বর্ষা মৌসুমে ময়মনসিংহ নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এখনো খাল খননসহ পরিষ্কার কাজের কোনো ফলাফল নেই। অনেক এলাকায় ড্রেন নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।
নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সেহড়া, মাকড়জানি, কাটাখালী, বগামারী, গোহাইলকান্দি ও আকুয়া খাল দিয়ে নগরীর পুরোনো ৯টি ওয়ার্ডের পানি পাগারিয়া নদীতে নিষ্কাশিত হয়। আকুয়া খালের খনন চলছে। অপরিকল্পিতভাবে খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে পাড়ে। বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার খালে মিশে যেতে পারে। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে।
তবে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ হলে মহানগরীর বলাশপুর, কাঠগোলা, শম্ভুগঞ্জ, আউটার স্টেডিয়াম, কাশর, জেলখানাসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হবেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজগুলো সমাপ্ত না হলে এবারও চরম ভোগান্তিতে পড়বে মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ‘জনউদ্যোগ ময়মনসিংহ’র নেতারা ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনেজ উন্নয়নকাজে স্থবিরতা, খাল ভরাট, পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন, খাল খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, চলমান উন্নয়ন কাজের দ্রুত বাস্তবায়নসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, ক্ষুব্ধ হবে নগরবাসী।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও পরিষ্কারে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪০ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাল খনন ও পরিষ্কারকাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। এগুলো দিয়ে অন্য সময়সহ বর্ষা মৌসুমেও নদীতে পানি নিষ্কাশন হয়। তবে অপরিষ্কার থাকলে পানি আটকে যায়। বিগত সময়ে উন্নয়নের নামে বেশি লুটপাট হয়েছে। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সবার আকাঙ্ক্ষা পূরণে নির্ভেজালভাবে খাল খননসহ ড্রেনের উন্নয়নকাজ করা প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ করতে পারলে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী স্বস্তি পাবে।
নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন মণ্ডল খবরের কাগজকে বলেন, আকুয়া খালের বেশির ভাগ অংশ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। খালটির খনন চলছে। কিন্তু খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে পাড়ে। এতে বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার খালে মিশে যেতে পারে। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ‘এক এলাকায় ড্রেনের নির্মাণকাজ চললেও আরেক এলাকায় বন্ধ। বর্ষা মৌসুমেও এমন অবস্থা থাকলে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।’
সামাজিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক সারোয়ার কামাল রবিন বলেন, আসন্ন বর্ষায় ভারী বর্ষণ হলে মহানগরীর অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেই খাল খনন ও পরিষ্কারসহ ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন করতে না পারলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তাই দ্রুত কাজগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘খাল খননসহ পরিষ্কারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ উন্নয়নে বন্ধ থাকা কাজগুলো চালু করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় জলাবদ্ধতা না হওয়ার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলমান রয়েছে।’