চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে দুইদিন আগে থেকেই কিছু কিছু দোকানি পসরা সাজাতে শুরু করেছেন। বাকিরা আছেন অপেক্ষায়। তবে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে অন্যান্য বছরের মতো আগেভাগে মেলা জমে ওঠেনি। তবুও আশা-নির্ভরতায় ফুটপাত আর সড়কের একপাশে সীমিত পরিসরে দোকান সাজাতে শুরু করেছেন অনেক দোকানি।
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের মূল আকর্ষণ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে ২৫ এপ্রিল বিকেলে। আর বৈশাখী মেলা চলবে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পণ্যের ঝাঁপি নিয়ে দোকানিরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে আসতে শুরু করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিনেমা প্যালেস থেকে শুরু করে কে সি দে রোডের দুই পাশে বসেছে বাঁশ-বেত, মাটি ও নানান হস্তশিল্পের পসরা। তবে সড়কে দোকান বসানো নিষেধ থাকায় স্থান সংকটে ভোগছেন দোকানিরা। লালদিঘি পাড় থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত কিছু দোকান গড়ে উঠলেও, লালদিঘি ময়দানের পাশে এখনো কাউকে বসতে দেওয়া হয়নি।
গাজীপুর থেকে আসা মৃৎপণ্য বিক্রেতা রহিম উদ্দিন জানান, তিনদিন আগে এসেছি মালামাল নিয়ে। ফুলদানি আর শো পিছ এনেছি, কিন্তু পুলিশের বারবার সতর্কতায় ঠিকমতো বসতে পারছি না।
একই অভিযোগ ঢাকার শাহবাগ থেকে আসা বিক্রেতা আহমদ আলীরও। তিনি বলেন, ‘পুলিশ দোকান গুটাতে বলছে, কিন্তু আমাদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই।’
এদিকে, মেলা প্রাঙ্গণে এসেছেন আগ্রহী ক্রেতারাও। অক্সিজেন এলাকা থেকে আসা গৃহবধূ ফাহমিদা আখতার বলেন, ‘প্রতি বছর মেলার জন্য অপেক্ষা করি। এবার মানুষের ভিড় বাড়ার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনে ফেলার চেষ্টা করছি।’
শান্তা চৌধুরী নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, ‘বলীখেলার চেয়ে মেলার আকর্ষণ বেশি। এখান থেকেই সারাবছরের ছোটখাটো দরকারি জিনিস কিনে নিই।’
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল জানান, চলমান এসএসসি পরীক্ষা ও অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার পুলিশ সড়কে দোকান বসাতে দিচ্ছে না। তবে ২৪ এপ্রিল থেকে দোকান বসার অনুমতি মিলবে। কাউকে ফেরত যেতে হবে না, আমরা সবাইকে সহায়তা করব।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নির্দেশনা অনুযায়ী, এবারের মেলায় সড়কের উপর কোনো ধরনের দোকান বসানো যাবে না। এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ফুটপাত ও সড়কের একপাশে সীমিত পরিসরে বসে পড়েছেন।
মেলায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন রয়েছে তৎপর। তবে ব্যবসায়ীদের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা এবং আগেভাগে দোকান বসতে না পারায় এবার মেলার আগাম আমেজ কিছুটা স্তিমিত বলেই মনে করছেন অনেকেই।
তবে আয়োজন ঘিরে শেষ মুহূর্তে জমে উঠবে পুরনো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা- এমন প্রত্যাশা সকলের।
তাওফিক/