সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক) হাসপাতালে রোগীর এক স্বজনের বিরুদ্ধে ডা. তনয় বর্ধন নামে এক চিকিৎসককে মালাউনের বাচ্চা ও আবাদি বলে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
রবিবার ( ২৭ এপ্রিল) হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনের হাতাহাতির ঘটনার একটি ভিডিও রবিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রোগীর আত্মীয় ও বন্ধুকে চিকিৎসকের লাথি মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে। ভিডিওতে দেখা যায় কর্তব্যরত চিকিৎসককে কিছু একটা বলায়, রোগীর ভাইকে মারতে তেড়ে যান চিকিৎসক। ভিডিওতে এক যুবককে লাথি মারতেও দেখা যায়।
তবে সেই চিকিৎসকের দাবি মালাউনের বাচ্চা ও আবাদি বলে গালি দেওয়াসহ অশোভন আচরণ করায় মেজাজ হারান তিনি।
জানা গেছে, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসেন জুবায়ের আহমদ নামে এক ব্যক্তি। ঘটনার সময় রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটস-এর ব্যথা হচ্ছিল। তখন পাশের ওয়ার্ডে এক রোগী মারা গেলে ডা. তনয় বর্ধন সেখানে দ্রুত যাচ্ছিলেন। ওই সময় রোগীর বিছানায় শুয়ে পায়ের ওপর পা তুলে তাকে ‘এই স্যার’ বলে ডাক দিচ্ছিলেন রোগীর স্বজন। তখন চিকিৎসক তার ডাক দেওয়ার বাচন ও শারীরিক ভঙ্গি ভালো না লাগার কথা ওই রোগীর স্বজনদের জানান। এই কথা শুনে চিকিৎসককে মালাউন, নন সিলেটি ও আবাদি বলায় নিজের মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ডা. তনয় বর্ধন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রোগী জোবেল আহমেদ ও তার বন্ধু জুবায়ের বলেন, ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস-এর ব্যথা ওঠায় চিকিৎসককে ডাক দিলে তিনি আসছেন বলে ইমার্জেন্সি অন্য একটি রোগী দেখতে আরেকটি ওয়ার্ডে চলে যান। পরবর্তীতে চিকিৎসক আসার পর আবার যখন আমি ডাক দেই তিনি বলেন, এইভাবে ডাকছেন কেন। আমি বললাম স্যার বলেই তো ডাকলাম, পরবর্তীতে চিকিৎসক ক্ষেপে গিয়ে থাপ্পড় ও লাথি দেন।’
এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত আরেক চিকিৎসক ডা. রুবেল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীর স্বজনদের ডা. তনয়কে ডাকার ভঙ্গি ভালো ছিল না। আর পরবর্তীতে যখন ডা. তনয় ফিরে আসেন তখন তাকে গালাগালি করলে তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এবং এই ঘটনা ঘটে।’
এ ব্যাপারে ডা. তনয় বর্ধন বলেন, ‘পাশের ওয়ার্ডে একজন রোগী মারা যান। তাই আমি দ্রুত সেখানে যাচ্ছিলাম। তখন রোগীর বিছানায় শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে তাকে ‘এই স্যার, এই স্যার’ বলে ডাক দিচ্ছিলেন রোগীর এক স্বজন। পরে আমি পাশের ওয়ার্ড থেকে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, সে কেন এভাবে আমাকে ডাকল। আমার কথা শুনে তিনি আমাকে স্থানীয় ক্ষমতার কথা বলেন এবং আমাকে মালাউনের বাচ্চা, নন সিলেটি, আবাদি বলায় নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলি। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তবে আমি পরে বুঝতে পারি এভাবে মেজাজ হারানো আমার ঠিক হয়নি। আমি এইজন্য অনুতপ্ত। পরবর্তীতে রোগীর বাবার কাছে গিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে বললে তারা বিষয়টা বুঝতে পারেন। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।’
এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা ৭ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দিবেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সুমন/