
সাতক্ষীরার গৃহবধূ প্রিয়াংকা বিশ্বাস। বাবার দেওয়া একটি সেলাই মেশিন থেকে এখন গার্মেন্টস ও হস্তশিল্প কারখানার মালিক তিনি। প্রিয়াংকার বাবা অলোক বিশ্বাসের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে। স্থানীয় রাড়ুলি ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরুতেই ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় প্রিয়াংকার। দশম শ্রেণিতে লেখাপড়ার সময় বাবা তাকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল গ্রামের গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে দেন।
স্বামী গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস চম্পাফুল বাজারের একজন মুদি ব্যবসায়ী। বিয়ের পর পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সব বাধা পেরিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন প্রিয়াংকা।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি বাবার দেওয়া একটি সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করেন তিনি। শ্বশুরবাড়িতে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও সবকিছু পেছনে ফেলে অদম্য পরিশ্রম ও মেধাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে থাকেন প্রিয়াংকা।
গার্মেন্টস শিল্পের ট্রেনিং নিয়ে ২০১৭ সালে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাবার দেওয়া সেলাই মেশিন নিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করেন। শুরুতে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অদম্য ইচ্ছা ও মেধার কারণে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তার সেই একটি সেলাই মেশিন এখন হয়েছে ৫০টিতে। আর ৫০ হাজার টাকা হয়েছে ২ কোটি টাকা। সংসার ও ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন খুলনা বিএল কলেজ থেকে।
সাতক্ষীরার বিসিক শিল্প নগরীর দুটি প্লট কিনে ‘প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টস’ নামে কারখানা তৈরি করেছেন। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুরে হস্তশিল্পের আরেকটি কারখানা রয়েছে তার। যেখানে কারিগর হিসেবে নারীরা প্রাধান্য পেয়েছেন। শুধু নারীদের কর্মসংস্থান তুলে দেওয়া নয়, বরং কর্মজীবী নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন প্রিয়াংকা। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জেলা ও উপজেলা জয়িতা পুরস্কারও।
সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীতে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টসে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ৭০-৮০ জন কারিগর দিনরাত কাজ করছেন। কারখানায় গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, ট্রাউজার, স্কুল-কলেজ, ট্রাভেল ব্যাগ, নকশী কাঁথা তৈরি হয়। এ ছাড়া প্রিয়াংকার মালিকানাধীন ঢাকার মোহাম্মদপুরে হস্তশিল্পের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানে ১৫-২০ জন হস্তশিল্পী বিভিন্ন ধরনের পাটের ব্যাগ, মানিব্যাগ, খেলনা সামগ্রী তৈরি করেন।
গার্মেন্টেসের কারিগর সোনিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রিয়াংকা গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করে আমার সংসার চলে। প্রিয়াংকা অনেক পরিশ্রম করে কারখানা তৈরি করেছেন। একজন গৃহবধূ নারীর অদম্য পথচলা দেখে আমরা অনুপ্রেরণা পাই।’
আরেক কারিগর মমতা দাশ বলেন, ‘নিজ সংসারের কাজ সামলিয়ে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করি। এখান থেকে যে বেতন পাই তাই দিয়ে আমার সংসার চলে। আমার মতো শতাধিক পরিবারের রুটি-রুজি এই গার্মেন্টেস থেকে হয়।’
প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, ‘লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাবার দেওয়া সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করি। সেটাতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আপত্তি ছিল। তবে একটা সময় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাজকর্মকে তারা সমর্থন দেয়।’
নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অর্থায়ন বড় বাধা জানিয়ে প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের একটু অন্য নজরে দেখা হয়। একজন নারী চাইলে তার ব্যবসার জন্য চাহিদামতো ঋণ নিতে পারেন না। এ জন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজ ও নারীদের জন্য বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাই।’