ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

পটিয়ার শেভরণ হাসপাতাল: ইনজেকশন দিতেই মারা গেল ৪ মাসের শিশু

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৭ এএম
পটিয়ার শেভরণ হাসপাতাল: ইনজেকশন দিতেই মারা গেল ৪ মাসের শিশু
চট্টগ্রামের পটিয়ার শেভরণ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ার শেভরণ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় চার মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। নিহত শিশুর নাম নুর আফসা। শিশুটির বয়স তিন মাস। এ ঘটনায় হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ৯টায় ওই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির কানে সমস্যা ছিল, একই সঙ্গে নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল। 

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ করে শিশু আফসার চাচা মো. কাদের খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার ভাতিজির নিউমোনিয়া ও হালকা কানের সমস্যা ছিল। তাই তাকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে পটিয়া পৌরসভার পটিয়া শেভরণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তাকে একটি ইনজেকশন দিতে হবে জানিয়ে ডাক্তার দেলোয়ার লিখে দেন। আমরা সেই অনুযায়ী পটিয়া শেভরণ হাসপাতালের ফার্মেসি থেকেই সেটি কিনে নিই। এরপর নার্স সেটি পুশ করার পর পরই আমার ভাতিজি মারা যায়। অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ইনজেকশনটি ছিল বয়স্ক মানুষের। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বলেছে। আমরা এখন শিশুটির ময়নাতদন্ত করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছি।’ 

জানা গেছে, নিহত শিশু নুর আফসা উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নের সাকিব আল হাসানের মেয়ে। এ ঘটনায় শিশুটির বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে বলে, শিশুটির মৃত্যুর পর হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রোগীর স্বজনরা। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষের গ্লাস, জানালা ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। পরে পটিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

শেভরণ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ হাসান বলেন, ‘শিশুটিকে ডা. দেলোয়ার দেখছিলেন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে কোনো কিছু খাওয়ানোর নিয়ম নেই। কিন্তু রোগীর মা চিকিৎসা চলাকালে বাচ্চাটিকে বুকের দুধ খাওয়ালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় চিকিৎসক ইনজেকশন পুশ করেন। পরে বাচ্চাটি মারা যায়।’

এ সময় তিনি শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্তে কারও গাফিলতির প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুন নুর বলেন, ‘হাসপাতালে হট্টগোল হচ্ছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ সুরুহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

মাদারীপুরে চাচা শ্বশুরের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে সন্তানকে হত্যা!

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৭ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৮ এএম
মাদারীপুরে চাচা শ্বশুরের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে সন্তানকে হত্যা!
ছবি: খবরের কাগজ

মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে ইমতিয়াজ নামে নিজের আড়াই বছরের সন্তানকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। 

বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য শিশু ইমতিয়াজের মরদেহ জেলা হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর-টেকেরহাট এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী দবির বেপারীর স্ত্রী শারমিন আক্তার চাচা শ্বশুর আমির বেপারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। একমাস আগে দবিরকে ডিভোর্স দিয়ে ছোট ছেলে ইমতিয়াজকে নিয়ে আমিরের সঙ্গে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় বসবাস শুরু করেন শারমিন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে শারমিন ইমতিয়াজের মরদেহ দাফনের জন্য মাদারীপুরে নিয়ে শুরু হয় হট্টোগোল। পরে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে আটক করে পুলিশ।

স্বজনদের অভিযোগ, পরকীয়ার জেরে আড়াই বছরের শিশুকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শেখ সাব্বির হোসেন জানান, ‘শিশুটির মরদেহ রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মাদারীপুরে নিয়ে আসার পর ঘটনা জানাজানি হয়। স্বজনদের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করছে। পরকীয়ার অভিযোগ থাকায় অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


রফিকুল/মেহেদী/

স্ত্রীকে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে গণপিটুনি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
স্ত্রীকে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে গণপিটুনি
স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী ফরিদুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গভীর রাতে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী ফরিদুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদুলকে উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের ডোংরা গ্রামের কালু ফকির বাড়ি থেকে হাতেনাতে ধরা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে বেধড়ক মারধর করে। 

খবর পেয়ে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর অবস্থায় ফরিদুলকে হেফাজতে নেয়।

এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে। পরে বাঁশখালী থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফরিদুলকে কড়ানিরাপত্তায় উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনু মিয়া।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল ভোরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন ফরিদুল আলম। বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার বলেন, ‘এলাকায় ফরিদুল আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে বাড়িতে গিয়ে আটক করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছি।’

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’
পূজা-অর্চনায় ব্যস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায়। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। গত সোমবার পয়লা বৈশাখের দিন শুরু হয় মেলা। তিন দিনব্যাপী এ মেলা আজ শেষ হবে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ছিল মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবছরের মতো এবারও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায় এ বউমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা। এ মেলাকে অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটগাছকে সিদ্ধেশরী দেবী বলে থাকেন।

মঙ্গলবার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বটগাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সাজে দাঁড়িয়ে আছেন কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটগাছের দিকে। দুপুরে দিকে বাড়তে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি। 

স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, তাদের কাছে শত শত বছরের বটগাছটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। বটগাছটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামেও পরিচিতি পায়। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ মেলার জন্য। মেলায় দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে, সারা বছর সংসারে যেন সুখ-শান্তি থাকে এ কামনায় পূজার আয়োজন করা হয়। 

মেলায় কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী-সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনা সফল হয়। সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা করতে এসেছি।’

বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন, তবে সংখ্যায় কম। পূজা-অর্চনা ছাড়াও বউমেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রঙের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে মিঠাইয়ের দোকান বসে। লৌহ, কাঠ ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায় মেলায়।

পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করে থাকেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। বউমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য নিলোৎপল রায় জানান, প্রতিবছর বর্ষবরণ উৎসবে সিদ্ধেশ্বরী কালীপূজার আয়োজন করা হয়। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মেলার আয়োজন করেন। পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘বউমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নিয়ে থাকেন।’

রাজশাহীতে চাঞ্চল্যকর সুরুজ হত্যায় বোনসহ ২ ভাগ্নে গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৩ এএম
রাজশাহীতে চাঞ্চল্যকর সুরুজ হত্যায় বোনসহ ২ ভাগ্নে গ্রেপ্তার
ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহী নগরীর বিলশিমলা এলাকায় চাঞ্চল্যকর মো. সুরুজ (৪৫) হত্যা মামলায় তার বোনসহ দুই ভাগ্নেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব এ তথ্য জানায়। 

এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব রাজশাহীর একটি দল।

নিহত সুরুজ নগরের বিলশিমলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- সুরুজের বোন বহরমপুর ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম (৫০), তার ছেলে মো. হিরা (৪০) ও আশরাফ আলী (৪৫)। তাদের বাবার নাম মৃত আনিচুর রহমান।

র‌্যাব জানায়, গত ১১ এপ্রিল জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নগরের সিটি বাইপাস এলাকায় আসামিরা সুরুজকে মারধর করেন। হিরা ইট দিয়ে তার মামা সুরুজের মাথায় আঘাত করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজ মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত সুরুজের ছেলে নগরের রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিলেন। র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।

মেহেদী/

শরীয়তপুরে ৪ দশক ধরে আধিপত্যের লড়াই

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম
শরীয়তপুরে ৪ দশক ধরে আধিপত্যের লড়াই
শরীয়তপুর

সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে বালতির পর বালতিভর্তি ককটেল ফাটিয়ে আলোচনায় আসে এই এলাকা। কিছু হলেই এখানে বিস্ফোরণ ঘটে। আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে ২২ বছর ধরে। এই সময়ে ককটেল বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। অঙ্গহানি হয়েছে শতাধিক মানুষের।  

রাজনৈতিক প্রভাবে এতদিন বিরোধ থামানো যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের আটক এবং বোমা উদ্ধারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গত ৫ এপ্রিল দুই পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়। একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন একে অপরের দিকে হাতবোমা ছুড়ছে। দেখে মনে হয়, যুদ্ধ চলছে।  

এই সংঘর্ষ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিলাসপুরে আধিপত্যের লড়াই চলছে ৪১ বছর ধরে। কেবল বোমার আঘাতে প্রাণ গেছে আটজনের।  

গত বছরের ২৭ এপ্রিল বোমার আঘাতে নিহত হয় ১৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থী সৈকত মুন্সী। তার মা শাহনাজ আক্তার প্রিয় সন্তান হারিয়ে এখনো শোকে পাগলপ্রায়। সৈকতের বাড়িতেও এরপর বোমা হামলা হয়। বিচার না পেয়ে হতাশ পরিবার। একই বছর ২৭ মার্চ বোমার আঘাতে মারা যায় ২৫ বছর বয়সী যুবক সজীব।  

সজীবের মা জানান, ছেলের পেট থেকে ৩৭টি তারকাটা বের করা হয়। আরও ১১টি রয়ে যায় শরীরে। সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যায় সে।  

সজীবের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘দুই বছরের সন্তান রেখে সজীব মারা যান। সবাই বাবাকে নিয়ে ঈদ করে, আমার সন্তান করেছে বাবাহীন ঈদ। স্বামী ছাড়া ঈদ কতটা কষ্টের, আমি জানি। বিচার এখনো পাইনি।’  

গত ১০ বছরে বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  
বিরোধ শুরু ১৯৮৪ সালে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। মেছের মাস্টার ও আনোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধে শুরু হয় বোমাবাজি। ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে।  

এরপর নেতৃত্বে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী। তার প্রতিপক্ষ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জলিল মাদবর। এই দুপক্ষের মধ্যে গত ২২ বছরে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এলাকার ব্যবসা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে।  

স্থানীয়রা জানান, এক পক্ষকে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। অন্যপক্ষকে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন অপু। তারা কখনো সমঝোতার চেষ্টা করেননি।  

কেন নিজেরা নিজেদের মারছেন? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে দুই নাম-বোকা কুদ্দুস’ ও ‘বোমা জলিল’।  

কুদ্দুস বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ২০০১ সালে প্রথম বোমাবাজি শুরু করেন। চরের জমি দখল, নদীপথ, বালু ও মাছ শিকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।  

জলিল মাদবর ছিলেন কুদ্দুসের প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনিও বোমাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।  কুদ্দুস সরদার বলেন, ‘ক্ষমতা আর আদম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারি হয়। কেউ দলে যেতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়।’  

মন্নান শিকদার, আক্কাস সিকদার ও রোজীনা বেগম বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। মারামারি চাই না। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারি না।’  অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে বলছে, ‘সুযোগ পেলে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাব।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে নৌপথে আসে বোমা তৈরির উপকরণ। শত শত বোমা তৈরি হয় চরে কিংবা নৌকায় বসে।  প্রতি ১০০টি বোমা বানিয়ে পাওয়া যায় ৪০ হাজার টাকা। একটি বোমা বানাতে সময় লাগে ৪-৫ মিনিট।  
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল আখন্দ জানান, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে এতদিন সংঘর্ষ থামানো যায়নি। এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। পরে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।’  

পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারীর বিরুদ্ধে ৪৭টি ও জলিল মাদবরের বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তারা দুজনই কারাগারে আছেন।