
সর্বোচ্চ নয়, সর্বনিম্ন দরদাতাকে খেয়াঘাট ইজারা দিয়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম মশিউর রহমান। এ ঘটনায় তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। নির্ধারিত মূল্যের তিন গুণের বেশি টাকায় খেয়াঘাট ইজারা না দেওয়ায় স্থানীয়রা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
এদিকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা না পাওয়ায় নানা অভিযোগ তুলে ধরে জুয়েল মৃর্ধা নামে বিএনপির এক নেতা ইউএনওর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার (২২ মার্চ০ দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবের মাইনুল হাসান মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইজারাবঞ্চিত জুয়েল মৃর্ধা তখন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১২ ফেব্রুয়ারি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওতাধীন ২৩টি খেয়াঘাটের ইজারা দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্টিমারঘাট রাস্তার মাথা হতে মিটুয়া খেয়াঘাট ইজারা গ্রহণের উপজেলা পরিষদের উন্মুক্ত ডাকে চারজন অংশগ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, ‘ঘাটের নির্ধারিত সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ৪ লাখ ৮ হাজার ৯০০ টাকার অনুকূলে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা রেট জমা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য ইজারা আমাকে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘাটটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
তিন গুণের বেশি টাকায় ইজারা দেওয়া হলে তার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপরে পড়ত কি না, জানতে চাইলে জুয়েল মৃর্ধা বলেন, ‘সর্বোচ্চ দাতা হিসেবে আমাকে ইজারা দিলেও তার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপরে পড়ত না। অমি এখান থেকে ব্যবসা কম করতাম।’
স্থানীয়রা বলছেন, ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের ইজারা তিন গুণেরও বেশিতে দেওয়া হলে সেই চাপ সাধারণ মানুষের ওপরে পড়ত। আর তা নিয়ে প্রতিদিনই ইজারাদারদের সঙ্গে বিবাদ হতো। যার উদাহরণ বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপলোর সংযোগ মীরগঞ্জ খেয়াঘাট।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, ‘যদিও সরকারি নীতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পেয়ে থাকেন। তবে যে কারণেই হোক না কেন, তিন গুণ বেশি মূল্য খেয়াঘাট ইজারা না দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসন প্রশংসার দাবি রাখে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কিংবা ব্যক্তি কোন্দলের রেষারেষিতে কয়েক গুণ বেশি টাকায় প্রভাবশালীরা খেয়াঘাট, লঞ্চঘাট, হাটবাজার ইজারা নেন। পরে তাদের মূলধন তুলতে সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা মানুষের কাছ থেকে নিয়ে হয়রানি করা হয়।’
মেহেন্দীগঞ্জের বন্দর বাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন স্বপন বলেন, ‘তারা নিজেদের মধ্যে রেষারেষির কারণে তিন গুণ বেশি মূল্যে ইজারা নেবে। আর তার খড়্গ নামবে মানুষের ওপর। ১ টাকার টোলের জায়গায় ১০ টাকা আদায় করবে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে ইজারার দেওয়াই বাস্তবসম্মত বলে আমরা মনে করি। এ জন্য ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এম এম মশিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতাই এই ডাক পাওয়ার কথা। কিন্তু দরপত্রে অংশগ্রহণকারী চারজনের মধ্যে তিনজনেই বিধি অনুসরণ করে বৈধ্য কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও তারা যোগ্যতা হারিয়েছেন। ফলে সর্বনিম্ন দরদাতাই ইজারা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।