
ময়মনসিংহে শপিংমল ও বিপণি-বিতানগুলোতে ঈদের কেনাকাটা জমজমাট হয়ে উঠেছে। ফুটপাতেও ক্রেতাদের কমতি নেই। ফুটপাতে পোশাকের দামে স্বস্তি থাকলেও শপিংমল ও বিপণি-বিতানগুলোতে গত বছরের চেয়ে এবার পোশাকের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এতে উচ্চবিত্তদের কোনো সমস্যা না হলেও বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন। তবুও বাধ্য হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী পছন্দের পোশাক কিনতে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছুটে বেড়াচ্ছেন। দামের সঙ্গে অনেকের সামর্থ্যের হিসাব না মেলায় ফুটপাতকেই ভরসা মনে করছেন।
বিভাগীয় এই শহরের হৃৎপিণ্ড গাঙ্গিনারপাড় এলাকা। এক সময় এই এলাকাতেই গড়ে উঠেছিল শপিংমল। ফুটপাতেও দেদারসে হতো বেচাকেনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে বেড়েছে জনসংখ্যার চাপ। বিভাগীয় শহরে উন্নীত হওয়ায় মানুষ বাসাবাড়ির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষের আনাগোনা বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে যানবাহনের সংখ্যাও। এই সড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শপিংমল, বিপণি-বিতান। কিন্তু সরু সড়কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সারা বছরই লেগে থাকে যানজট। ঈদ এলে তা বাড়ে কয়েকগুণ বেশি। প্রশাসন নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ভোগান্তি শেষ হয় না।
গাঙ্গিনারপাড়ে একচেটিয়া ব্যবসাকে মাথায় রেখে ক্রেতা টানতে সময়ের ব্যবধানে আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে বহু শপিংমল, বিপণি-বিতান। সারা বছর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ক্রেতা ভিড়ছে। ঈদ এলে এসব শপিংমল, বিপণি-বিতানে মানুষের ঢল নামে। তবে এসব এলাকাতেও সমস্যা একটাই, তা হলো যানজট। সারা বছর বিভিন্ন যানবাহনের চাকা থেমে থেমে চললেও ঈদের আগে ক্রেতাদের চাপে যানজট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এবারও এমন রূপ দেখা যাচ্ছে। যদিও পুলিশ বলছে, ঈদ কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শপিংমল আর বিপণি-বিতানগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। অনেক দোকানি বেচাকেনার চাপে দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। দোকানে বিক্রেতা পোশাক বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকজন ক্রেতা চলে আসছেন। এক রেটের দোকানগুলোতে বিক্রেতাদের তেমন কষ্ট না হলেও বিভিন্ন দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দামাদামিতে দোকান সরগরম। গত বছরের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় মনোক্ষুণ্ণ অনেক ক্রেতা। তবুও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে কিনছেন পছন্দের পোশাক।
একই অবস্থা স্টেশন রোড, সিকে ঘোষ রোড, চরপাড়া, রামবাবু রোড ও নতুন বাজার এলাকায়। তবে স্টেশন রোড, গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা নেই। ন্যায্য দামের মধ্যে পছন্দের পোশাক পাওয়া যাওয়ায় ভিড় মাত্রা অতিক্রম করেছে। একই অবস্থা বাসাবাড়ি ও হকার্স মার্কেটে। বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণি-বিতানের চেয়ে এই দুই মার্কেটে পোশাকের দাম অনেকটাই কম। ফলে একশ্রেণির মানুষের পছন্দ এই মার্কেটগুলো। ক্রেতাদের ঢল নামায় দোকানিরা চরম ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
গাঙ্গিনারপাড়ে ফুটপাত থেকে পছন্দের পোশাক কিনছিলেন জাহানারা খাতুন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, 'আশপাশে সুন্দর সুন্দর মার্কেট। মন চাই এইনোযায়্যা পছন্দমতো জামা-কাপড় কিনি। তবুও যাই না। গেলেই দোহানদার ট্যাহা (টাকা) বেশি কয়। এত ট্যাহা দিয়্যা কাপড় কনবার সাধ্য নাই। এর লাইগ্যা পছন্দের কাপড় কিনবার ফুটপাতে আইছি। ফুটপাতই ভালা।'
বাড়িপ্লাজা শপিংমল থেকে পরিবারের জন্য কেনাকাটা শেষে চলে যাচ্ছিলেন আকরাম হোসেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, 'গত বছরের চেয়ে বেশিরভাগ পোশাকের দাম বেশি। তবুও পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনেছি।'
গাঙ্গিনারপাড় ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করেন নাজিম উদ্দিন বলেন, 'আমরা যে পোশাকগুলো বিক্রি করছি, একই পেশাক অনেক দোকানে তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে দামও বেশি রাখা হচ্ছে। আমরা ন্যায্য দামে পোশাক বিক্রি করায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন, পছন্দের পোশাক কিনে বাড়ি ফিরছেন।'
বাড়িপ্লাজা শপিংমলের বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'এবার পাইকারিভাবে পোশাকের দাম বেড়েছে। আমরা আগের চেয়ে বেশি দামে কিনে এনেছি। ফলে ক্রেতাপর্যায়ে দাম বেড়েছে।'
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, 'শহরের সড়কগুলো খুবই পুরাতন। সড়ক ঘেঁষে বহু বছর ধরে অসংখ্য ভবন নির্মাণ হয়েছে। তবে প্রশস্ত হয়নি সড়ক। বিগত সময়ে সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যানজট প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ঈদর কয়েক দিন আগে থেকে যানজটের কারণে ভোগান্তি আরও বাড়ে। তবে এবার সবার প্রচেষ্টায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করছি।'
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, 'ইতোমধ্যে ফুটপাতসহ বিপণি-বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। এ সুযোগে চোর ও ছিনতাইকারীর উৎপাত বাড়তে পারে। সে জন্য পুলিশ সদস্যরা শহরে সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে।'
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, 'সরু সড়কে সারা বছর প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। ঈদ এলে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ঈদে এবার যানজট কমানোর লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অটোরিকশা আটকে দেওয়া হচ্ছে। চুরি-ছিনতাই বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বড় শপিংমলের সামনে পুলিশ সারাক্ষণ সতর্ক রয়েছে। তবে কেনাকাটা করতে আসা লোকজনকেও সতর্ক থাকতে হবে।'
কামরুজ্জামান/জোবাইদা/