
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি ইউনিয়নের মৃত রুস্তম মোল্লার ছেলে শিপুল মোল্লা। মামাদের জমিতে একটি টিনের ঘর তৈরি করে তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরির শ্রমিক হিসেবে কাজ করে চালান ছয় সদস্যের সংসার।
কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে দিনমজুর শিপুলের পরিবার। নতুন ঘর বানানোর সামর্থ্য না থাকায় প্রতিবেশীর বাড়িতে ওঠেন। শিপলু বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। তার চোখে ভর করে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।
তখন দরিদ্র ও অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ান টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক। শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি নতুন একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে ঘরের কাজ শুরু হয়ে সোমবার তা শেষ হয়। এখন শিপুলের পরিবার নতুন ঘরে বসবাস করছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তারা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন।
টুঙ্গীপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় (টিআর) দিনমজুর শিপুল মোল্লাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
শিপলু মোল্লা বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মামাদের জায়গায় একটি ঘর তৈরি করে মোট ছয়জন বসবাস করতাম। দিনমজুরের কাজ করে কিছু আসবাবপত্র কিনেছিলাম। জমিয়েছিলাম নগদ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে আমাদের সব শেষ হয়ে যায়।
নতুন একটি ঘর তৈরির সামর্থ্য না থাকায় অন্যের বাড়িতে বসবাস করছিলাম। তখন আমাদের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানতে পেরে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেন। পাশাপাশি একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অবশেষে তিনি আমাদের একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। সোমবার থেকে নতুন ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। প্রশাসনের প্রতি আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’
শিপলু মোল্লা মা রেবা বেগম বলেন, ‘বসবাসের জায়গা না থাকায় আমার ভাইদের জায়গায় একটি ঘর তৈরি করে থাকতাম। কিন্তু আগুনে পুড়ে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু শেষ হয়ে যায়। ঘর ঠিক করার সামর্থ্য না থাকায় অন্যের বাড়িতে থাকতে হয়েছে। আমাদের দুর্দশার খবর শুনে ইউএনও একটা ঘর করে দিয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিতে থাকতে পারব।’
প্রতিবেশী মিটু মোল্লা বলেন, ‘ওরা খুবই গরিব। বলতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। কিন্তু আগুনে পুড়ে ওদের সব শেষ হয়ে গেছে। তবে ইউএনও তাদের একটা ঘর করে দিয়েছে। এ জন্য আমি ইউএনওকে ধন্যবাদ জানাই।’
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, আগুন লেগে দিনমজুর শিপলু মোল্লা সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে জানতে পারি। তখন সেখানে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার, নগদ কিছু অর্থ সহায়তা করি। এ ছাড়া তাদের একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই। গত সোমবার নতুন ঘরটি শিপুল মোল্লার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন সব সময় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে থাকবে।