
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতায় খান বাহাদুর আহ্ছান উল্লাহ (রহ.)-এর রওজা শরিফে একসঙ্গে ইফতার করেন প্রায় ছয় হাজার মানুষ। এ ছাড়া আশপাশের এলাকায় আরও চার হাজার মানুষের ইফতারি পাঠানো হয় রওজা শরিফ থেকে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ইফতারি প্রস্তুতের বিশাল কর্মযজ্ঞ। কেউ শিঙাড়া ভাজছেন, কেউ ভাজছেন পেঁয়াজু, কেউ ব্যস্ত প্লেট সাজাতে। শিঙাড়া ভাজতে ব্যস্ত মোক্তার হোসেন জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে নলতা রওজা শরিফের ইফতার আয়োজনে নিয়োজিত রয়েছেন। তার মতোই ২২-২৫ জন ফজরের নামাজের পরপরই ইফতারি তৈরির কাজ শুরু করেন।
প্রায় ছয় হাজার মানুষের ইফতারি তৈরিতে সময় লেগে যায় আসরের নামাজ পর্যন্ত। তারপর শুরু হয় ইফতারি সাজানোর কাজ। দিন গড়িয়ে ইফতারের সময় যতই ঘনিয়ে আসে, ততই ভরতে থাকে ইফতারের জন্য প্যান্ডেল খাটানো বিশাল মাঠ। এই মাঠে বসেই ইফতারে অংশ নেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ।
নলতা রওজা শরিফের ঐতিহ্যবাহী ইফতারে অংশ নিতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিষখালী থেকে গাড়িভর্তি করে এসেছিলেন অনেকে। এদের মধ্যে মেহেদী হাসান বলেন, ‘খান বাহাদুর আহ্ছান উল্লাহ (রহ.)-এর পাক রওজা শরিফ একটি পবিত্র স্থান হিসেবে সমাদৃত। এখানেই দেশের সবচেয়ে বড় ইফতার মাহফিল বসে। প্রতিবছরের মতো এবারও ইফতার করতে নলতায় এসেছি।’
নলতা রওজা শরিফ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫০ সাল থেকে প্রতিবছর রমজানে রওজা চত্বরে বিশাল ছাউনি তৈরি করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন হজরত শাহ্ ছুফী খান বাহাদুর আহ্ছান উল্লাহ (রহ.)। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক ও সমাজহিতৈষী। তার মৃত্যুর পরও এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।
রোজাদারদের জন্য এখানে প্রতিদিন ৬০০ কেজি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ফিরনি। সেদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। এ ছাড়া ছোলা ভুনা, কলা, খেজুর, শিঙাড়া ও চিড়ার ব্যবস্থা থাকে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর রমজানে ইফতার, তারাবিহ ও ইতিকাফ উপলক্ষে নলতা রওজা শরিফে ৮ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বাঁশ-খুঁটি দিয়ে টিনের ছাউনি তৈরি করা হয়। দৈনিক ইফতারিতে খরচ হয় গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা। দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়ছে।
তারা বলেন, আসরের নামাজের পরপরই ইফতারি দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২০০ জন যুবক প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করে যাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবক রাকিব হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে খুবই ভালো লাগে। আমরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকি। একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ইফতার করেন। আমাদের সৌভাগ্য যে এতগুলো রোজাদারের খেদমত করতে পারছি।’
এ ব্যাপারে নলতা কেদ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, নলতা পাক রওজা শরিফে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার মুসল্লি রওজা শরিফ প্রাঙ্গণে একই ছাউনির নিচে বসে একত্রে ইফতার করেন। আর বাকি ৪ হাজার মানুষের ইফতারি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মিশন ও বাড়িতে বাড়িতে পাঠানো হয়।