভূক্তভোগীকে সহযোগিতা করায় ৩ জনকে ফাঁসানোর অভিযোগ

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
ভূক্তভোগীকে সহযোগিতা করায় ৩ জনকে ফাঁসানোর অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করে ভু্ক্তভোগীর পরিবার। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ১০ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। 

গত বছরের ২৭ জুন ওই শিশুর খালা তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে অভিযুক্ত মারুফকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। ভূক্তভোগী পরিবারকে সহযোগিতা করা ইউপি সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠেছে। তবে ওই শিশুর মা জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বাবা পুলিশের সোর্স মাসুম মিয়া হত্যার হুমকি দিয়ে তার মেয়েকে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করে। 

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উদ্ভবগঞ্জ এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগীর মা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় মামলার বাদী তানিয়া আক্তার ও ভূক্তভোগী শিশুসহ আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া গ্রামে তার মেয়ের মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। গত বছরের ২৫ জুন মঙ্গলবার রাত ১০টায় পাশ্ববর্তী মুদি দোকানে খাবার কিনতে যাওয়ার পথে ওই এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে মারুফ (১৮) ওই শিশুর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক পাশ্ববর্তী একটি গ্যারেজে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে বিচার দাবি করে না পেয়ে দু’দিন পর ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ভূক্তভোগী শিশুর খালা তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে অভিযুক্ত মারুফকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই শিশুকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। দীর্ঘ ৮ মাস পর গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ওই শিশুর ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট সোনারগাঁ থানায় আসে। ওই রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। 

এদিকে ভূক্তভোগী শিশুকে সহযোগিতার করায় অভিযুক্তের বাবা মাসুম মিয়া আদালতে শিশুকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুম মিয়া, সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া ও বিল্লাল হোসেন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করে। পরে আদালতে ২২ধারা জবানবন্দি রেকর্ড করে। গত ৩০ জুন রবিবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

মামলার বাদী ভূক্তভোগী ওই শিশুর খালা তানিয়া আক্তার জানান, তার ভাগ্নিকে হত্যার হুমকি দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে ফাঁসিয়েছে। মারুফ অপরাধী। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। 

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান বলেন, পুলিশের তদন্ত ও ডাক্তারী পরীক্ষার আলমতের ভিত্তিতে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হবে। কেউ অপরাধ ঢাকতে পারবে না। 

ইমরান হোসেন/মাহফুজ

 

বাঘাইছড়ি  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের অভাবে ১ মাসের শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৬ এএম
বাঘাইছড়ি  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের অভাবে  ১ মাসের শিশুর মৃত্যু
মৃত শিশুকে কোলে নিয়ে কান্না করছেন মা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের অভাবে এক মাসের এক শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় রিমলি চাকমা নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে অভিযোগ নাকচ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি,  হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে  এ ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন  জেলা সিভিল সার্জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল বলে জানান চিকিৎসকরা।

শিশুটির বাবা রিটন চাকমা বলেন, ‘হাসপাতালে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় যথাসময়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি।’ 

এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশীষ বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ১০টায় রিমলি নামে নিউমোনিয়া আক্রান্ত একটি শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে দেখি, শিশুর নার্ভস বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। আমরা ৫ মিনিট শিশুটিকে সিপিআর দিই। তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। আমাদের এখানে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি ছিল না।’

অক্সিজেনের অভাবে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট রয়েছে। ১৬ ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র চারজন। তারাও ঠিক মতো উপস্থিত থাকেন না। একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স আছে, সেটিও নষ্ট। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না।’

এ বিষয়ে রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘আমাদের কাছে ইতোমধ্যে শিশু মৃত্যুর অভিযোগটি এসেছে। অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুটিকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তবুও কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে সিপিআর দিয়েছেন। তবে ঘটনা যাই হোক, বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করতে পাঠাব।’

নবীনগরের কুড়িঘর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০ এএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৮ এএম
নবীনগরের কুড়িঘর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কুড়িঘর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ‘লাঠির ছন্দে শপথ করি, মাদক ছাড়া জীবন গড়ি’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে  কুড়িঘর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই ক্রীড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

কুড়িঘর গ্রামবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিকুল হক। খেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আলম সোরাফ, আনন্দ টিভির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবু কাউছার, বাংলা টিভি প্রতিনিধি ও নবীনগর টিভির বার্তা সম্পাদক পিয়াল হাসান রিয়াজ, কুড়িঘর উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান, নবীনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহিন, নাটঘর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হানিফ মোল্লা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এদিকে বেলা ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই লাঠিখেলা উপভোগ করতে নাটঘর ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারও ক্রীড়ামোদী দর্শক মাঠে ভিড় জমান। ঢাকঢোল আর সানাইয়ের বাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে লাঠিয়ালরা বাঙালি সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলেন। এরপর শুরু হয় লাঠির মূল কসরত। প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা এবং পাল্টা আক্রমণের মুহুর্মুহু দৃশ্য দর্শকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। দর্শকদের করতালি আর চিৎকারে পুরো মাঠ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। কুড়িঘর গ্রামের একটি দক্ষ লাঠিয়াল বাহিনী বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের মনোমুগ্ধকর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে।

কুড়িঘর গ্রামবাসীর সার্বিক আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই লাঠিখেলা একদিকে যেমন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করছে, অন্যদিকে তেমনি তরুণ সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে দূরে রেখে সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আয়োজকরা প্রত্যাশা করেন।

লাঠিখেলার আয়োজক খলিফা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে খেলাটি ধরে রেখেছি। যতদিন বেঁচে আছি, খেলাটি চালিয়ে যাব। তবে খেলায় এখন খরচ বেশি।’

শ্যামনগরের মাদার নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে কয়েক হাজার পরিবার

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৫ এএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০ এএম
শ্যামনগরের মাদার নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে কয়েক হাজার পরিবার
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মাদার নদীর শেখবাড়ি এলাকার ভেটখালী-টেংরাখালী সড়ক ভাঙনে ধসে পড়ছে। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মাদার নদীর ভাঙনে উপকূল রক্ষাবাঁধটির একটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত গাইড বাঁধ ও ব্লক দিয়ে ভাঙন রোধ করতে হবে। এদিকে ভাঙন সংস্কার না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পরস্পর একে অন্যকে দোষারোপ করছে। 

উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের ভেটখালী, শেখবাড়ি, টেংরাখালী, কালিঞ্চী, গোলাখালী, যতীন্দ্রনগর, পারশেখালী ও মীরগাং গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। বর্ষার আগে ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে ওই এলাকার সুপেয় পানির একমাত্র উৎস শেখবাড়ি দিঘি, শেখবাড়ি জামে মসজিদ-মাদ্রাসাটি বিলীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ভেটখালী কোস্টগার্ড অফিসের সামনে থেকে টেংরাখালী স্লুইসগেট পর্যন্ত সড়কের শেখবাড়ি এলাকার কয়েকটি অংশে ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হায়দারের বাড়িসংলগ্ন সড়কটি মাদার নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পাউবো ভাঙন অংশে জিও ব্যাগ ও জিও ফিল্টার দিয়ে বাঁধরক্ষার চেষ্টা করে আসছে।

গত রবিবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে ‘নদীভাঙন ঠেকাও, রমজাননগরবাসীকে বাঁচাও’ এই দাবি নিয়ে নদীর তীরে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে স্থানীয়রা অংশ নেন। ভেটখালীর শেখবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, ‘এই নদীতে অনেকের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। অনেকে জায়গা-জমি হারিয়ে এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এখন চলাচলের একমাত্র সড়কটি নদীতে চলে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হলে আগামী বর্ষায় হয়তো সড়কটি নদীতে চলে যাবে। নদীর তীরবর্তী হাজারও পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে আছি।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রউফ বলেন, ‘এখানে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। যেভাবে রাস্তা ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে, ব্লক দিয়ে দ্রুত মেরামত না করলে যেকোনো সময় আমাদের এলাকা নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হামিদ লাল্টু জানান, এ সড়কটি রমজাননগর ও মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র পথ। সাবেক চেয়ারম্যান আলম শেখের বাড়ির সামনের অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গত বছর পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দিলেও নদীভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণ করেনি। তাই রাস্তার ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে ভাঙন এলাকা সংস্কার না করে পাউবো ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এ রাস্তাটি এলজিইডির আওতাধীন তাই সংস্কারের দায়িত্ব তাদের। আর এলজিইডি বলছে, নদীভাঙনের কারণে সড়কটি ভেঙে গেছে। এটা পাউবোর বেড়িবাঁধ, তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব মাদার নদীর ওই অংশের পাইলিংয়ের কাজ করা। তাহলে সড়কটিকে রক্ষা করা যাবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের-১-এর উপসহকারী প্রকৌশলী (ভেটখালী পওর শাখা) প্রিন্স রেজা বলেন, ‘রমজাননগরের ভেটখালী শেখবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে শুনেছি। আমরা নদীগুলোর ভাঙন এলাকার খোঁজখবর নিয়ে সেখানে জিও ফিল্টার স্থাপন করেছি। এ ছাড়া বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে জানিয়েছি। তবে যেহেতু এ রাস্তাটি এলজিইডির, তাই সংস্কারের দায়িত্ব তাদের।’

এ ব্যাপারে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘রমজাননগরের ভেটখালী শেখবাড়ি এলাকায় মাদার নদী তীরের সড়কে ভাঙনের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখব। যদি না হয়, তাহলে অন্য দপ্তরের সহযোগিতা চাওয়া হবে। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ, তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব নদীর ওই অংশের পাইলিংয়ের কাজ করা। তাহলে সড়কটিকে রক্ষা করা যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি আমি জেনেছি। ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিনুরের মরদেহ হস্তান্তর

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম
বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিনুরের মরদেহ হস্তান্তর
ছবি: খবরের কাগজ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক হাসিনুর রহমানের (২৫) মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলার খারিজা জোংড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক শেষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৮১ নম্বর ও উপপিলার ১৩ এর ভারতের কোচবিহার জেলার থানার শীতলকুচি থানার সীমান্ত ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের খারিজা জোংড়া সীমান্তবর্তী স্থান দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়। 

এ-সময় ভারতের ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মহেশমারী ক্যাম্পের কমান্ডার রাজ কুমার, শীতলকুচি থানার ওসি ও বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের খারিজা জোংড়া ক্যাম্পের প্রতিনিধি সুবেদার রেজাউল ইসলাম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাজরুল ইসলাম এবং নিহত যুবকের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও চাচা রশিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

রাতে মরদেহ হস্তান্তরের পর তা গ্রামে পৌঁছালে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। স্বজনদের আহাজারি আর কান্নার রোলে ভারী হয়ে ওঠে রাতের নিস্তব্ধতা। মৃত হাসিনুর রহমান হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম ডাওয়াবাড়ী এলাকার মছলে উদ্দিনের ছেলে। এর আগে সন্ধ্যায় এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে হাসিনুর রহমানসহ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক হাতীবান্ধা সীমান্তের ৮৯৪ নম্বর প্রধান পিলারের ৬ এস সাব-পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠেছে, এ সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার শীতলকুচি থানার নগর সিঙ্গিমারী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ঘাস কাটতে থাকা বাংলাদেশিদের ধাওয়া করে এবং গুলি ছোঁড়ে। এতে হাসিনুর গুলিবিদ্ধ হলে বিএসএফ তাকে ধরে ভারতে নিয়ে যায়। পরে কোচবিহার জেলার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিন মরদেহ ফেরত পেতে অপেক্ষা ও উদ্বেগের প্রহর কাটে হাসিনুরের পরিবারের। বুধবার বিকেলে প্রথম পতাকা বৈঠকে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে মরদেহ ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিএসএফ তা পালন করেনি। বিজিবির পুনঃপ্রতিবাদ ও যোগাযোগের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় পতাকা বৈঠক শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুজ্জামান সরকার বলেন, ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ বাংলাদেশের পুলিশ এবং বিজিবির নিকট মরদেহ হস্তান্তর করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাতই লাশ নিহতের বাবা এবং চাচাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন নবী বলেন, মরদেহ হস্তান্তরের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসিনুরের নিথর দেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কফিনবন্দী সন্তানের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনুরের বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনেরা। তাদের আহাজারিতে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পুরো গ্রামবাসী সমবেদনা জানাতে ভিড় করেন। এই শোকাতুর পরিবেশেই রাত প্রায় ১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এ ব্যাপারে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৬১ ব্যাটালিয়ন (তিস্তা-২) এর সংশ্লিষ্ট বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে উনারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এম আই বকুল/মাহফুজ

 

সরকারি খাদ্য গুদামে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় ফুলবাড়ীর ৪০ চালকল মিলের নিবন্ধন বাতিল

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
সরকারি খাদ্য গুদামে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় ফুলবাড়ীর ৪০ চালকল মিলের নিবন্ধন বাতিল
ছবি: খবরের কাগজ

আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায়, শর্ত ভঙ্গের কারণে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০টি চালকল মিলের নিবন্ধন বাতিল করেছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জেলা খাদ্য বিভাগের দিনাজপুর খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে নিবন্ধন বাতিল করা চালকলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি বলে জানিয়েছেন নিবন্ধন বাতিল হওয়া চালকল মালিকরা। একাধিকবার তাগিদ দিয়েও তাদের চুক্তির আওতায় আনা যায়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।

জানা গেছে, উপজেলার ৯৯টি নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে ১০টি অটো চালকল ও ৮৯টি হাসকিং চালকল রয়েছে। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান, ৪৭ টাকা কেজিতে সেদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজিতে আতপ চালের দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা শুরু থেকেই খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। এরপরও খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন রক্ষার জন্য ৫৯টি চালকলের মালিকরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মেসার্স আফতার হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী আফতার আলী বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে ৫০ টাকার বেশি খরচ হয়। এরপরও শুধু চুক্তি থাকার কারণে তিনি লোকসান দিয়ে খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। সরকার চাইলে প্রণোদনার মাধ্যমে আমাদের এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে পারে।

চুক্তির বাইরে থাকা একাধিক চালকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারেই চালের দাম অনেক বেশি। তাই আমরা চুক্তি করিনি। চুক্তি করলে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। এতে ব্যবসার মূলধনই হারিয়ে যেত। চুক্তির বাইরে থাকা শাহ হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুমও একই কথা বলেন। 

পৌর এলাকার হাসান রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক বলেন, এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে চালের দাম অনেক বেশি ছিল। তাই অনেকে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই চাল সরবরাহ করি। তবে এ বছর অসুস্থতার কারণে চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি। আমার চিকিৎসাজনিত প্রমাণপত্র খাদ্য বিভাগে জমা দিয়েছিলাম। এরপরও নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, এটি খুবই দুঃখজনক।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমন মৌসুমে উপজেলার ৪০টি চালকলের মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেননি। শর্ত ভঙ্গ করায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

সুলতান মাহমুদ/মাহফুজ