একডো আয়োজিত সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে এডভোকেসি সভায় চা শ্রমিক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। ছবি: খবরের কাগজ
‘সারা দেশে রয়েছে ১৬৮টি চা বাগান, এর মধ্যে ১৩৪টি চা বাগান আছে সিলেট বিভাগের মধ্যে। প্রায় পৌনে দুইশ বছর ধরে নামমাত্র মজুরি নিয়ে চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখলেও এখন পর্যন্ত ভূমির অধিকার নেই চা শ্রমিকদের। চা বাগান গড়ার শুরু থেকেই চাষ উপযোগী জমি তৈরি করেছেন এই চা শ্রমিকরা। তারপরও নিজেদের তৈরি করা ভূমিতেই ভূমিহীন হয়ে আছেন চা শ্রমিকরা। র্দীঘবছর যাবত শোষিত এই চা জনগোষ্ঠী এখনো লড়ছেন দারিদ্র্যতার সঙ্গে। তাই ভূমি অধিকারের মতো রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার দাবি তারা বিভিন্ন সময় তুললেও এই দাবি আদায়ে কখনো জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করেতে পারেননি চা শ্রমিকরা।’
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) আয়োজিত সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে এডভোকেসি সভায় এসব কথা বলেন চা শ্রমিক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ সহযোগিতায় ‘লিডারশিপ ডেভলপমেন্ট অব টি লেবার ওমেন ওয়ার্কার অন দেয়ার রাইটস’ শিরোনামে নারী চা-শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশ এবং তাদেরকে অধিকার সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে একডো। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই বর্তমানে চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে একডো।
একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (কো-অর্ডিনেটর) ডা. আবু সালমান মো. সাইফুল ইসলাম।
এই এডভোকেসি সভায় সিলেট প্রেসক্লাব, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা) ও সিলেট উইমেনস জার্নালিস্ট ক্লাবের নেতারা ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, চা শ্রমিকদের ভূমির মালিকানা দিতে গেলে রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকারি খাস জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চা বাগান গড়ে তুলেন। তাই লিজ নেওয়া জমির মালিকানা কাউকে হস্তান্তর করার নিয়ম নেই। চা জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের জন্য রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু দেশে বিভিন্ন সময় সরকার বদল হলেও চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার নিয়ে কখনোই কোনো সরকার উদ্যোগ নেয়নি। তাই এখনও সর্বক্ষেত্রে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার।
মূলত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা নিবন্ধিত কোম্পানি চা বাগান করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে খাস জমি ইজারা নেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে ইজারা গ্রহীতা ইজারার চুক্তি নামা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ সুবিধাও গ্রহণ করতে পারেন। তবে ইজারাদাররা বাগানের ভূমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সাবলিজ বিক্রয়, দান বা বাটোয়ায়ারা করার এক্তিয়ার রাখেন না। এমন কিছু করলে ইজারা বাতিল হওয়ার নিয়ম আছে। এছাড়াও চা শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ঘর করে দেওয়ারও নিয়ম আছে। বর্তমানে এই নিয়মেই বাগান কর্তৃপক্ষ চলছেন। চা বাগানের ভিতর তৈরা করা ঘরগুলোতেই চা শ্রমিকরা থাকছেন। তবে এসব ঘরের মালিকানা তাদের নেই। যুগযুগ ধরে প্রতিটি চা শ্রমিক পরিবার থেকে কেউ না কেউ বাগানে কাজ করার সুবাদেই এসব ঘরে বসবাস করছেন চা শ্রমিকরা।
সভায় উপস্থিত চা শ্রমিক সুমি নায়েক বলেন, যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্বসুরীরা এই চা বাগান গড়ে তুলেছেন। এই পরম্পরায় আমরাও কাজ করছি চা বাগানে। তারপরও আমরা ভূমিহীন। প্রতি ঘরের একজন করে বাগানে কাজ করে তাই আমরা ঘরে থাকতে পারি। আমাদের কি ভূমির মালিক হওয়ার কোনো অধিকার নাই?
শাকিলা ববি/মাহফুজ