
পানির তীব্র সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। হাসপাতালের তিনটি পানির ফিল্টারই নষ্ট। এ ছাড়া টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ড্রেনগুলোও অপরিষ্কার। এতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। এ কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন, ‘ভর্তি রোগীদের সুবিধার্থে কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে একটি ফিল্টার স্থাপন করা হয়। এর সুবিধা রোগীরা আজও পাননি। ওষুধ খাওয়ানোর জন্য সামান্য পানিও আনতে হয় মহাসড়কের কাছের চায়ের দোকানের পাশের টিউবওয়েল থেকে। অথচ কাছেই রয়েছে কয়েকটি পানির ফিল্টার। সেগুলো নষ্ট থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে মাঝে মধ্যে জানানো হয়। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি টিউবওয়েল থাকলেও সঠিক তদারকির অভাবে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আবার পানি সরবরাহে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফিল্টার বসানো হয়। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে ফিল্টারে পানি সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। জরুরি প্রয়োজনে রোগীর স্বজনেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরের একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না রাখায় জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে ময়লার স্তূপ। আয়রনমুক্ত পানির জন্য রাখা ফিল্টারও অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে প্রথম কমপ্লেক্স ভবন চালু হয়। শুরু থেকে ৩১ শয্যা সেবা কার্যক্রম থাকলেও সেটি ২০১০ সাল থেকে উন্নীত করে ৫০ শয্যা করা হয়। বাড়ানো হয় চিকিৎসকের সংখ্যা ও সেবা কার্যক্রম। এদিকে কমপ্লেক্স এলাকায় একাধিক টিউবওয়েল থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো প্রায় ৭ বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত খাবার পানির সংকটে ভুগছেন। আবার কর্মরত চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এতে কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা এখন ভেঙে পড়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। এখানে বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাছাকাছি একটি টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হয়।’
অপর এক রোগীর স্বজন শরীফা খাতুন বলেন, ‘হাসপাতালজুড়ে কোথাও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। এখানে আসা কিংবা ভর্তি রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি বাড়ি থেকে আনতে হয়। হাসপাতালে প্রচুর মশা। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো না।’
চিকিৎসা নিতে আসা আরফিন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এর মধ্যে সব থেকে বড় সমস্যা হলো, এখানে খাবার পানির সংকট। এ ছাড়া শৌচাগার একেবারে অপরিষ্কার। রাতে পানির প্রয়োজন হলে মেডিকেলের গেটের ওপারে মহাসড়কের কাছে একটি টিউবওয়েল থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এখানে তিনটি টিউবওয়েল সবই নষ্ট।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ হাসান শাওন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে তিনটি ফিল্টার বসানো হয়। তবে কারিগরি কিছু ত্রুটির কারণে এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নষ্ট টিউবওয়েল বিষয়ে আমি সব জায়গায় জানিয়েছি। আমি পৌরসভারও সদস্য, সেখানেও জানিয়েছি। টিউবওয়েলগুলো অনেক আগের। এগুলো মেরামত করা সময়সাপেক্ষ। তবুও আশা করছি, দ্রুত বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন হবে।’