‘বোরো ধানের প্রতিটি ছড়ায় পর্যাপ্ত ধান দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ধান কাটার পর দেখা মিলছে চিটা। প্রতি বিঘায় যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ৮ থেকে ১০ মণ ধান পাব। ভাগ্য খারাপ, আমন ফসলের ক্ষতি বোরো ফসলে পুষিয়ে নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু এবার তাও হলো না। আমার সোনালি স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’
আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন, মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের চাষি আহমদ মিয়া। টানা খরা ও অনাবৃষ্টিতে জেলার বিস্তীর্ণ হাওরের জমি শুকিয়ে যায়। ফলে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। এ ছাড়া শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান বাড়িতে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় আছেন হাওরপারের কৃষকরা।
স্থানীয় চাষিরা জানান, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় জেলায় আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে বোরো মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল অনেক চাষির। কিন্তু বোরো মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও খরায় পোকা ধরে ধান চিটা হয়ে গেছে। আমনের পর বোরো ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। সংসারে টানাপোড়েন শুরু হবে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার বড় তিনটি হাওর হাকালুকি, হাইলহাওর ও কাউয়াদীঘি ছাড়াও ছোট ছোট হাওর এবং উপরিভাগে এ বছর ৬২ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে।
৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন রসুলপুর এলাকার চাষি আবদুর রকিব। প্রতি বিঘায় প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘায় যেখানে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ১০ মণ ধান পাব কি না সন্দেহ আছে। এখন ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে।’
পাড়াশিমইল গ্রামের চাষি মিজু আহমদ বলেন, ‘এবার আমাদের এলাকার অনেকেই আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। বন্যায় সব তলিয়ে গিয়েছিল। বোরো ফসলই ভরসা ছিল, কিন্তু সেই বোরো ফসলেও পোকা ও চিটা হয়েছে। ১০ বিঘা জমি চাষ করি। খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা, এখন খরচ তোলাই দায়।’
বানেশ্রী এলাকার চাষি পরিমল বিশ্বাস জানান, টানা খরা ও অনাবৃষ্টিতে হাওরের জমি শুকিয়ে যায়। ফলে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। যে পরিমাণ ধান পাওয়ার কথা, এখন তার ধান অর্ধেক পাবেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলে ২০২৪ সালের বন্যায় আমন ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পানির অভাবে বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলো। হাওরের নদী-খাল খনন ও পানির উৎস থাকলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। কৃষকদের কৃষি ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক জালাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে কিছু জায়গায় বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে।’