
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার থেকে পাথর তুলতে গিয়ে ভূমিধসে কয়েস আহমদ (৩৮) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত কায়েস নেত্রকোণা জেলার কালিয়াজুড়ি উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভোলাগঞ্জের দয়ারবাজারে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় আরও চারজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় পাথর তুলতে গিয়ে ভূমিধসে লিটন মিয়া (৩২) নামে এক শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। এই এলাকায় অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে তিন মাসের মধ্যে দুই শ্রমিক নিহত হলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন শ্রমিক বাঙ্কার এলাকায় পাথর তুলছিলেন। এ সময় আকস্মিকভাবে একটি গাছ ধসে পড়লে কায়েস গাছের নিচে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে পুলিশ মরদেহ হেফাজতে নেয়।
এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন, ভোলাগঞ্জ এলাকার সবুজ মিয়া, সুজাত আহমদ, ইমরান ও কোম্পানীগঞ্জের শিলাকুড়ি গ্রামের সুরুজ আলী। তাদের সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, ‘লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যুর মামলা হলেও তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশে রোপওয়ের লোডিং স্টেশনের বাঙ্কার এলাকা পড়েছে। পাথর পরিবহনে স্থল ও জলযানের বিকল্প হিসেবে ১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতকে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপলাইন। এর মধ্যে রয়েছে ভোলাগঞ্জ লোডিং স্টেশন (বাঙ্কার) ও ছাতক খালাস স্টেশন। রোপলাইন আশির দশক পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করলেও পরবর্তীতে অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ ২০১১ সালে কিছুদিন সচল থাকলেও ঘটনাক্রমে রোপওয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্থল ও জলপথে পাথর পরিবহণ সহজলভ্য হওয়ায় ও রোপওয়ে চলাচল ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় রোপলাইন বন্ধ রয়েছে।
এই সুযোগে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে রোপওয়ের সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে পাথর তোলা হচ্ছে। পাথর লুট বন্ধ করতে প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালালেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।