
অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, রাস্তার ওপরে নির্মাণসামগ্রী রাখাসহ নানা কারণে কুমিল্লার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ফলে কুমিল্লা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিনের যানজটে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর।
বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে মনোহরপুর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এর চাপ পড়েছে অন্য সড়কগুলোতে। এতে নগরীর বিভিন্ন সড়কের অন্তত ২০টি স্থানে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চৈত্রের দুপুরে যানজট ঠেলে ঘেমে-নেয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নষ্ট করতে হচ্ছে কর্মঘণ্টা। আর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, নগরীর সড়কগুলোতে অন্তত ১০ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল জনবল নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সামলাতে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
গেল কয়েক দিন কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানজটের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরের কান্দিরপাড় থেকে পুলিশলাইন্স সড়ক, টমসন ব্রিজ সড়ক ও রানীর বাজার সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। এ ছাড়াও নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, মোগলটুলি, ফৌজদারি মোড়, বাদুড়তলা, সালাউদ্দিন মোড়, শাসনগাছা, বাদশা মিয়ার বাজার, রেসকোর্সসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যানজটের কারণে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল কয়েক মাসে কুমিল্লা শহরে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইকের সংখ্যা অন্তত পাঁচগুণ বেড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো এসব পরিবহরনর কারণেই বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব এলাকায়ও যানজট নিত্য চিত্র। তার ওপর হঠাৎ করে কান্দিরপাড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর চাপও পড়েছে অন্যান্য সড়কে। সেই সঙ্গে সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং, যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রেখে সড়ক দখল, ফুটপাত দখল করে হকারদের বাণিজ্যের কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় এ রকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লার শুভপুর এলাকার বাসিন্দা রাফি শামস্ বলেন, কুমিল্লার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। সড়কগুলোতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তিতে এক প্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
কান্দিরপাড়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আড়াইওড়া এলাকার বাসিন্দা হাজি কবির হোসেন বলেন, মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে কান্দিরপাড় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করা হলেও এর কোনো সুফল মিলছে না। হকাররা সড়কটি দখলে নিয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হলেও হকারদের কারণে সাধারণ পথচারীরা হাঁটাচলা করতে পারছে না।
কান্দিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের সড়কে মালামাল রেখে ব্যবসা করতে বসেছেন মো. হারুনুর রশিদ নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দখল করেই ব্যবসা করতে হয়। আমার তো পুঁজি নেই যে দোকান ভাড়া করে ব্যবসা করব। অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করি। রাস্তা-ফুটপাত দখল করলে যানজট লাগে তা জানি, কিন্তু কী করব? আর তো কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে কুমিল্লার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী সমিতির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কান্দিরপাড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে অন্য সড়কগুলোতে কিছুটা চাপ বেড়েছে। প্রতিবছরই ঈদ এলে এই এলাকাটিতে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সে ধারাবাকিতায় এবারও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
চাহিদার তুলনায় ট্রাফিক পুলিশের জনবল সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আমাদের ৫২ জন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কাজ করছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। ফলে প্রত্যেককেই বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে। তার পরও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি যানজট সমস্যা কিছুটা কমাতে পারব।
নগরীর যানজট নিরসন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, শহরের যানজট নিরসনে আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে কুমিল্লা শহরে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আগে যেখানে পুরো শহরে ৫/৬ হাজার রিকশা, অটোরিকশা ছিল- এখন তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যার ফলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কষ্টসাধ্য। তার পরও ঈদ ঘিরে যানজট নিরসনে অতিরিক্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা রয়েছে।