ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ঠাকুরগাঁওয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাছ রোপণ, বিপাকে কৃষক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৩২ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাছ রোপণ, বিপাকে কৃষক
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুরে বন বিভাগ কোল্ড স্টোরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে গতকাল বিকল্প পথে আলুবাহী গাড়ির জট সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় বন বিভাগের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। হাওলাদার কোল্ড স্টোরে আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে তারা দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ছেন, ফলে তাদের আর্থিক ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।

কৃষকদের অভিযোগ, এতদিন ধরে যে পথ দিয়ে তারা আলু পরিবহন করতেন, সেই পথটি বন বিভাগ বন্ধ করে সেখানে নতুন করে কয়েকটি গাছ রোপণ করেছে। ফলে একমুখী প্রবেশপথ থাকলেও বের হওয়ার বিকল্প পথ না থাকায় কোল্ড স্টোরের সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যাচ্ছে, যা মহাসড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে এবং যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। 

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা সারাবছর কষ্ট করে আলু চাষ করি। সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরে নিয়ে যেতে পারছি, কিন্তু বের হতে পারছি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হচ্ছে, এতে আমাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।’

আরেক কৃষক আব্দুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবছর এই পথ ব্যবহার করে আমরা আলু কোল্ড স্টোরে নিয়ে যেতাম। এবার হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আমরা চাই, দ্রুত এই রাস্তা খুলে দেওয়া হোক।’

কৃষক সোলেমান বলেন, ‘বন বিভাগের অন্য অনেক জায়গা দখল হয়ে আছে, সেগুলোতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ যেখানে হাজারো কৃষকের স্বার্থ জড়িত, সেখানে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হলো।’

হাওলাদার কোল্ড স্টোরের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আলুর মৌসুমে কৃষকদের সুবিধার জন্য এই পথটি ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান আসার আগেই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা এসে রাস্তা বন্ধ করে দিলেন। অথচ বন বিভাগের বহু জায়গা দখল হয়ে আছে, সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’

বিষয়টি নিয়ে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাছলিমা খাতুন বলেন, ‘এই পথ ব্যবহারের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারা যদি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি আনতে পারে, তাহলে পথটি ব্যবহার করতে পারবে।’

তবে বন বিভাগের জমি দখল হওয়া এলাকাগুলোতে ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও কৃষকদের চলাচলের পথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দখল হওয়া জমিগুলো উচ্ছেদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি এবং শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কিছু জায়গা দখলকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়া হয় বলেই তারা উচ্ছেদ হয় না। যদিও এই অভিযোগ তাছলিমা খাতুন সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন।

কৃষকদের দাবি, দ্রুত বন্ধ পথটি খুলে দেওয়া হোক। যাতে তারা নির্বিঘ্নে কোল্ড স্টোরে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন এবং মহাসড়কে যানজটের সমস্যা দূর হয়।

বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে চোখে গুলি করল বিএসএফ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১১ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২০ পিএম
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে চোখে গুলি করল বিএসএফ
ছবি: খবরের কাগজ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে হাসিবুল আলম (২৪) নামে এক যুবককে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখে গুলি করেছে। এ ঘটনায় সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ওই উপজেলার মধ্য সিঙ্গিমারী সীমান্তের ৮৯৪ নং মেইন পিলারের সাব ৬ এস পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

হাসিবুল আলম ওই এলাকার জাহিদুল ইসলামের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসিবুলসহ কয়েকজন ওই সীমান্তে বাংলাদেশি জমিতে ঘাস কাটতে যায়। এ সময় ভারতের শীতলকুচি এলাকার নগর সিঙ্গিমারী ক্যাম্পের বিএসএফের টহলদল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পিছন থেকে হাসিবুলকে আটক করে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এ সময় তাকে বিএসএফের গাড়িতে তোলার সময় চোখে গুলি করে।

পরে বিএসএফ তাকে কোচবিহারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করায় বলে সীমান্তের একটি সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে নাম না প্রকাশ শর্তে বিজিবির একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুন-নবি জানান, 'সীমান্তবর্তী লোকজন তাকে জানিয়েছেন হাসিবুল নামে এক যুবককে ভারতীয় বিএসএফ সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।'

মেহেদী/

ঈশ্বরদীতে দোকান দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
ঈশ্বরদীতে দোকান দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে
ছবি: খবরের কাগজ

পাবনার ঈশ্বরদীতে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও মারধর করে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একটি দোকান জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাহফুজুল হাসান ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

মাহফুজুল হাসান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘শহরের পৌর এলাকার স্টেশন সড়কে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের গলিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তিতে ৯৮ বর্গফুট মাপের একটি দোকানঘর পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের ভূসম্পত্তি কার্যালয় থেকে লিজ গ্রহণ করে ভোগ দখল করে আসছিলাম। কিন্তু গত বছরের ৭ জুলাই দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে নওয়াজিশ মোস্তফা তুষার, আবির হাসান শৈশব, গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মোটরসাইকেলে করে দোকানের সামনে এসে গোলাম মোস্তফা চান্না মণ্ডলের হুকুমে তুষার ও শৈশব আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ও বুকে ঠেকিয়ে আমাকে খুন করার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, দোকান বরাদ্দের লাইসেন্স এবং খাজনার কাগজপত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে আমাকে তুলে নিয়ে যায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘সেখানে নিয়ে ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি অস্বীকৃতি জানালে তুষার, আবির, চান্না মণ্ডলসহ আরও তিন থেকে চারজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমাকে চড়, থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারে। পরে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ধরে ভয় দেখালে আমি প্রাণ বাঁচানোর জন্য সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দেই। এরপর থেকে তারা আমার দোকানঘর তাদের দখলে রেখেছে।’

এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম।

পার্থ হাসান/সুমন/

ভোলায় ৩ লাখ ইয়াবা ধ্বংস করল কোস্টগার্ড

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
ভোলায় ৩ লাখ ইয়াবা ধ্বংস করল কোস্টগার্ড
ছবি: খবরের কাগজ

ভোলায় যৌথ অভিযানে উদ্ধার করা প্রায় ৩ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ধ্বংস করেছে কোস্টগার্ড। 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ভোলা খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন কার্যালয়ে উদ্ধার করা ইয়াবা পানিতে গলিতে ধ্বংস করা হয়েছে।

কোস্টগার্ডের স্টাফ কর্মকর্তা (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট সাব্বির আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন এবং র‍্যাবের সমন্বয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ঝাউবন এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। এ সময় সন্দেহজনক কয়েকটি বস্তা তল্লাশি করে ৩ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। জব্দ করা ইয়াবার আইনি ব্যবস্থার জন্য কলাপাড়া থানায় একটি মামলা করা হয় এবং নমুনা হিসেবে ২০ পিস ইয়াবা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া হয়। 
পরে পটুয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গত ১০ এপ্রিল কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনে রক্ষিত ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮০ পিস ইয়াবা ধ্বংসের নির্দেশনা দেন। 
ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আজ ভোলা কোস্টগার্ড বেইস এ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাফিজ ও ভোলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে ২ লাখ ৯৯  হাজার ৯৮০ পিস ইয়াবা ধ্বংস করা হয়। 

ইমতিয়াজ/মেহেদী/

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৭ পিএম
কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু
ঘাতক ট্রাকটি আটক করেছে স্থানীয় জনতা। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের মিরপুর উপজেলার আটমাইল ও বহলবাড়ীয়ার মাঝামাঝি এলাকায় মালবাহী ট্রাকের চাপায় রেহেনা খাতুন (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পঞ্চগড় থেকে যশোরগামী একটি মালবাহী ট্রাক রেহেনাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। নিহত রেহেনা খাতুন আটমাইল এলাকার মন্টু সর্দারের স্ত্রী।

অপরদিকে বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভেড়ামারার গোলাপনগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে বালুবাহী ট্রাকের চাপায় ফিরোজ আলম নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফিরোজ বাহাদুরপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে।

কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুটি ঘটনার মধ্যে একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে, তবে চালক পালিয়ে গেছেন। অন্য ট্রাকটিকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি চালকদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে পুলিশ।

মিলন/তাওফিক/ 

সীতাকুণ্ডে বিএনপি-কর্মীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হলেন প্রধান শিক্ষক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
সীতাকুণ্ডে বিএনপি-কর্মীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হলেন প্রধান শিক্ষক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে এসে জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজি তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে বাধ্য করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কান্নায় ভাসছিলেন ওই প্রধান শিক্ষক।

বুধবার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাটিয়ারীতে জড়ো হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে এসে জোরপূর্বক এই স্বাক্ষর নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। 

মিছিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ১ মার্চ বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কান্তি লাল আচার্য্য। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

২০০০ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হলে তৎকালীন বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটি জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। 

গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য ও সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরে মিছিল-মিটিং করে।

এর পর গত সোমবার বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন জামায়াত সমর্থিত বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর পর বিএনপিসহ দলের সমর্থিত সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি করেন।

বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতিসহ সদস্যরা অফিসে বসে বিদ্যালয়ের কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ লোকজন বিদ্যালয়ে আসে।

এ সময় জামায়াত সমর্থিত কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় দলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হামলায় জামায়াতের কর্মী ফারুক আহত হন। 

এর পর বুধবার দুপুর ২টার সময় বাধ্যতামূলকভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার প্রধান শিক্ষককে তার গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেছে।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের শাস্তি ও পদত্যাগ দাবি করেছি। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তিনি।

এ ছাড়া নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ায় তারও পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে নিজের শিক্ষক দাবি করে বলেন, ‘এভাবে অসম্মান করে একজন শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া কারও জন্য কাম্য নয়।’

এ সময় মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নিজেকে জামায়াত সমর্থিত দাবি করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচার হবে। কিন্তু বাধ্য করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেওয়া কাম্য হতে পারে না।’

মঙ্গলবার নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় জিডি করেছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল-মিটিং করেছে শুনেছি। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদত্যাগ করেছেন। নিজ গাড়ি করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ২০২৮ সালে মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তারা না চাইলে, নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারত। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে, জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নেই। বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিলাম।’

সুমন/অমিয়/