
সিরাজগঞ্জ বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ট্রানজিট পাসের নামে ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগ উঠেছে। জেলার কাঠ-ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকদের অভিযোগ, মহাসড়কে চলাচলকারী ফার্নিচারভর্তি গাড়ি থেকে ট্রানজিট পাসের (টিপি) নামে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। অথচ টাকা নেওয়ার সরকারি কোনো নিয়ম নেই। টাকা না দিলে নানা বাহানায় তাদের গাড়ি আটকে রাখা হয়। এতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শুধু সিরাজগঞ্জেই নয়, টাঙ্গাইলেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের নির্দেশে কর্মচারী (বোটম্যান) আলতাব হোসেন ও তার ছেলে প্রান্ত সরকার সদর উপজেলার কাঠেরপুল, কাজীপুর মোড়, বাজার স্টেশন, ফকিরতোলাসহ কয়েকটি সড়ক থেকে বন বিভাগের অনুমোদনপত্রের নামে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কাঠের ফার্নিচার নিতে বন বিভাগ থেকে ট্রানজিট পাস (টিপি) নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে কোনো ফি দেওয়ার নিয়ম নেই। অথচ টিপির নাম করে দুই বাপ-ছেলে চালকদের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। টাকা না দিলে জরিমানা দেওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে চালক ও ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দিয়ে ফার্নিচার পরিবহন করছেন।
এ বিষয়ে গাড়িচালক আসমত আলী বলেন, ‘আলতাব হোসেন টিপি দেওয়ার নামে প্রতি ট্রাক থেকে ৮০০ টাকা নেন। তিনি না এলে টিপির স্লিপ লিখে তার ছেলে প্রান্তকে টাকা নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেন। যদি টাকা না দেওয়া হয়, তা হলে মালামাল বাজেয়াপ্ত ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।’
কাঠ ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, ‘ট্রানজিট পাসে সিরাজগঞ্জে বন বিভাগ নেয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এখানে না নিলে টাঙ্গইলে বন বিভাগকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। আবার গাজীপুরে দিতে হয় ৬০০ টাকা। আমাদের এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া খুব প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বন বিভাগের কর্মচারী (বোটম্যান) আলতাব হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমার ছেলে প্রান্ত গাড়িতে টিপি দেয়। তবে টাকা নেয় না। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। সিরাজগঞ্জ বন বিভাগের যে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন, তিনি এ বিষয়ে সবই জানেন। আপনি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।’
আলতাব হোসেনের ছেলে প্রান্ত সরকার বলেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ থাকায় অফিসের নির্দেশে আমি টিপির স্লিপগুলো ট্রাক ড্রাইভারদের কাছে পৌঁছে দেই। গত জানুয়ারি থেকে এ কাজ করে আসছি। টাকার হিসাব আমি দিতে পারব না।’
সিরাজগঞ্জ সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মের বাইরে শুধু মোবাইলে কল পেলেই সেই অনুযায়ী ট্রানজিট পাস প্রস্তুত করা হয়। আলতাব বা তার ছেলে প্রান্তর মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ করা হয়। তবে তারা টাকা নেন না।’
অন্যদিকে টাঙ্গাইলের ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের যমুনা সেতু মহাসড়কের আগবিক্রমহাটি ও মির্জাপুরে গোড়াই-সখীপুর সড়কের বাঁশতৈল তালতলা এলাকায় বন বিভাগের কর্মচারীরা চেকিংয়ের নামে যানবাহন থেকে টাকা তুলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তার সহযোগিতায় রেঞ্জ অফিসের সামনে বাঁশতৈল সদর বিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন কাঠ চেকিংয়ের নামে চাঁদা তোলেন। তাদের সহযোগিতা করছেন বাঁশতৈল নয়াপাড়া গ্রামের মোস্তফা মিয়া।
টমটমচালক ফারুক মিয়া জানান, প্রতি মঙ্গলবার গাছ নিয়ে হাঁটুভাঙ্গা হাটে যাওয়ার সময় তালতলা এলাকায় বন বিভাগের লোকদের ২০০ টাকা দিতে হয়। টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে আসা ট্রাকচালক আজাহার মিয়া জানান, গোড়াই-সখীপুর সড়কের তালতলা এলাকায় চেকপোস্টে ৫০০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে মামলার ভয় দেখানো হয়। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চল থেকে কাঠবাহী কোনো ট্রাক এলে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ১ থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, হাঁটুভাঙ্গা ও আগবিক্রমহাটি এলাকায় বন বিভাগের চেকপোস্ট রয়েছে। তবে কোনো টাকা লেনদেন হয় না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।