ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

টাউন হল যেন ‘ভূতের বাড়ি’

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
টাউন হল যেন ‘ভূতের বাড়ি’
বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না থাকায় জয়পুরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনটি এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত চার বছর ধরে এটি বন্ধ/ খবরের কাগজ

চার দশক আগে চালু হওয়া জয়পুরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তন (টাউন হল) গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। আগে এখানে নিয়মিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে কোনো সংস্কার না হওয়ায় ধীরে ধীরে ভবনটি জৌলুশ হারাতে থাকে।

 ২০২০ সালের পর এখানে আর কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। জরাজীর্ণ ভবনটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বন্ধ ভবনে এখন ভূতের বাড়ির মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। খোয়া যাচ্ছে জিনিসপত্র। স্থানীয়রা বলছেন, পুরোনো ভবনটি ভেঙে নতুন স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে টাউন হলের এতিহ্য ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অবশ্য এমন উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছর শহরের সিও কলোনি এলাকায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে এটি টাউন হল নামে পরিচিত। চার বছর আগেও এখানে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। কিন্তু ভবন নির্মাণের পর দীর্ঘ ৪০ বছরেও কোনো সংস্কার হয়নি। অযত্ন আর অবহেলায় ধীরে ধীরে ভবনটি জৌলুশ হারাতে থাকে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের সিও কলোনি এলাকায় সড়কের পাশে হলের বাউন্ডারি দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে ভবনটি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মিলনায়তনের ভেতর গেলে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের ওপর ধুলোর আস্তর পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। কিছু জায়গার পলেস্তারা খসে পড়েছে। এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ মিলনায়তনটি এখন জরাজীর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। ভেতরে রীতিমতো ভূতুড়ে পরিবেশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাস্তার পাশের বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙা থাকায় জরাজীর্ণ ভবনটিতে রাত হলেই মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। চোরের দল এসে প্রায়ই বিভিন্ন জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যায়। শুধু একজন কেয়ারটেকার পুরো মিলনায়তনটি দেখভালের দায়িত্বে আছেন। এলাকাবাসীসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের দাবি, নতুন করে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই মিলনায়তনটি আবারও চালু করতে হবে।

শহরের সিও কলোনি এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোরশেদ বুলবুল বলেন, ‘আগে টাউন হলে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মিটিং, সভা-সমাবেশ হতো। জাকজমকপূর্ণ একটা অবস্থা ছিল। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বলা যায় ভূতের বাড়ি। জায়গাটি মাদকাসক্তদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে অসামাজিক কাজও হয়। ঐহিত্যবাহী এই মিলনায়তনটি রক্ষা করতে হলে নতুন আঙ্গিকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’

মোস্তাফিজুর রহমান নামে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে টাউন হলে আমরা নাচ-গানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে আসছি। কিন্তু এখন এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে বখাটেরা আড্ডা দেয়, নেশা করে। কেয়ারটেকার সবকিছু ভালোভাবে কট্রোল করতে পারেন না। কারণ মিলনায়তনটির সব দিকে খোলা। আমরা চাই ভবনটি ভেঙে নতুন করে চালু করা হোক।’

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান প্রিন্স বলেন, ‘এই টাউন হলে জয়পুরহাটের অনেক ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। কিন্তু বর্তমান জরাজীর্ণ ভবনে এটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা চাই দ্রুত এটি পুনর্নির্মাণ করে আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আনা হোক।’

টাউন হলের পাশের দোকানি ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘টাউন হল যখন চালু ছিল তখন এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো। এ কারণে অনেক মানুষজনও আসতেন। তখন দোকানে অনেক বিক্রি হতো। কিন্তু এখন টাউনহলটি বন্ধ থাকায় আর আগের মতো বিক্রি হয় না। দ্রুত টাউন হল চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

টাউন হলের দায়িত্বরত কেয়ারটেকার জামিল হোসেন বলেন, ‘মাদকসেবী ও চোর আটকানোর জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি। অনেক সময় চোর এসে গ্রিলসহ অন্যান্য জিনিস চুরির চেষ্টা করে, তাদের আটকাই। কিন্তু যেহেতু জায়গাটি চারপাশ থেকে খোলা তাই বেকায়দায় পড়তে হয়।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘১৯৮৪ সালে টাউন হলটি নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় অব্যবস্থাপনার কারণে এখন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা এরই মধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট থেকে বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন হলে কাজ শুরু করতে পারব। এ ছাড়া যে ভবন রয়েছে সেটি কনডেম (পরিত্যক্ত) ঘোষণা করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। পরিত্যক্ত ঘোষণা হওয়ার পরে মাল্টিপারপাস জায়গা তৈরি করব। যেখানে হলরুমের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে।’

মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দিলেন মা ও সৎ বাবা!

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দিলেন মা ও সৎ বাবা!
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ১৪ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই মা ও সৎ বাবার বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে প্রতিকার চেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার ওই মাদ্রাসাছাত্রী বাদী হয়ে তার মা, সৎ বাবা ও তিন প্রতিবেশীকে বিবাদী করে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

বিবাদী ওই তিন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।

বাল্যবিবাহের শিকার ওই মাদ্রাসাছাত্রী উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব মাহালিয়া গ্রামের চিতামুড়া এলাকার মৃত আবু নৈয়মের মেয়ে। এ ছাড়াও সে বাজালিয়া হেদায়েতুল ইসলাম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

বিবাদীরা হলেন- ভুক্তভোগীর মা মিনু আক্তার (৩৫), সৎ বাবা নুরুল ইসলাম (৪৫), প্রতিবেশী আবদুর রশিদ (৫০), আবদুর রশিদের স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৫) ও তাদের ছেলে মোহাম্মদ রাকিব। তারা প্রত্যেকে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব মাহালিয়া গ্রামের চিতামুড়া এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্রীর বয়স এখনও ১৪ বছর। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে তার সঙ্গে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে স্থানীয় জাবেদ নামে এক যুবকের বিয়ের আয়োজন করেন মা মিনু আক্তার ও সৎ বাবা নুরুল ইসলাম। মেয়েটি এ বিয়েতে রাজি না হওয়া সত্বেও উভয় পরিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী দুই মাস পর্যন্ত ওই মাদ্রাসাছাত্রী নিজের বাড়িতেই অবস্থান করবেন এবং দুই মাস পূর্ণ হলে তাকে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হবে। তারই প্রেক্ষিতে, কোন ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়াই এক প্রকার গোপনে কাজীর মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন দুই পরিবারের কর্তারা। বিবাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই মাদ্রাসাছাত্রী নিজ বাড়িতেই অবস্থান করেন। এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর ওই মাদ্রাসাছাত্রী হঠাৎ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে পারভীন আক্তার নামে তার এক নিকটাত্মীয়ের চট্টগ্রামস্থ বাসায় আশ্রয় নেয়। পরে তার পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তাকে জোরপূর্বক বাড়িতে নিয়ে আসেন। 

বাড়িতে ফিরে আসার কিছুদিন পর তাকে মারধর করে জোরপূর্বক শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করেন তার মা ও সৎ বাবা। এ ঘটনার কয়েকদিন পর সে পুনরায় বাড়ি থেকে পালিয়ে তার খালু জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে তার আরেক নিকটাত্মীয় মনোয়ারা বেগমের চট্টগ্রামস্থ বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে সেখানে আশ্রয় নেন। এ ঘটনায় তার মা সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে ওই ছাত্রী তার মা ও সৎ বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে নিজেই থানায় হাজির হন। পরে সাতকানিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) খাইরুল হাসান ভুক্তভোগী ও তার মা, সৎ বাবা এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সালিশী বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই সালিশী বৈঠকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিবাহের সম্পর্কটি ছিন্ন করে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবেন বলে জানান। পরে তার মা ও সৎ বাবা মেয়েকে ছাড়াই বাড়িতে ফিরে যান। এর পর থেকে ওই মাদ্রাসাছাত্রী তার প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয় এ্যানি আকতারের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

বাল্যবিবাহের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী বলে, আমার বয়স এখনও ১৪ বছর। আমি বাজালিয়া হেদায়েতুল ইসলাম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। আমার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ করে সংসারের হাল ধরব। কিন্তু আমার মা ও সৎ বাবা মিলে আমাকে জোরপূর্বক বিবাহ দিয়েছে। আমাকে মারধর করে বিবাহ রেজিস্ট্রিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন। এর পর আমি পালিয়ে গিয়ে আমার এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেই। এখনও আমার মা ও সৎ বাবা আমাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।

প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয় এ্যানি আকতার বলেন, সে একদিকে আমার প্রতিবেশী অন্যদিকে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন। তাকে বাল্যবিবাহ দেওয়াতে সে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় চলে গিয়েছিল। পরে সাতকানিয়া থানায় সালিশী বৈঠকে সে জানায়, সে এ বিবাহের সম্পর্কটি ছিন্ন করে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে এবং মা ও সৎ বাবার সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করবে। কিন্তু তার মা ও সৎ বাবা তাকে বাড়িতে নেয়নি। সে থেকে মেয়েটি আমার বাড়িতে রয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই মাদ্রাসাছাত্রীর মা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। পরে সৎ বাবা নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাল্যবিবাহের বিষয়টি শিকার করে তিনি বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি করে দিয়েছি। মেয়ের জামাইকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে দেওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকার ফার্নিচার তৈরি করেছি। পরে সে হঠাৎ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাকে আমরা অনেকদিন খোঁজাখুঁজির পরে বাড়িতে নিয়ে আসি। পরে সিদ্ধান্ত হয় কাজীর কাছে গিয়ে বিয়ের সম্পর্কটি ছিন্ন করা হবে। এর কিছুদিন পর মেয়েটি পুনরায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আমি যেহেতু সৎ বাবা এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নাই। আমি ওই মেয়েকে আর বাড়িতে তুলব না। তার মা যদি তাকে লালনপালন করতে পারে তাকে বাড়িতে নিবে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

সাতকানিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) খাইরুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় একটি সালিশী বৈঠকে বসেছিলাম। ওই সালিশী বৈঠকে বাল্যবিবাহের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী বিবাহের সম্পর্কটি ছিন্ন করে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে বলে জানায়। পরে আমরা তাদেরকে আইনি পরামর্শ দিয়েছিলাম। এ ছাড়াও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলেছি।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, এক মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ দেওয়ার ঘটনায় ওই মাদ্রাসাছাত্রী বাদী হয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফুল/মেহেদী/

২০২৪ সালে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ১ কোটি কেজি

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
২০২৪ সালে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ১ কোটি কেজি
চা বাগানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের চায়ের উৎপাদন কমেছে কিন্তু বিদেশে চা রপ্তানি বেড়েছে। ২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পর ২০২৪ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে চা উৎপাদন কমেছে এক কোটি কেজি। 

তবে ২০২৪ সালে চা রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন কেজি, ২০২৩ সালে চা রপ্তানি হয়েছিল ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি। চা রপ্তানি করে ২০২৪ সালে আয় হয়েছিল ৪৫৯ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন টাকা। আগের বছর রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৭২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন টাকা। 

বাংলাদেশ টি বোর্ড থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

এদিকে গত সোমবার চায়ের সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আগামী ৫ মে থেকে নতুন মৌসুমের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চা নতুন নিলামের সময়সূচি ঘোষণা করেছে টি বোর্ড। 

২০২৪ সালের উৎপাদিত চায়ের ৪৯টি নিলাম আয়োজন করা হয়েছিল। সর্বশেষ নিলামে ৭২ হাজার ৮৭৮ প্যাকেটে ৩৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়। 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০২৪ সালে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০ কোটি দুই লাখ কেজি।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন কম হলেও দেশের বাজারে চায়ের সংকট হবে না। কারণ ২০২৩ সালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন এই ঘাটতি পূরণ করবে। 

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে উত্তর অঞ্চলের বেশ কিছু চা বাগান বন্ধ ছিল। এতে প্রভাব পড়েছে চায়ের উৎপাদনের। এছাড়া চা শিল্প বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। চা চাষের জন্য নিয়মিত ও মাঝারি বৃষ্টি প্রয়োজন। ২০২৪ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে দুই দশমিক আট লাখ একরেরও বেশি এলাকায় ১৬৯ চা বাগান আছে। এর মধ্যে, মৌলভীবাজারের ৯০ বাগান থেকে দেশের মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হবিগঞ্জ থেকে আসে ২২ শতাংশ চা, চট্টগ্রামের চা বাগান থেকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ যোগ হয়। 

এদিকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ চা রপ্তানি করেছে। প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রধান রপ্তানিকারকদের তুলনায় বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সাড়ে ২৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় ছিল চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছিল ছয় লাখ কেজি। এর পর ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। তবে ২০২১ সালে কমে হয় ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে রপ্তানি বেড়ে হয় ৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যে সব দেশে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বেশি বলে জানান চা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত এক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা। 
এ ছাড়া বাংলাদেশের চায়ের কদর রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে। নতুন দেশ হিসেবে এবার রপ্তানি হচ্ছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া সিংগাপুর, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফ্রান্সে, স্পেনে রপ্তানি হয় বাংলাদেশি চা। 

বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্ট লিমিটেড, সিটি টি স্টেট, ইস্পাহানি টি লিমিটেড অন্যতম প্রতিষ্ঠান।  

২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদ করে নতুন রেকর্ড হয়েছিল। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়েছে। এবার সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি বাগান গুলোর। ২০২২ সালের চা উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন রেকর্ড ছিল। ২০১৯ সালে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। সেসময় তাও রেকর্ড পরিমাণ ছিল। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন (এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি) খবরের কাগজকে বলেন, ‘চা বোর্ড, বাগানমালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি সবার দলগত পরিশ্রমের ফলে গত বছর চা উৎপাদানের রেকর্ড হলেও এবার তা ধরে রাখা যায়নি। তবে এবার চা রপ্তানিতে রেকর্ড হয়েছে। এবার যা উৎপাদন হয়েছে তাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারা একটা বড় সাফল্য। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। রপ্তানির বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে।  দেশের প্রায় ১২টি চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়েছে মোট উৎপাদনের উপর। 

আবদুস সাত্তার/পপি/ 

মমেক হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, আটক ১৪ দালাল

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
মমেক হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, আটক ১৪ দালাল
ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ১৪ দালালকে আটক করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অভিযানে আটকদের সর্বনিম্ন ১৫ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মন্টু মিয়া (২৫), মো. মাসুদ (৪৫), আলাল উদ্দিন (৬০), মো. আশরাফুল (২৭), মো. বিজয় (৫০), মো. আকাশ (২৪), ছোবহান মিয়া (৬৫), সুমন মিয়া (৩০), শাহদাৎ হোসেন বাবু (৩০), মো. শাকিব (২৪), আনিছ হোসেন রকি (৩৫), সাদ্দাম হোসেন (২৯), মমিনুল ইসলাম রবিন (৩০) এবং রোকসানা আক্তার (৩৫)। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ১৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বেড়েছে। এতে প্রতারণার মাধ্যমে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাইরের নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়াসহ চিকিৎসার নামে হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মহিলা ওয়ার্ড, পরীক্ষাগার, আউটডোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৪ দালালকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে তাদের সঙ্গে থাকা ১৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী আটক দালালদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ১০০০ শয্যার বিপরীতে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার। সেবা নিতে এসে অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হন। হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূল হোক, সেটাই চাই।

মিন্টু/মেহেদী/

কুমিল্লার ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৩

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫০ এএম
কুমিল্লার ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৩
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজন নিহত হয়েছেন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন থেকে ওই তিন যুবকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, বুধবার সকালে উপজেলার মাধবপুর এলাকায় তিন যুবকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয় লোকজন।

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ভোরের দিকে কোনো ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

জহির শান্ত/সুমন/

জব্বারের বলীখেলা ২৫ এপ্রিল

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪০ এএম
জব্বারের বলীখেলা ২৫ এপ্রিল
আবদুল জব্বারের বলীখেলা নিয়ে চসিক পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত হয় এক সংবাদ সম্মেলনের। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা নগরীর লালদীঘি মাঠে আগামী শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে চসিক (চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন) পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।  

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শুক্রবার বলীখেলার মূল পর্বের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। ওই দিন বিজয়ী বলীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলীখেলার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা। 

বক্তব্যে আরও বলা হয়, নগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের শারীরিভাবে প্রস্তুত করতে লালদীঘি ময়দানে এ বলীখেলা শুরু করেন। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরের ১২ বৈশাখ জব্বারের বলীখেলার আয়োজন করা হয়। এ খেলায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বলীরা যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বলীখেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বলীখেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান বিচারক হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ, সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল বালী প্রমুখ।