ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

রংপুরে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কথা জানে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:১৫ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:১৯ এএম
রংপুরে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কথা জানে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী
রংপুর নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। ছবি: খবরের কাগজ

রংপুর নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড আর পরিত্যক্ত ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ চিকিৎসাসেবা। প্রচারবিমুখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসে হাতেগোনা কয়েক শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি বিদ্যালয় কলেজ থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানে না এই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে।

স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ শতক জমির ওপর রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। দেশে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে রয়েছে তিনটি। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কর্মকর্তারা প্রতি মাসে ১০-১২টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তারা এক বা দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।

বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ২ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে চিকিৎসা নিয়েছে ২৩১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৫, মার্চে ১৯৯, এপ্রিলে ১৬০, মে মাসে ২৬৮, জুনে ১৮১, জুলাইয়ে ১১৯, আগস্টে ১৯০, সেপ্টেম্বরে ২৮৩, অক্টোবরে ৩৪৯, নভেম্বরে ৪১৯ ও ডিসেম্বরে ২৬৪ জন চিকিৎসা নেয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চিকিৎসা নিয়েছে ২১৯ শিক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারিতে ১৮৩ জন চিকিৎসা নিয়েছে।

বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে যে পরিমাণ বরাদ্দ আসে, তাতে ওষুধ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো কিছু দেওয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে চাইলেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাওয়া সম্ভব হয় না। ৩০ ধরনের ওষুধ থাকলেও আরও কিছু ওষুধ পাশাপাশি বেশি করে ন্যাপকিন বরাদ্দের দাবি জানান।

রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর রায়হান হোসেন বলে, ‘আগে কিছুই জানতাম না। শুধু আমি না, আমাদের স্কুলের অনেকেই জানে না। হঠাৎ এক বন্ধুর কাছে শুনে চিকিৎসা নিতে এলাম।’ অন্য শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান বলে, ‘দীর্ঘদিন ধরে চর্মরোগ হয়েছে। আমার স্কুলের বন্ধুরা এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানে না। একটু প্রচার-প্রচারণা করলে সবাই জানতে পারত। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেলে সবাই উপকৃত হতো।’

বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. সকিনা বলেন, ‘আমাদের অনেক সংকট রয়েছে, তারপরও চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে এখানে কোনো ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। নিজের খরচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাওয়া-আসা করতে হয়। সব মিলিয়ে এ চিকিৎসাকেন্দ্রটিকে অত্যাধুনিক করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে রংপুর সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, ‘আমি জানি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। নতুন এসেছি। পরিদর্শন করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুদকের অভিযান: রেজিস্ট্রার অফিসে মিলেছে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
দুদকের অভিযান: রেজিস্ট্রার অফিসে মিলেছে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা
চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দলিল রেজিস্ট্রেশন, নকল তোলাসহ অন্যান্য কাজে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখেছে দুদক টিম। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে দুদক জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর কর্মকর্তারা এই অভিযান চালান।

অভিযানের বিষয়ে দুদক জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে মিশন চাকমা নামে একজন জেলা রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী, প্রধান সহকারী মিলে অবৈধ টাকা-পয়সা লেনদেন করা এবং চাকরির পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সন্দ্বীপে কিছু নকলনবিশের নিয়োগ নিয়ে একটা অনিয়ম হয়েছে। আমরা তাদের কাছে কাগজপত্র চেয়েছি। আবার কিছু রেকর্ডপত্র পেয়েছি। সবমিলিয়ে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এখানকার (চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার অফিস) কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ওই কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নথি তলব করেছি। তাদের নামে কোনো অবৈধ সম্পদ আছে কি না, তা দুদক খতিয়ে দেখবে।’

চলন্ত বাসে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চালক-হেলপার গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
চলন্ত বাসে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে এক কিশোরীকে (১৪) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলায় ওই বাসের চালক মো. লোকমান ও সহকারী মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও পুলিশ।

ভুক্তভোগী কিশোরী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার মো. লোকমান ওরফে তারেক (২৬)  সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর পুরান ঘর এলাকার আইয়ুবের বাড়ির মো. শামসুল ইসলামের ছেলে।অপরদিকে বাসের হেলপার মো. হানিফ (৩৬) লোহাগাড়া উপজেলার মাতবর পাড়ার মাতবর বাড়ির হাফিজ আহম্মদের ছেলে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) কক্সবাজার থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে আসছিল ওই কিশোরী। বাসটি নগরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আসার পর ওই কিশোরীকে বাসের ভেতর আটকে রাখা হয়। পরে সেখানে চালক, তার সহকারী ও বাসের সুপারভাইজার মোবারক হোসেন তাকে ধর্ষণ করেন। পরে ওই কিশোরী বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হলেও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।  গ্রেপ্তার দুই আসামি ঘটনার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে।

মেহেদী/

কক্সবাজারে থেকেও সিলেটে মামলার আসামি ফটোসাংবাদিক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১০ এএম
কক্সবাজারে থেকেও সিলেটে মামলার আসামি ফটোসাংবাদিক
ফটোসাংবাদিক রেজা রুবেল। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে থেকেও সিলেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে ফটোসাংবাদিক রেজা রুবেলকে। গত রবিবার মহানগর কৃষক দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আলী আরশাদ খাঁন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন ফটোসাংবাদিক রেজা রুবেল। ওই দিন রাতে সিলেট নগরীর উপশহর এলাকায় মোটরসাইকেল পার্কিং করা কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির জেরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা দিপুর হামলায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুল হক আজিজসহ তিনজন আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হন আজিজ।

এ ঘটনায় দিপুর বাসায় হামলা করতে গিয়ে এলাকাবাসীর ধাওয়ার শিকার হন স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাদের ফেলে যাওয়া ৩১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন এলাকাবাসী। পরে এ ঘটনায় গত ১৩ এপ্রিল সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী মহানগর কৃষক দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আলী আরশাদ খাঁন। মামলায় তিনি ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করেন। এ মামলার ৭ নম্বর আসামি করা হয় রেজা রুবেলকে।

মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ৯ নম্বর আসামি অন্যদের ককটেল সরবরাহ করেন। পরে তারা সবাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। মামলায় রেজা রুবেলকে যুবলীগ নেতা দেখানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে রেজা রুবেল বলেন, ‘ঘটনার চার দিন আগে থেকে আমি কক্সবাজার অবস্থান করছিলাম। সিলেটের বাইরে থাকা সত্ত্বেও মামলায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি ব্যক্তি বিশেষের আক্রোশের শিকার। মামলায় নাম ঢুকিয়ে হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাই।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, ‘১১ এপ্রিল রাতের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা রয়েছে। তবে বাদী কাকে আসামি দিচ্ছেন, তাৎক্ষণিক সেটা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। তবে নিরপরাধ কাউকে আসামি করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে আজিজুল হক আজিজ বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাংবাদিক রেজা রুবেলকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

ফটোসাংবাদিক রেজা রুবেল সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সহযোগী সদস্য এবং বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের বিভাগীয় কমিটির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। তিনি স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেট ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এশিয়ান টেলিভিশনের সিলেটের ক্যামেরাপারসন হিসেবে কাজ করছেন।

রাজবাড়ীতে বৈশাখীতে লাঠিখেলায় মেতে উঠলেন স্থানীয়রা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৪ এএম
রাজবাড়ীতে বৈশাখীতে লাঠিখেলায় মেতে উঠলেন স্থানীয়রা
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য ও প্রাণবন্ত লাঠিখেলা। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য ও প্রাণবন্ত লাঠিখেলা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজবাড়ী শহিদ খুশি রেলওয়ে মাঠে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং ডা. কামরুল হাসান লালী ও ডা. রেহেনা ফাউন্ডেশন এবং রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় এই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইমরুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. কামরুল হাসান লালী, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আব্দুল কুদ্দুস বাবু এবং ডা. রেহেনা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।

এদিকে আয়োজনটি দেখতে মাঠজুড়ে জড়ো হয় হাজারও দর্শক। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই খেলা উপভোগে নারী-পুরুষ-শিশু- সব বয়সের মানুষই সমান আগ্রহ নিয়ে অংশ নেয়। খেলোয়াড়রা রং-বেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে, ঢোলের তালে তালে মাঠে নেমে পড়েন। প্রতিটি দলের খেলোয়াড়রা তাদের কৌশলী লাঠি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। দর্শকরা করতালির মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দেন।

আয়োজকরা জানান, এই লাঠিখেলা ছিল প্রতিযোগিতামূলক নয়, বরং আনন্দনির্ভর। কোনো দল বেশি দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছে, সেটিই ছিল ‘বিজয়ী’ হওয়ার প্রধান মাপকাঠি। এবারের খেলায় মোট তিনটি দল অংশ নেয়।

জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘লাঠিখেলা আমাদের লোকজ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের সামনে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চাই। নববর্ষে রাজবাড়ীবাসীকে আনন্দ দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে।’

আয়োজক ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের লোকজ আয়োজনে শুধু বিনোদন নয়, বরং সমাজের ঐতিহ্যগত শিকড় সংরক্ষণের বার্তা নিহিত রয়েছে। এমন আয়োজন নিয়মিত করারও আহ্বান জানান স্থানীয় দর্শনার্থীরা।

এর আগে গত সোমবার বিকেলে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জেলা বিএনপির আয়োজনে লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এই খেলা দেখার জন্য ভিড় করেন কয়েক শ মানুষ। ঢাকঢোল আর সানাইয়ের বাজনার তালে তালে খেলোয়াড়রা লাঠি হাতে নাচ ও কসরত দেখিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন।

ফেনীতে পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
ফেনীতে পানির জন্য হাহাকার
জলাশয় থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করছেন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জিএম হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের কাজী বাড়ির নারীরা। ছবি: খবরের কাগজ

প্রচণ্ড দাবদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে ফেনীতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় নলকূপ, পুকুর, খাল-বিলসহ কোথাও পর্যাপ্ত পানি নেই। প্রচণ্ড খরতাপে চারদিকে যেন ধু-ধু মরুভূমি। ফলে জেলার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। টানা কয়েক মাস অনাবৃষ্টির কারণে জেলার ৭০ ভাগ গভীর-অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ফেনী জেলায় সরকারি নলকূপের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। চালু থাকা ২৬ হাজার ৯৪১টি নলকূপের তিন ভাগের দুই ভাগেই পানি উঠছে না। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত দুই লক্ষাধিক অগভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। 

অন্যদিকে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলা নদীপার্শ্ববর্তী হওয়ায় এসব এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েলে লবণাক্ত পানি উঠছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গতকাল ফুলগাজী উপজেলার জি এম হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের কাজী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে ১১টি পরিবার বসবাস করে। সেখানে নিজস্ব উদ্যোগে বসানো পাঁচটি টিউবওয়েল রয়েছে। এসব টিউবওয়েলের একটিতেও পানি ওঠে না। এতে খাওয়ার পানির পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাড়ির সদস্যদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

তারা পাশের খাল থেকে পানি সংগ্রহ করে সেগুলো রান্নার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ওই বাড়ি নয়, আশপাশের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে পানি ওঠে না। খাবার ও রান্নার পানি তাদের দূর-দূরান্ত থেকে আনতে হয়।

কথা হয় শরীফপুর গ্রামের কাজী বাড়ির বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকাল এলে বাড়ির অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। কিন্তু সব কাজের জন্য পানির প্রয়োজন হয়। তখন দূর-দূরান্ত থেকে পানি আনতে হয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

একই বাড়ির সত্তরোর্ধ্ব নারী হাজেরা খাতুন বলেন, ‘গত চার-পাঁচ বছর ধরে গরমের সময় এলেই আমাদের পানির জন্য কষ্ট করতে হয়। অজুর পানিও অন্য জায়গা থেকে আনতে হয়। টিউবওয়েলগুলো নষ্ট। পানি ওঠে না। আধা কিলোমিটার দূরের খালে গিয়ে ওজু-গোসলের পানি আনতে হয়।

একই ইউনিয়নের বসিকপুরের বাসিন্দা আনিস আহমেদ জানান, জিএমহাট ইউনিয়নের শরিফপুর ও শ্রীপুর গ্রামের ৩৫টি গভীর নলকূপের একটিতেও পানি ওঠে না। তাই দূরের জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া বাজারের ব্যবসায়ী নেতা মোস্তফা হোসেন বলেন, বাজারে তিনটি চাপকল ও ১০/১২টি পানি তোলার মোটর রয়েছে। এসব কল ও মোটর থেকে পানি ওঠে না। আশপাশের টিউবওয়েলগুলোরও একই অবস্থা।

এদিকে জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়াসহ সদর উপজেলায় বিভিন্ন বাড়িতে টিউবওয়েলের পানির সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে অনেকে পুকুর অথবা ডোবার অস্বাস্থ্যকর পানি পান করে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন।

ফেনী সদর উপজেলার রানীরহাট এলাকার কৃষক দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের জমিতে এবার ধানের চাষ করেছি। কিন্তু পানির অভাবে ধানের থোড় এখন ভুষি হয়ে যাচ্ছে। পুকুর, জলাশয় ও খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি জমিতে বিএডিসির পানি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দিতে পারছে না। তাই আমরা বিপাকে আছি। পানির অভাবে ফসল উৎপাদনে চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

পরশুরামের কৃষক আবু আহাম্মদ বলেন, আমি এবার পাঁচ একর জমিতে ধানের চাষ করেছি। কিন্তু পানি না পাওয়ার কারণে সব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশপাশের নদী, নালা, খাল, বিল সব শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই।’

ফেনী পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি নজরুল বিন মাহমুদুল বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পুকুরের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। আশপাশের নদী-নালা জলাশয়গুলোতেও পানি কমে গেছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাই নলকূপে পানি ওঠে না। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক জানান, গত পাঁচ মাস অনাবৃষ্টির পাশাপাশি গরমের তীব্রতা বাড়ায় ভূ-গর্ভের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সংকট কাটিয়ে উঠতে বিকল্প ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করার কথা জানান তিনি।