
ময়মনসিংহের নান্দাইলে নরসুন্দা নদী খননের পর ‘কালো মাটি’ সংগ্রহে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যে যেভাবে পারছেন ওই মাটি সংগ্রহ করছেন। এর পর সেগুলো রোদে শুকাচ্ছেন। পরে এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজারের কাছে শুভখিলা রেলসেতু ও চংভাদেরা এলাকায় নরসুন্দা নদীতে খনন চলছে। এ কাজের জন্য ১৫টি মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) ব্যবহার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নদীর নিচের মাটির সঙ্গে কালো মাটি দেখা যাচ্ছে। আর এই মাটি সংগ্রহে চলছে হুড়োহুড়ি। বিভিন্ন বয়সের মানুষ কোদাল, শাবল নিয়ে যে যেভাবে পারছেন কালো মাটি সংগ্রহ করছে। কেউ বস্তা, বড় গামলা (বোল), আবার কেউ খাদি (বাঁশের তৈরি এক ধরনের পাত্র) ভরে মাটি নদীর পাড়ে নিয়ে জমা করছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, স্থানীয়দের কাছে এই কালো মাটি ‘কসম’ নামে পরিচিত। এগুলো রোদে শুকিয়ে তা রান্নার কাজে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কালো মাটি সংগ্রহে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
জাবেদ মিয়া নামে একজন বলেন, ‘সাধারণ মাটি থেকে এ মাটি একটু কালো এবং ওজনে হালকা হয়। রোদে শুকিয়ে এই মাটি দিয়ে সারা বছর রান্নার কাজ করা যায়। ফলে বহু মানুষ সারা দিন এই মাটি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।’
মনি রানী নামে আরেকজন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পরিবারের সবাই মিলে এই মাটি সংগ্রহ করছি। মাটি সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়। তবুও রান্নায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে বিনা পয়সার এসব মাটি সংগ্রহ করছি। মাটি সংগ্রহ করার সময় বিভিন্ন গাছের অর্ধপচা ডালপালাও পাচ্ছি। এই কালো মাটি শুকানোর পর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। তাই দ্রুত রান্না করা যায়। ইতোমধ্যে অনেক মাটি সংগ্রহ করেছি। এগুলো দিয়ে অন্তত ছয় মাস রান্না করতে পারব।’
আবদুল কাদির নামে একজন বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি, বিভিন্ন গাছগাছালি নদীতে পড়ে বহু বছর পর পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ওই মাটি জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কয়েক বছর আগে কিছু কালো মাটি স্থানীয়রা সংগ্রহ করতে পেরেছিল। এগুলো রোদে শুকিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করেছে। এখন নদী খননের ফলে আবারও কালো মাটির সন্ধান মেলায় সবাই খুশি হয়েছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের লোকজন ফুরফুরে মেজাজে মাটি সংগ্রহ করছেন।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ কার্যালয় সূত্র জানায়, নান্দাইলের নরসুন্ধা নদীর ২৩ কিলোমিটার অংশ খননের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে খনন চলছে। খনন করতে গিয়ে নদীর কাদামাটির নিচে এক ধরনের হালকা কালো মাটি পাওয়া যাচ্ছে।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, কালো মাটি সংগ্রহের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন মাটির সন্ধান পাওয়া নিশ্চয়ই ভালো খবর। কারণ, অনেকে এই মাটি সংগ্রহ করে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পারবেন। আমি খোঁজখবর নেব।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, কালো মাটি সংগ্রহের বিষয়টি প্রথম শুনলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি।