নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। গত সোমবার পয়লা বৈশাখের দিন শুরু হয় মেলা। তিন দিনব্যাপী এ মেলা আজ শেষ হবে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ছিল মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবছরের মতো এবারও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায় এ বউমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা। এ মেলাকে অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটগাছকে সিদ্ধেশরী দেবী বলে থাকেন।
মঙ্গলবার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বটগাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সাজে দাঁড়িয়ে আছেন কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটগাছের দিকে। দুপুরে দিকে বাড়তে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, তাদের কাছে শত শত বছরের বটগাছটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। বটগাছটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামেও পরিচিতি পায়। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ মেলার জন্য। মেলায় দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে, সারা বছর সংসারে যেন সুখ-শান্তি থাকে এ কামনায় পূজার আয়োজন করা হয়।
মেলায় কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী-সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনা সফল হয়। সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা করতে এসেছি।’
বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন, তবে সংখ্যায় কম। পূজা-অর্চনা ছাড়াও বউমেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রঙের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে মিঠাইয়ের দোকান বসে। লৌহ, কাঠ ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায় মেলায়।
পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করে থাকেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। বউমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য নিলোৎপল রায় জানান, প্রতিবছর বর্ষবরণ উৎসবে সিদ্ধেশ্বরী কালীপূজার আয়োজন করা হয়। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মেলার আয়োজন করেন। পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘বউমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নিয়ে থাকেন।’