ঢাকা ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
English
রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

মানিকগঞ্জে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
মানিকগঞ্জে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
নিহতকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন স্থানীয়রা। ছবি: খবরের কাগজ

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিবালয় উপজেলায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের অন্য আরোহী।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে শিবালয় উপজেলার ধুলন্ডী এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম ইয়াসিব। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোলাপ নগর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। আহত ব্যক্তির নাম সালাউদ্দিন। তিনি একই উপজেলার বাসিন্দা।

এ প্রসঙ্গে বরংগাইল হাইওয়ে পুলিশের এসআই ইসরাফিল জানান, ইয়াসিব ও সালাউদ্দিন মোটরসাইকেলে শিবালয় এলাকায় যাছিলেন। এসময় পাটুরিয়ামুখী একটি কাভার্ডভ্যান ধুলন্ডী এলাকায় মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে চালক ইয়াসিব ঘটনাস্থলেই নিহত হন ও আরোহী সালাউদ্দিন গুরুতর আহত হন।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর কাভার্ডভ্যানসহ চালক পাটুরিয়ায় পালিয়ে গেলেও পরে সেখান থেকে তাকে আটক করা হয়।

আহত সালাউদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।
 
আসাদ জামান/নাইমুর/

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গণঅভ্যুত্থানে নিহতের মেয়ের আত্মহত্যা

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ এএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ এএম
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গণঅভ্যুত্থানে নিহতের মেয়ের আত্মহত্যা
প্রতীকী ছবি

জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার এক নিহতের ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই মেয়ের (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ঢাকার শেখেরটেক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় নিজের কক্ষে গলায় ফাঁস দেয় সে।

শহিদের চাচাতো ভাই সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর নিজ এলাকায় নানা বাড়ি যাওয়ার পথে ঐ মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এই ঘটনায় সে নিজেই বাদী হয়ে দুমকি থানায় মামলা করে। এ ঘটনার পর থেকে সে চরম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। সামাজিক লজ্জা, মানসিক চাপ এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ হয়ে পড়ে এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান, পুলিশ নিহতের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান টোটন জানান, ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। আসামিরা বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন মেয়েটির বাবা জসিম উদ্দিন। এর পর টানা ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জসিম উদ্দিনের পরিবার দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

হাসিবুর/মেহেদী/

সিলেটে জাল সনদ দিয়ে লাইসেন্স দলিল লেখকের যুগ পার!

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৭ এএম
সিলেটে জাল সনদ দিয়ে লাইসেন্স দলিল লেখকের যুগ পার!
দলিল লেখক মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সার্টিফিকেট দিয়ে দলিল লেখকের লাইসেন্স করে এক যুগ পার করেছেন দলিল লেখক মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ। ২০১৩ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সুপারিশেই দলিল লেখকের লাইসেন্স পান তিনি।

তার সনদ নম্বর ৩১৭। বর্তমানে তিনি দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে রাশেদ খান মেননের সুপারিশে চাকরি পেলেও ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টিয়েছেন রাশেদ। বর্তমানে তিনি সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।

জানা যায়, দলিল লেখকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য রাশেদ যে আবেদন করেছেন, তাতে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দ্য এইডেড হাইস্কুল থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। ওই সার্টিফিকেটে তার রোল নম্বর ৩০৭৬৭৯ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১০৩০৪৩ দেওয়া ছিল। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ওই রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর খোঁজ করলে সেটা দিয়ে কোনো ফলাফল আসছে না। 

অনুসন্ধানে পাওয়া ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তারিখে তার দলিল লেখক সনদ প্রাপ্তির আবেদনে তিনি লিখেছেন, তিনি একজন দরিদ্র পরিবারের লোক। তার পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৭ জন। তিনি ছাড়া তার পরিবারে উপার্জন করার মতো আর কোনো ব্যক্তি নেই। তিনি পাঁচ বছর ধরে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. আলম মিয়ার সঙ্গে সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রিসংক্রান্ত কাজ করতে হয়। তাই তার দলিল লেখক সনদ একান্ত প্রয়োজন।

ওই আবেদনপত্রে তিনি তার জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি সংযুক্তি হিসেবে তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিয়েছেন। ওই আবেদনপত্রের ঠিক ওপরের ডান পাশে তৎকালীন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সিল ও স্বাক্ষরসহ কলম দিয়ে লিখে দিয়েছেন বিশেষ বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছি। পরবর্তী সময়ে এসএসসি পাসের জাল সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি দলিল লেখক হিসেবে সনদ লাভ করেন।

এদিকে দ্য এইডেড হাইস্কুলের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালে মানবিক বিভাগ থেকে ৫০ জন ছাত্র পাস করলেও মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ নামের কোনো শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যায়নি। ২০০৬ সালে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করেছেন মোট ২২৯ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে মানবিক শাখায় ৫০ জন, বিজ্ঞান শাখায় ১০৯ জন এবং বাণিজ্য শাখায় ৭০ জন পাস করেছেন। তবে কোথাও শিক্ষার্থী হিসেবে রাশেদের নাম পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।

এমনকি রাশেদকে আওয়ামী লীগের দোসর দাবি করে ও জালিয়াতির অভিযোগে চলতি বছরের গত ৮ এপ্রিল সিলেটের সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে শফিকুল ইসলাম সুজন নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগও করেছেন। ওই অভিযোগ জেলা রেজিস্ট্রার আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম সুজনের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি এসএসসির জাল সার্টিফিকেট দিয়ে ২০১৩ সালে দলিল লেখকের সনদ (নং ৩১৭) পেয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নেতাদের মদদে সনদ পেয়ে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি ও জালিয়াতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। 

শফিকুল ইসলাম সুজন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাশেদ ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন তিনি ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে দলিল লেখক সনদ নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আর্থিক লেনদেন করে সিলেটের বিমানবন্দর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হয়েছেন। এই বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে লিখিত অভিযোগও করেছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিচিতজনরা বলছেন, জাল সনদের খবর সামনে আসার পর তিনি তার নিয়মিত ব্যবহার করা মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন
ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁওয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। টানা কয়েক দিন ধরে ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা সদরের রিকশাচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা রিকশা চালাতাম। এখন গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই অল্প সময় চালিয়েই বাসায় চলে যেতে হয়। আয়ও অনেক কমে গেছে।’

সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন জানান, ‘গরমে ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। একেক দিন একেক জায়গায় কাজ খুঁজতে বের হই। কাজ পেলেও গরমের জন্য বেশিক্ষণ কাজ করা সম্ভব হয় না।’

শহরতলী এলাকার রুমানা আক্তার বলেন, ‘গরমে বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টি হলে একটু শান্তি মিলবে। এখনকার অবস্থা খুবই কষ্টকর।’

গরমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগে পড়েছে। অনেকেই রাস্তায় চলার সময় বারবার বিশ্রাম নিচ্ছে। কিছু স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য ঠাণ্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে আবহাওয়া অনেকটা স্বস্তিদায়ক হবে।’

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন শ্রমজীবীরা। শনিবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি জানান, বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় গরমের তীব্রতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনও একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গত বুধবার ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গত বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত শুক্রবার ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলার বড় বাজারের ভ্যানচালক কবির বলেন, ‘গরমে হাঁসফাঁস লাগছে। কিন্তু ভ্যান না চালালে খাব কী? রাস্তায় রোদে থাকলে শরীরের পানি শুকিয়ে যায়। অনেক কষ্ট হয় ভ্যান চালাতে।’

দিনমজুর সুজন বলেন, ‘কাজ বন্ধ রাখলে আয় হবে না। আবার কাজে গেলেও মনে হয় শরীর আগুনে পুড়তেছে। দুপুরের পর কাজ করা খুবই কষ্টকর। তবুও পেটের দায়ে কাজে যেতে হচ্ছে।’

কুলি হামিদ বলেন, ‘এই গরমে স্টেশনে মাল টানতে হচ্ছে। ৫ মিনিট কাজ করলে মনে হয় সারা শরীর আগুন হয়ে গেছে। একটু পর পর বিশ্রাম নিতে হয়।’

এ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।

শ্যামনগরে বেড়িবাঁধে ফাটল, আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪২ এএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯ এএম
শ্যামনগরে বেড়িবাঁধে ফাটল, আতঙ্কে এলাকাবাসী
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহরতলী চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধের ফাটল মেরামত করছেন এলাকাবাসী। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবনসংলগ্ন চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ায় এ ফাটল দেখা দেয়। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহরতলী ও চুনকুড়ি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহরতলী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৫ নম্বর পোল্ডারের ৬০ থেকে ৭০ মিটার বেড়িবাঁধের অংশে ভয়াবহ ফাটল দেখা দেয়। এর আগে গত শুক্রবার রাত থেকে এই ফাটল শুরু হয়। 

জানা গেছে, শনিবার সকালে চুনকুড়ি নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধস দেখেন। সহায়-সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কায় স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেন। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়।

স্থানীয়রা জানান, চুনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ হরিনগরের সিংহরতলী এলাকার বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় বাঁধের নদী অংশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট জায়গা লম্বালম্বিভাবে পাশের খোলপেটুয়া নদীর দিকে দেবে যায়। তখন ফাটল দেখা দেওয়ায় বাঁধের পাশে বসবাসরত গ্রামবাসীসহ চিংড়িঘের মালিকদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। গ্রামবাসী জানান, শুষ্ক মৌসুমে বাঁধে ফাটলের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত। 

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, এই জায়গাটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ বিষয়ে অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাঁধ ভাঙার আগে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধে ফাটল ধরলে বা ভেঙে গেলে ভাঙনকবলিত এলাকায় কাজ শুরু করেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিপা চক্রবর্তী জানান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর আওতাধীন ৫ নম্বর পোল্ডারের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর সিংহরতলী এলাকায় চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে শুক্রবার রাতে হঠাৎ ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কায় গ্রামের মানুষ রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন। পরে সকাল থেকে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেন, যা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে উপকূলরক্ষা বেড়িবাঁধ ফাটলের খবর শুনে শনিবার সকালে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) প্রিন্স রেজাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সিংহরতলী এলাকায় ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। 

বেড়িবাঁধের ফাটল এলাকা পরিদর্শনকালে ইউএনও রনী খাতুন বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তিনি এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে বাঁধ সংস্কারকাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। 

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর উপসহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা বলেন, চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধের ফাটল দেখা দেওয়া অংশে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। রবিবারের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

ময়মনসিংহে বর্ষায় ভুগবেন নগরবাসী

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫০ এএম
ময়মনসিংহে বর্ষায় ভুগবেন নগরবাসী
ময়মনসিংহ নগরীতে খাল খননসহ পরিষ্কারের কাজ চলছে। নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

বর্ষা মৌসুমে ময়মনসিংহ নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এখনো খাল খননসহ পরিষ্কার কাজের কোনো ফলাফল নেই। অনেক এলাকায় ড্রেন নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।

নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সেহড়া, মাকড়জানি, কাটাখালী, বগামারী, গোহাইলকান্দি ও আকুয়া খাল দিয়ে নগরীর পুরোনো ৯টি ওয়ার্ডের পানি পাগারিয়া নদীতে নিষ্কাশিত হয়। আকুয়া খালের খনন চলছে। অপরিকল্পিতভাবে খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে পাড়ে। বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার খালে মিশে যেতে পারে। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে।

তবে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ হলে মহানগরীর বলাশপুর, কাঠগোলা, শম্ভুগঞ্জ, আউটার স্টেডিয়াম, কাশর, জেলখানাসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হবেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজগুলো সমাপ্ত না হলে এবারও চরম ভোগান্তিতে পড়বে মানুষ।

বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ‘জনউদ্যোগ ময়মনসিংহ’র নেতারা ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনেজ উন্নয়নকাজে স্থবিরতা, খাল ভরাট, পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন, খাল খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, চলমান উন্নয়ন কাজের দ্রুত বাস্তবায়নসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, ক্ষুব্ধ হবে নগরবাসী।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও পরিষ্কারে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪০ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাল খনন ও পরিষ্কারকাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। এগুলো দিয়ে অন্য সময়সহ বর্ষা মৌসুমেও নদীতে পানি নিষ্কাশন হয়। তবে অপরিষ্কার থাকলে পানি আটকে যায়। বিগত সময়ে উন্নয়নের নামে বেশি লুটপাট হয়েছে। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সবার আকাঙ্ক্ষা পূরণে নির্ভেজালভাবে খাল খননসহ ড্রেনের উন্নয়নকাজ করা প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ করতে পারলে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী স্বস্তি পাবে।

নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন মণ্ডল খবরের কাগজকে বলেন, আকুয়া খালের বেশির ভাগ অংশ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। খালটির খনন চলছে। কিন্তু খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে পাড়ে। এতে বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার খালে মিশে যেতে পারে। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ‘এক এলাকায় ড্রেনের নির্মাণকাজ চললেও আরেক এলাকায় বন্ধ। বর্ষা মৌসুমেও এমন অবস্থা থাকলে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।’

সামাজিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক সারোয়ার কামাল রবিন বলেন, আসন্ন বর্ষায় ভারী বর্ষণ হলে মহানগরীর অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেই খাল খনন ও পরিষ্কারসহ ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন করতে না পারলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তাই দ্রুত কাজগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘খাল খননসহ পরিষ্কারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ উন্নয়নে বন্ধ থাকা কাজগুলো চালু করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় জলাবদ্ধতা না হওয়ার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলমান রয়েছে।’