
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় বন বিভাগের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। হাওলাদার কোল্ড স্টোরে আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে তারা দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ছেন, ফলে তাদের আর্থিক ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, এতদিন ধরে যে পথ দিয়ে তারা আলু পরিবহন করতেন, সেই পথটি বন বিভাগ বন্ধ করে সেখানে নতুন করে কয়েকটি গাছ রোপণ করেছে। ফলে একমুখী প্রবেশপথ থাকলেও বের হওয়ার বিকল্প পথ না থাকায় কোল্ড স্টোরের সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যাচ্ছে, যা মহাসড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে এবং যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা সারাবছর কষ্ট করে আলু চাষ করি। সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরে নিয়ে যেতে পারছি, কিন্তু বের হতে পারছি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হচ্ছে, এতে আমাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।’
আরেক কৃষক আব্দুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবছর এই পথ ব্যবহার করে আমরা আলু কোল্ড স্টোরে নিয়ে যেতাম। এবার হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আমরা চাই, দ্রুত এই রাস্তা খুলে দেওয়া হোক।’
কৃষক সোলেমান বলেন, ‘বন বিভাগের অন্য অনেক জায়গা দখল হয়ে আছে, সেগুলোতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ যেখানে হাজারো কৃষকের স্বার্থ জড়িত, সেখানে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হলো।’
হাওলাদার কোল্ড স্টোরের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আলুর মৌসুমে কৃষকদের সুবিধার জন্য এই পথটি ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান আসার আগেই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা এসে রাস্তা বন্ধ করে দিলেন। অথচ বন বিভাগের বহু জায়গা দখল হয়ে আছে, সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’
বিষয়টি নিয়ে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাছলিমা খাতুন বলেন, ‘এই পথ ব্যবহারের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারা যদি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি আনতে পারে, তাহলে পথটি ব্যবহার করতে পারবে।’
তবে বন বিভাগের জমি দখল হওয়া এলাকাগুলোতে ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও কৃষকদের চলাচলের পথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দখল হওয়া জমিগুলো উচ্ছেদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি এবং শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কিছু জায়গা দখলকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়া হয় বলেই তারা উচ্ছেদ হয় না। যদিও এই অভিযোগ তাছলিমা খাতুন সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন।
কৃষকদের দাবি, দ্রুত বন্ধ পথটি খুলে দেওয়া হোক। যাতে তারা নির্বিঘ্নে কোল্ড স্টোরে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন এবং মহাসড়কে যানজটের সমস্যা দূর হয়।