
মেহেরপুরে ৯ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়ে বাদীকে ব্লাকমেইল করে। প্রতিকার চেয়ে বাদী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশের এক এসআই অভিযুক্ত ধর্ষককে বাঁচাতে পক্ষপাত্বি করেছেন। এ অভিযোগে থানা ঘেরায় করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে সদর থানায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে মদনাডাঙ্গা গ্রামের বায়েজিদ নামের এক যুবক। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে বায়েজিদ সঙ্গীয় আলামিন হোসেন। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে গেল ৯ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ, আলামিন ও বরকত আলীর নামে মেহেরপুর আদালতে ধর্ষণ মামলা করেন। আসামিরা গ্রেপ্তারের কয়েক মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দিয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে বলে আসামিরা। এতে বাদী প্রতিকার চেয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার এসআই সুজয় কুমার উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এ সময় এসআই সুজয় কুমার ধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষ থেকে বাদীকে চাপ দিতে থাকেন। খবর পেয়ে থানায় গিয়ে প্রতিবাদ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতা।
এ ঘটনায় পুলিশের লাঠি পেটায় আহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী তুষার ও সিয়াম। তাদের অভিযোগ, ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীদের বিচার চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই তাদেরকে লাঠিপেটা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেন। এসআই সুজয় কুমার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে থানা ও থানার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা।
এদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তখন মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে তাদের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে বাইজিদ ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন জনের মুঠোফোনে। বাইজিদসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন ধর্ষিতার মা। এই মামলায় সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে এসে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায় করে পরিবারের কাছ থেকে। গেল রবিবার রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আবারও পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিলে থানায় জানান বিষয়টি। বৃহস্পতিবার রাতে উভয় পক্ষকে নিয়ে সদর থানায় বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। এ সময় দুই পক্ষই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আনতে চেষ্টা করে পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, পুলিশ ধর্ষকের পক্ষ হয়ে এক সময় ছাত্র-জনতার ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী সিয়াম ও তুষার আলতুফান আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী সাধারণ জনতা থানা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। ঘটনার একপর্যায়ে তারা থানার মূল ফটোকে তালা লাগিয়ে দেয়। পুরো থানা চত্বর ঘিরে রাখে। দাবি তোলেন অভিযুক্ত হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির। এ ছাড়াও ধর্ষণকারী বাইজিদ ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রাত ১০টার পর ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার মাহমুদা আক্তার খানম। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘোষণা দেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে গেল রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর থানা পুলিশের এক সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং ধর্ষক ও তাদের পক্ষের লোকজনকে গ্রেপ্তার করতে রাত থেকে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ সুপারের এমন আশ্বাসে থানা ত্যাগ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
বেনি আমিন/জোবাইদা/