ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

রংপুরে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্য ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
রংপুরে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্য ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাস। ছবি: খবরের কাগজ

দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক এসআই ও দুই কনস্টেবলকে ক্লোজড এবং ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টায় এই তথ্য জানিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বদরগঞ্জ থানায় সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় থানার এএসআই রবিউল আলম (এবি-৩৮১), কনস্টেবল আলামিন হোসেন (৯৯৪) ও মজিবুর রহমানকে (৬৩০) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দ্বায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে থানা ক্যাম্পাসে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যকার হট্রগোলের ছবি তুলতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধর করেন। পরে চ্যাংদোলা করে ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধর করে। ছিৎড়ে ফেলা হয় গায়ে থাকা শার্ট। এরপর তাকে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর অভিযুক্তদের সঙ্গে মিমাংসা করে দেওয়ার নাটক করেন ওসি। পরে সহকর্মীরা সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।

মারধরের শিকার সাংবাদিক এম এ সালাম জানান, থানার প্রধান ফটকের সামনে শহিদ মেনাজ সংঘ পাঠাগারে বসে আমি নিউজ লিখতেছিলাম। এসময় বাইরে শব্দ শুনি গন্ডগোলের। ক্লাব থেকে থেকে বের হয়ে দেখি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে ২ জন পুলিশ এবং বাইকে দুইজন পুলিশ নিজেদের মধ্যে উচ্চবাচ্চ এবং হট্রগলো করছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই আমি আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকি। এসময় মোটরসাইকেলে থাকা এএসআই রবিউল আমার মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ কেড়ে নেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে বাইকে থাকা দুইজনের সঙ্গে পিআপ ভ্যানে থাকা দুইজন নেমে আমাকে ব্যাপক মারধর করে। এসময় সেখানে বহু মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা চারজন মিলে আমাকে চ্যাংদোলা করে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে ওসির সামনে ফেলে দিয়ে লাথি মারে।

সালাম জানান, আমি রোজা থাকায় শরীর খুব দুর্বল ছিল। আমি পুলিশকে অনুরোধ করি আমার ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাকে তার রুমে নিয়ে যান এবং প্রায় ৪ ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখেন। আমার পরণের ছিন্নভিন্ন শার্ট আমাকে না নিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনে এনে আমাকে পড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমার কিছু সহকর্মী সেখানে আসলে ওসি সাহেব অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিয়ে মিমাংসার করে দেওয়ার কথা বলেন। এসময় আমি ওসি সাহেবকে বলি আমি আপনাকে একটা চড় মারি এবং পরে আপনার কাছে মাফ চাই তাহলেই কী সব হয়ে যাবে। এরপর সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার জানান, তার পায়ে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পায়ের জন্য একটা এক্সরে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।

বদরগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। ‘

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান জানান, ‘এটি জঘন্যতম অপরাধ করেছে পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে হট্টগোলে জড়াবে। আর ছবি তুললে তাদের অসুবিধা হবে। এটা মেনে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। এ ব্যপারে তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে কখনই কোনো পুলিশ সদস্য এ ধরনের অপরাধে না জড়ান। 

রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল জানান, পুলিশ সাংবাদিক সালামকে পিটিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন এবং এটা খবুই এলার্মিং বিষয়। যা সাংবাদিক সমাজ কখনই কোনোভাবে বরদাশত করবে না। শুধু ক্লোজড করেই যদি পুলিশ মনে করেন ঘটনার সমাধান হয়েছে। সেটা বুমেড়াং হবে। আমরা দেখতে চাই এ ঘটনার যথাযথ আইনানুগ এ্যাকশন। তিনি জানান, পুরো ঘটনার সময় থানার ওসি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয দিয়েছেন। তার ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।

সেলিম সরকার/মাহফুজ 

 

স্ত্রীকে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে গণপিটুনি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
স্ত্রীকে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে গণপিটুনি
স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী ফরিদুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গভীর রাতে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী ফরিদুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদুলকে উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের ডোংরা গ্রামের কালু ফকির বাড়ি থেকে হাতেনাতে ধরা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে বেধড়ক মারধর করে। 

খবর পেয়ে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর অবস্থায় ফরিদুলকে হেফাজতে নেয়।

এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে। পরে বাঁশখালী থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফরিদুলকে কড়ানিরাপত্তায় উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনু মিয়া।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল ভোরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন ফরিদুল আলম। বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার বলেন, ‘এলাকায় ফরিদুল আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে বাড়িতে গিয়ে আটক করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছি।’

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’
পূজা-অর্চনায় ব্যস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায়। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। গত সোমবার পয়লা বৈশাখের দিন শুরু হয় মেলা। তিন দিনব্যাপী এ মেলা আজ শেষ হবে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ছিল মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবছরের মতো এবারও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায় এ বউমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা। এ মেলাকে অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটগাছকে সিদ্ধেশরী দেবী বলে থাকেন।

মঙ্গলবার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বটগাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সাজে দাঁড়িয়ে আছেন কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটগাছের দিকে। দুপুরে দিকে বাড়তে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি। 

স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, তাদের কাছে শত শত বছরের বটগাছটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। বটগাছটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামেও পরিচিতি পায়। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ মেলার জন্য। মেলায় দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে, সারা বছর সংসারে যেন সুখ-শান্তি থাকে এ কামনায় পূজার আয়োজন করা হয়। 

মেলায় কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী-সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনা সফল হয়। সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা করতে এসেছি।’

বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন, তবে সংখ্যায় কম। পূজা-অর্চনা ছাড়াও বউমেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রঙের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে মিঠাইয়ের দোকান বসে। লৌহ, কাঠ ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায় মেলায়।

পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করে থাকেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। বউমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য নিলোৎপল রায় জানান, প্রতিবছর বর্ষবরণ উৎসবে সিদ্ধেশ্বরী কালীপূজার আয়োজন করা হয়। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মেলার আয়োজন করেন। পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘বউমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নিয়ে থাকেন।’

রাজশাহীতে চাঞ্চল্যকর সুরুজ হত্যায় বোনসহ ২ ভাগ্নে গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৩ এএম
রাজশাহীতে চাঞ্চল্যকর সুরুজ হত্যায় বোনসহ ২ ভাগ্নে গ্রেপ্তার
ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহী নগরীর বিলশিমলা এলাকায় চাঞ্চল্যকর মো. সুরুজ (৪৫) হত্যা মামলায় তার বোনসহ দুই ভাগ্নেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব এ তথ্য জানায়। 

এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব রাজশাহীর একটি দল।

নিহত সুরুজ নগরের বিলশিমলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- সুরুজের বোন বহরমপুর ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম (৫০), তার ছেলে মো. হিরা (৪০) ও আশরাফ আলী (৪৫)। তাদের বাবার নাম মৃত আনিচুর রহমান।

র‌্যাব জানায়, গত ১১ এপ্রিল জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নগরের সিটি বাইপাস এলাকায় আসামিরা সুরুজকে মারধর করেন। হিরা ইট দিয়ে তার মামা সুরুজের মাথায় আঘাত করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজ মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত সুরুজের ছেলে নগরের রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিলেন। র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।

মেহেদী/

শরীয়তপুরে ৪ দশক ধরে আধিপত্যের লড়াই

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম
শরীয়তপুরে ৪ দশক ধরে আধিপত্যের লড়াই
শরীয়তপুর

সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে বালতির পর বালতিভর্তি ককটেল ফাটিয়ে আলোচনায় আসে এই এলাকা। কিছু হলেই এখানে বিস্ফোরণ ঘটে। আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে ২২ বছর ধরে। এই সময়ে ককটেল বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। অঙ্গহানি হয়েছে শতাধিক মানুষের।  

রাজনৈতিক প্রভাবে এতদিন বিরোধ থামানো যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের আটক এবং বোমা উদ্ধারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গত ৫ এপ্রিল দুই পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়। একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন একে অপরের দিকে হাতবোমা ছুড়ছে। দেখে মনে হয়, যুদ্ধ চলছে।  

এই সংঘর্ষ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিলাসপুরে আধিপত্যের লড়াই চলছে ৪১ বছর ধরে। কেবল বোমার আঘাতে প্রাণ গেছে আটজনের।  

গত বছরের ২৭ এপ্রিল বোমার আঘাতে নিহত হয় ১৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থী সৈকত মুন্সী। তার মা শাহনাজ আক্তার প্রিয় সন্তান হারিয়ে এখনো শোকে পাগলপ্রায়। সৈকতের বাড়িতেও এরপর বোমা হামলা হয়। বিচার না পেয়ে হতাশ পরিবার। একই বছর ২৭ মার্চ বোমার আঘাতে মারা যায় ২৫ বছর বয়সী যুবক সজীব।  

সজীবের মা জানান, ছেলের পেট থেকে ৩৭টি তারকাটা বের করা হয়। আরও ১১টি রয়ে যায় শরীরে। সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যায় সে।  

সজীবের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘দুই বছরের সন্তান রেখে সজীব মারা যান। সবাই বাবাকে নিয়ে ঈদ করে, আমার সন্তান করেছে বাবাহীন ঈদ। স্বামী ছাড়া ঈদ কতটা কষ্টের, আমি জানি। বিচার এখনো পাইনি।’  

গত ১০ বছরে বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  
বিরোধ শুরু ১৯৮৪ সালে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। মেছের মাস্টার ও আনোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধে শুরু হয় বোমাবাজি। ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে।  

এরপর নেতৃত্বে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী। তার প্রতিপক্ষ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জলিল মাদবর। এই দুপক্ষের মধ্যে গত ২২ বছরে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এলাকার ব্যবসা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে।  

স্থানীয়রা জানান, এক পক্ষকে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। অন্যপক্ষকে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন অপু। তারা কখনো সমঝোতার চেষ্টা করেননি।  

কেন নিজেরা নিজেদের মারছেন? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে দুই নাম-বোকা কুদ্দুস’ ও ‘বোমা জলিল’।  

কুদ্দুস বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ২০০১ সালে প্রথম বোমাবাজি শুরু করেন। চরের জমি দখল, নদীপথ, বালু ও মাছ শিকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।  

জলিল মাদবর ছিলেন কুদ্দুসের প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনিও বোমাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।  কুদ্দুস সরদার বলেন, ‘ক্ষমতা আর আদম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারি হয়। কেউ দলে যেতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়।’  

মন্নান শিকদার, আক্কাস সিকদার ও রোজীনা বেগম বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। মারামারি চাই না। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারি না।’  অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে বলছে, ‘সুযোগ পেলে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাব।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে নৌপথে আসে বোমা তৈরির উপকরণ। শত শত বোমা তৈরি হয় চরে কিংবা নৌকায় বসে।  প্রতি ১০০টি বোমা বানিয়ে পাওয়া যায় ৪০ হাজার টাকা। একটি বোমা বানাতে সময় লাগে ৪-৫ মিনিট।  
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল আখন্দ জানান, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে এতদিন সংঘর্ষ থামানো যায়নি। এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। পরে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।’  

পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারীর বিরুদ্ধে ৪৭টি ও জলিল মাদবরের বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তারা দুজনই কারাগারে আছেন।

আগুন লাগার খবরে সন্তানসহ ট্রেন থেকে লাফ দিলেন দম্পতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৭ এএম
আগুন লাগার খবরে সন্তানসহ ট্রেন থেকে লাফ দিলেন দম্পতি
ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে ৮ মাসের শিশুকে নিয়ে এক দম্পতি চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে গেলেও শিশুটি মারা গেছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের লোহাগাড়া উপজেলাধীন সদর ইউনিয়নের রশিদার পাড়ার পশ্চিমে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত শিশুটির নাম হামদান। এ ঘটনায় শিশুটির পিতা আবদুর রাজ্জাক (২৫) ও মাতা লিজা আকতার (২০) গুরুতর আহত হয়েছেন। 

আবদুর রাজ্জাক কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের সোলতান আহমদের ছেলে।

জানা গেছে, আবদুর রাজ্জাক ১২ দিন আগে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের গুনাগরী গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার জন্য সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ট্রেনটি লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রশিদার পাড়া এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ইঞ্জিনের পিছনের একটি বগিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বগিটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। যার ফলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে শিশুসহ লাফ দেন রাজ্জাক-লিজা দম্পতি। পরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রেললাইনের পাশের একটি চায়ের দোকানে বসে আমরা বেশ কয়েকজন গল্প করছিলাম। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ শুনতে পাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা দৌড়ে গিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে তাদেরকে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়াও  চিকিৎসক শিশুটির মা-বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠান।

লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার দিদার হোসেন বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ট্রেনের একটি বগিতে আগুন লেগে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় বগিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, কক্সবাজারগামী ট্রেন থেকে এক দম্পতি শিশুসহ লাফ দিয়েছে। এ ঘটনায় ওই দম্পতি গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাদের শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

আরিফুল/মেহেদী/