
দেশের চা বাগানগুলোতে নানান জাতিগোষ্ঠির বসবাস। ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে এসে আবাস গড়া চা শ্রমিকদের যেমন নিজেদের আছে পৃথক ভাষা, তেমনি রয়েছে পৃথক সংস্কৃতিও। ভাষা ও সংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেনো একেকটি দেশ। তবে ফাগুয়া উৎসবে সবাই এক হয়ে তারা মেতে ওঠেন রঙের উৎসবে।
এই ফাগুয়া উৎসব চা শ্রমিকদের অন্যতম বড় উৎসব। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের চা বাগানগুলো এখন উৎসবের রঙে রঙিন। বাগানে বাগানে চা শ্রমিকেরা ফাগুয়ার রঙে মাতোয়ারা।
নাচ, গান, রঙ খেলা ভালো রান্নাসহ নানা আয়োজনে এ উৎসব শুরু হয় রবিবার (১৬ মার্চ)। চলবে আগামী শনিবার (২২ মার্চ) পর্যন্ত।
রবিবার বিকেলে শ্রীমঙ্গলের খাইছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা বাগানের শ্রমিক কলোনির অলিগলিতে নানান রঙের চিহ্ন। ছোট শিশুরা গায়ে রঙ মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড়রাও বসে নেই। একে অন্যের গায়ে রঙ মাখিয়ে উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, শত দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটনের মধ্যেও উৎসবের কয়েকটি দিন চা জনগোষ্ঠী পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। শ্রমিকেরা এই আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দূর-দূরান্তের চা বাগান থেকে মেয়েরা নাইওর আসেন জামাইসহ।
চা শ্রমিক সুমন কুর্মি বলেন, চা বাগানের রঙের উৎসবে আমরা বাগানের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঐতিহ্যবাহী কাঠিনৃত্য পরিবেশন করি। রাধাকৃষ্ণ বন্দনায় গোপীরা নানান গানে মাতিয়ে তুলছেন কাঠিনৃত্য।
শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের তরুণ কাজল হাজরা জানান, ছোটবেলায় দেখতাম ফাগুয়া আরও বড় পরিসরে হতো। প্রতিটি চা বাগান থেকে দুই-তিনটা কাঠি নাচের দল বের হতো। চা বাগানে প্রচুর রঙ খেলা হতো। এখন সেটা অনেক কমে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখলা চা বাগানের রাজিব গোয়ালা বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। ফাগুয়া উৎসবের দিনগুলোতে চা জনগোষ্ঠীর লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। সব মিলিয়ে প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, চা শ্রমিকদের এই সংগ্রামী জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ফাগুয়া উৎসব। এটি চা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে অন্যতম। অনেক আনন্দ হয়। চা শ্রমিকরা সারা বছর বিভিন্ন সমস্যায় থাকলেও উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করেন।
ফাগুয়া শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইওরে আসেন। তখন চা বাগানের ঘরে ঘরে ভালো রান্না হয় বলে তিনি জানান।
পুলক পুরকায়স্থ/জোবাইদা/অমিয়/